Goutam Pal

দুপুরে আদালতের নির্দেশ, সন্ধ্যায় সিবি‌আই জেরা প্রাথমিক পর্ষদের সভাপতিকে

রাজ্য

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ফের নাটকীয় মোড়। দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে বুধবার সন্ধ্যায় নিজাম প্যালেসে হাজিরা দিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল। রাত পর্যন্ত চলছে সিবিআই জেরা। 
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে দ্রুত জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে বলেন গৌতম পালের সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে পর্ষদের ডেপুটি সেক্রেটারি পার্থ কর্মকারকেও। তিনিও নিজাম  প্যালেসে হাজিরা দিয়েছেন। রাত পর্যন্ত চলছে জেরা। 
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পালকে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করবে। পর্ষদের সচিব পার্থ কর্মকারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।  বুধবার এই নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এদিন আদালত মন্তব্য করেছে, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে পর্ষদ সহযোগিতা করছে না। গৌতম পাল তদন্তে সহযোগিতা না করলে তদন্তকারী সংস্থা তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতিতে ওএমআর শিট বিকৃত করার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। বুধবার এই ওএমআর শিট সংক্রান্ত একটি তদন্ত রিপোর্ট সিবিআই আদালতে জমা দিয়েছে। এই রিপোর্ট পেয়ে আদালত সন্তুষ্ট। এদিন আদালত মন্তব্য করেছে, পর্ষদের কাছ থেকে ওএমআর শিটের যে ডিজিটাইজড কপি চাওয়া হয়েছিল তা পর্ষদ দেয়নি। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ টাইপ করা প্রিন্ট কপি তদন্তকারী সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছে। দুর্নীতির তদন্তকে বিভ্রান্ত করতে পর্ষদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রকমের চতুরতার আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেন যে রিপোর্ট দিয়েছে সিবিআই তা গুরুতর। পর্ষদের বর্তমান সভাপতি সহ অন্য আধিকারিকরা নতুন প্রিন্ট করা কপিকে ‘ডিজিটাইজড কপি’ বলে দাবি করেছেন। ফলে তাঁদের জেরা জরুরি। 
প্রসঙ্গত, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি তৃণমূলের বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য এখন জেলে রয়েছেন। তিনি যে সংস্থাকে ওএমআর শিট তৈরি বরাত দিতেন সেই সংস্থাই এখনও ওএমআর শিট তৈরির বরাত পাচ্ছে। মানিক ভট্টাচার্যের সময় এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি ওএমআর শিট তৈরির বরাত পেত। তদন্তে উঠে এসেছে এই কোম্পানি এমনভাবে ওএমআর শিট তৈরি করতো, যেখানে প্রার্থীর নাম এবং রোল নম্বর স্পষ্ট করে বোঝা যেত না। অভিযোগ উঠেছে, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ক্ষেত্রে এই কোম্পানিই ফের ওএমআর শিট তৈরির বরাত পেয়েছে। এদিন আদালত তাঁর নির্দেশে বলেছে, সিবিআই স্বাধীনভাবে তদন্তের কাজ চালাবে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কোনও সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হলে তা তারা করতে পারবে। 
গত দু’দিনে প্রাইমারি টেটে ওএমআর শিটের বরাত পাওয়া সেই এস বসু রায় কোম্পানির আরও দুই  আধিকারিককে গ্রেপ্তার করেছে সিবিআই। ধৃতদের নাম পার্থ সেন ও  কৌশিক মাঝি। ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেট পরীক্ষার মূল্যায়নের বরাত পেয়েছিল এস বসু রায় কোম্পানি। ওএমআর শিট মূল্যায়ন করেছিল এই সংস্থা। মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল এই সংস্থার আধিকারিকদের। সেই সূত্রেই এর বরাত মেলে। টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের নাম সুপারিশ হিসাবে পাঠানোর পরে তার ভিত্তিতেই ‘প্রভাবশালী’ মহলের নির্দেশে বিকৃত করা হত ওএমআর শিট। এস বসু রায় কোম্পানি এই কাজ করতো। একাধিক ওএমআর শিট পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছিল। ঐ সংস্থার ধৃত দুই আধিকারিককে গ্রেপ্তারির পরেই পর্ষদের সচিবকে জেরা রীতিমত তাৎপর্যপূর্ণ। পর্ষদের সঙ্গে যোগসাজশেই চলেছিল ওএমআর শিট বিকৃতির কাজ, মনে করছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাও। এদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর পর্যবেক্ষনে সিবিআইয়ের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেন দ্রুত জেরা করতে হবে। সহযোগিতা না করলে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতিকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের স্বাধীনতাও সিবিআই-কে দিয়েছেন বিচারপতি।
এদিন রাজ্য শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্তের কাজে যুক্ত করার জন্য আর একজন নতুন অফিসারকে দিল্লি থেকে নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। জানা গেছে, স্নেহাংশু বিশ্বাস নামে এই অফিসার অ্যান্টি-করাপশন সেলে কাজ করছেন। আদালত নির্দেশ দিয়েছে, ওই অফিসার কলকাতায় এসে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার সঙ্গে যুক্ত হবেন। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আগেই কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআই’র সিট গঠন করেছে। সিটের প্রধান হিসাবে রয়েছেন অশ্বিনী সেনভি। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি বেশ কয়েকটি মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। তদন্তের গতি নিয়ে বহুবার আদালতে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি সিটের প্রধানকে সরিয়ে অন্য কোন অফিসারকে নিয়োগের কথাও বলেছে আদালত। তবে বুধবার ওএমআর শিট বিকৃত করা নিয়ে সিবিআই যে রিপোর্ট আদালতে জমা দিয়েছে তাতে সন্তুষ্ট বিচারপতি। তিনি তদন্তে গতি বাড়াতেই আর একজন দক্ষ অফিসারকে সিটের সঙ্গে যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশে বিচারপতি বলেছেন, দুর্নীতি তদন্তের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই অফিসারকে অন্যত্র সরানো যাবে না। আদালত বলেছে, শারদোৎসবের ছুটি পড়ে যাচ্ছে। এই ছুটির পরই নিয়োগ দুর্নীতির রিপোর্ট মুখবন্ধ খামে আদালতে জমা দিতে হবে। আগামী ২৯ নভেম্বর মামলাটি পুনরায় শুনানির জন্য রাখা হয়েছে।
নিয়োগ দুর্নীতির বিভিন্ন মামলায় তদন্তের কাজে সিবিআই অফিসারদের হাতে সময় কমে যাচ্ছে। অনেকগুলি মামলার তদন্ত একসঙ্গে করতে গিয়ে অফিসারদের যে সময়ের প্রয়োজন তা পাওয়া যচ্ছে না। বুধবার সিবিআই’র তরফে আদালতে আবেদন করা হয়েছে, কলকাতা পুলিশের কয়েকজন কর্মীকে পাওয়া গেলে কাজের সুবিধা হবে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতা পুলিশের ১০জন কর্মীকে সিবিআই’র কাজে সাহায্যের জন্য রাজ্যের মুখ্য সচিব এইচকে দ্বিবেদীকে বলেছেন। এই কর্মীদের ডেপুটেশনে পাঠানোর কথাও আদালত বলেছে। তবে এই কর্মীদের কাজ কী হবে তা এখনও জানা যায়নি।
 

Comments :0

Login to leave a comment