অমিত কুমার দেব, কোচবিহার
কোচবিহার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বাংলো থেকে উদ্ধার হয়েছে তাঁরই দেহরক্ষীর গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ। বুধবার রাতে কোচবিহার রেলঘুমটি সংলগ্ন এলাকায় মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বাংলো থেকে এই মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় ছড়িয়ে পড়ে চাঞ্চল্য। মৃতের নাম শ্যামসুন্দর নার্জিনারি, তাঁর বয়স ৪১।
সার্ভিস রিভলভার ব্যবহার করে নিজের বাম কানের ওপরের অংশে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান পুলিশের। কিন্তু আত্মহত্যার তত্ত্ব মানতে নারাজ দেহরক্ষীর পরিবার। মৃত্যুর যথাযথ তদন্ত এবং ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ভিডিওগ্রাফি করে দেহের ময়নাতদন্তের দাবি জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। বৃহস্পতিবার এই মর্মে দাবি জানিয়ে কোচবিহার কোতোয়ালি থানায় যান তাঁরা।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বাংলোর এক কর্মী রাজেশ মাহাতো গুলির আওয়াজ শুনতে পান। পাশের ঘর থেকে আসে আওয়াজ। এই ঘরেই বিশ্রাম নিচ্ছিলেন শ্যামসুন্দর নার্জিনারি। গুলির আওয়াজ শুনতে পেয়েই মাহাতো অন্য কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ছুটে যান। তাঁরা দেখতে পান বিছানায় পড়ে আছেন শ্যাম সুন্দর নার্জিনারি, রক্তে ভেসে যাচ্ছে তাঁর গোটা শরীর। তাঁরাই লক্ষ্য করেন মাথায় বুলেটের আঘাত। এরপরই মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে ফোন করে বিষয়টি জানান।
এরপর খবর দেওয়া হয় কোচবিহার কোতোয়ালি থানার পুলিশকে। খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় কোচবিহার কোতোয়ালি থানার পুলিশ। দেহ উদ্ধার করে কোচবিহার এমজেএন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
বৃহস্পতিবার তাঁর মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হবে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যেই মৃত্যুর কারণ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে কোচবিহার কোতোয়ালি থানার পুলিশ।
২০০২ সালে পুলিশের চাকরিতে যোগদান করেন আলিপুরদুয়ার জেলার কামাখ্যাগুড়ি পশ্চিম নারারথলি গ্রামের বাসিন্দা শ্যামসুন্দর নার্জিনারি। দীর্ঘ প্রায় ১২বছর যাবৎ কোচবিহার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দেহরক্ষীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। চাকরি সূত্রে স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে নিয়ে কোচবিহার স্টেশন মোড় সংলগ্ন বিবেকানন্দ স্ট্রিটে সরকারি আবাসনে বসবাস করছিলেন তিনি।
শ্যামসুন্দর নার্জিনারির দাদা নীরেন নার্জিনারি সহ তাঁর পরিবারের অন্যান্যরা বৃহস্পতিবার দ্বারস্থ হন কোচবিহার কোতোয়ালি থানার। নীরেন নার্জিনারি সাংবাদিকদের জানান, মৃতদেহ দেখে কোনোভাবেই মনে হচ্ছে না এটি আত্মহত্যার ঘটনা। তাঁদের সন্দেহ রয়েছে। ভাই কখনই আত্মহত্যা করতে পারে না, বলেন তিনি।
তার অভিযোগ, মৃত শ্যামসুন্দর নার্জিনারি যে মোবাইলটি ব্যবহার করতেন সেটি উদ্ধার করা যায়নি। অথচ এই মোবাইলে কল করলে অনবরত তাতে রিং হয়ে চলেছে। তাই এই মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ বাড়ছে তাদের। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ভিডিওগ্রাফি করে শ্যামসুন্দর নার্জিনারির মৃতদেহের ময়না তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
Comments :0