কারখানার শ্রমিকরা জানাচ্ছেন, এই কারখানায় আইএনটিটিইউসি’র ২টি ইউনিয়ন রয়েছে। একটির সভাপতি মদন মিত্র, এবং অপর ইউনিয়নটি পরিচালনা করেন ৮০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর আনওয়ার খান। তাঁরা কারখানা চালু রাখার ক্ষেত্রে কোনও উদ্যোগ নেননি।
শ্রমিকদের বক্তব্য, কারখানায় ১২২ জন স্থায়ী শ্রমিক ছিলেন। নোটিশ দিয়ে শ্রমিকদের ভিআরএস দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে শ্রমিকরা কারখানা চালু রাখার দাবি রাখেন কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে। ম্যানেজমেন্টের তরফে স্পষ্ট বলা হয়, ভিআরএসের মাধ্যমে নির্দিষ্ট করা অর্থ নিলে নাও, নইলে কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে কিছুই পাওয়া যাবে না। ব্রিটানিয়া কারখানার পাশেই রয়েছে স্টোন ইন্ডিয়া কারখানা। রেলের যন্ত্রাংশ তৈরি হত সেখানে। অভাবনীয় ভাবে সেই কারখানাও বন্ধ হয়েছে, এবং সেই কারখানার শ্রমিকরা এখনও পিএফ ও গ্রাচ্যুইটির টাকা পাননি। ব্রিটানিয়া কর্তৃপক্ষ সেই কারখানার দিকে ইঙ্গিত করেই বলেন, বন্ধ হয়ে গেলে কিছু পাবে না।
কোম্পানির তরফে ১৮ জুন ভিআরএসে আবেদনের শেষদিন ধার্য করা হয়েছিল। আতঙ্কিত শ্রমিকরা ১৬ জুনের মধ্যেই ভিআরএসে আবেদন করার কাজ শেষ করেন। সঙ্গে সঙ্গেই ১২২ জনের আবেদন গৃহীত হয়েছে। যদিও অস্থায়ী শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টির এখনও মীমাংসা হয়নি।
শ্রমিকদের বক্তব্য, বাজারে ব্রিটানিয়া গোষ্ঠীর বিস্কুটের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু বাজারের চাহিদা মেটাতে নিজেদের পরিকাঠামোর উন্নয়ন না করেই বাইরে থেকে বিস্কুট আউটসোর্স করত ব্রিটানিয়া। ২০১৮ সালে সংস্থার চেয়ারপার্সন নুসলি ওয়াদিয়া অ্যানুয়াল জেনারেল মিটিংয়ে জানিয়েছিলেন, বাজারের চাহিদা পূরণে পশ্চিমবঙ্গে ৩০০-৩৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে নতুন কারখানা তৈরি করা হবে। প্রসঙ্গত, ব্রিটানিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম বাজার হল পশ্চিমবঙ্গ। এই বাজার থেকে ১ হাজার কোটির কাছে মুনাফা করে সংস্থাটি।
চাহিদা এবং বাজার থাকলেও কেন চালু কারখানা বন্ধ করল সংস্থা?
সদ্য কাজ হারা শ্রমিকদের বক্তব্য, একাধিক কারণ রয়েছে এর পিছনে, প্রথমত, তারাতলা শিল্পাঞ্চলের জমির মালিক কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট। পোর্ট ট্রাস্ট স্বল্প মেয়াদে জমির লিজ দিচ্ছে বর্তমানে। এবং লিজের জন্য টাকার পরিমাণও ক্রমেই বাড়ছে। সেই বিষয়ে সুরাহা দিতে কোনও ভূমিকা নেই রাজ্যের। দ্বিতীয়ত, বিস্কুট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, যেমন দুধ, চিনি, ময়দা ইত্যাদির দাম নিয়ন্ত্রণে রাজ্য ভূমিকা নেয়নি। শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় হল বিদ্যুৎ। রাজ্যে ইউনিট পিছু বিদ্যুতের দাম বহু রাজ্যের থেকে বেশি। তারফলেও এই রাজ্যে নতুন শিল্প স্থাপন দূরে থাক, চালু কারখানা গুটিয়ে দিতে চাইছেন বিনিয়োগকারীরা।
এই শিল্পায়নের পরিপন্থী আবহাওয়ার ফলেই তারাতলা শিল্পাঞ্চলে লাইন দিয়ে বন্ধ হয়েছে স্টোন ইন্ডিয়া, বিকো লরি, খৈতান ফ্যান, বামার লরি, অ্যান্ড্রু ইউলের মত ১৫টি কারখানা। হাতে গোনা কয়েকটি কারখানা এখনও টিমটিম করে জেগে রয়েছে। প্রত্যক্ষ ভাবে কাজ হারিয়েছেন আড়াই হাজারের বেশি শ্রমিক। পরোক্ষ ভাবে কাজ হারার সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি।
অপরদিকে ব্রিটানিয়া কারখানার তরফে স্পষ্ট করে প্রোডাকশন বন্ধের কারণ বলা হয়নি। যদিও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, মুনাফা না হওয়ার কারণেই ঝাঁপ ফেলা হয়েছে কারখানার। কলকাতা বন্দরের থেকে ২০৪৮ সাল অবধি জমিটির লিজ রয়েছে ব্রিটানিয়া কর্তৃপক্ষের হাতে। সেই জমিতে কি হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, বন্দর কর্তৃপক্ষ চাইছে নিজেদের জমিতে কারখানার বদলে গ্যারেজ, গোডাউন কিংবা গাড়ির সার্ভিস সেন্টার গড়ে তুলতে। সেখান থেকে মুনাফা এলেও রাজ্যের মৌলিক উৎপাদন ক্ষেত্রে এর কোনও ভূমিকা থাকার কথা নয়। একইসঙ্গে বিপুল নিয়োগেরও সম্ভাবনা নেই এই জাতীয় ক্ষেত্রে।
এই প্রসঙ্গে সিআইটিইউ নেতা গৌতম রায় বলেছেন, ‘‘সংস্থাগুলির থেকে বিপুল নির্বাচনী বন্ড জোগাড় করলেও কাঁচামালের দাম নিয়ন্ত্রণে কোনও ভূমিকা নেই তৃণমূলের। বন্ধ হচ্ছে একের পর এক কারখানা।’’
Comments :0