2023-24 CENTRAL BUDGET

নিজের ঠিক করা বরাদ্দের টাকাও খরচ করেনি মোদী সরকার

জাতীয়

indian politics bjp congress cpim cpi rajasthan chattishgarh telengana madhya pradesh bengali news2024-25 central budget

জাতভিত্তিক জনগণনার দাবিকে খারিজ করতে চেয়ে একের পর এক জনসভায় নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, দেশে ৪টি প্রধান জাত রয়েছে। তাঁরা হলেন গরিব, মহিলা, যুব এবং অন্নদাতা অর্থাৎ কৃষক। বৃহস্পতিবার সংসদে পেশ হয়েছে লোকসভা নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট। কিন্তু এই অংশের উন্নয়ন নির্ভর করে যে কেন্দ্রীয় প্রকল্প এবং কেন্দ্রীয় সহায়তা প্রাপ্ত প্রকল্প, দুই ক্ষেত্রেই খরচ হয়েছে গতবারের বরাদ্দের চেয়ে কম। 

২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বরাদ্দ হয়েছিল ১৪,৬৭,৮৮০ কোটি টাকা। খরচ হয়েছিল ১৪,৪৬,১৫২ কোটি। বরাদ্দের থেকে খরচ কম। নতুন আর্থিক বছরের বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ১৪,৯৪,২৯৬ কোটি। অর্থাৎ গত আর্থিক বছরের তুলনায় বরাদ্দ বৃদ্ধি ৫০ হাজার কোটির আশেপাশে। কিন্তু পুরনো পরিসংখ্যানে ভরসা রাখলে বলাই যায়, খরচ পরিমাণ তুলনায় অনেকটাই কম থাকবে। 

কেন্দ্রীয় সহায়তা প্রাপ্ত প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রেও একই ছবি। এই প্রকল্পগুলিতে ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে ৪,৭৬,১০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই খাতে খরচ হয়েছে ৪,৬০,৬১৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ১৬ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে ব্যর্থ হয়েছে কেন্দ্র। ২০২৪-২৫ আর্থিক বর্ষে যদিও এই খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ৫,০১,৭৮৮ কোটি। 

অর্থ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী রাজ্যগুলিকে সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ হস্তান্তের দায়িত্ব থাকে কেন্দ্রের। ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে ১,৬৫,৪৮০ কোটি টাকা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি ছিল। পাঠানো হয়েছে ২৫ হাজার কোটি কম টাকা, ১,৪০,৪২৯ কোটি। ঘটনা হলো ‘সবকা বিকাশ’ বললেও ২০২৪-২৫ অন্তর্বর্তী বাজেটে এই খাতে লক্ষ্য আরও কমিয়ে আনা হয়েছে ১,৩২,৩৭৮ কোটিতে। অর্থাৎ ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে অর্থ কমিশনের তহবিল থেকে রাজ্যগুলির প্রাপ্য আরও কমার ব্যবস্থা করল মোদী সরকার। 

স্থায়ী পরিকাঠামো গড়ার জন্য মূলধনী খাতে ২০২৩-২৪ আর্থিক বর্ষে বরাদ্দ হয়েছিল ১০ লক্ষ ৯৬১ কোটি টাকা। বাজেট হিসেব বলছে, খরচ হয়েছে ৯,৫০,২৪৬ কোটি। ধরে নেওয়া হচ্ছে, চলতি অর্থবর্ষের শেষে, অর্থাৎ মার্চের শেষে খরচ এই অঙ্কে দাঁড়াবে। এখানেও প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে উঠতে পারেনি কেন্দ্র। নতুন বাজেটে যদিও বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হয়েছে ১১,১১,১১১ কোটি। 

স্থায়ী পরিকাঠামো গড়ার ক্ষেত্রেও কেন্দ্র অনুদান দিয়ে থাকে। গত বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ১৩,৭০,৯৪৯ কোটি। খরচ হয়েছে ১২,৭১,৪৩৬ কোটি। কেন্দ্র খরচ করতে ব্যর্থ হয়েছে ১ লক্ষ কোটি টাকার কাছে অর্থ। নতুন আর্থিক বছরে বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৪,৯৬,৬৬৩ কোটি।  

 কোভিড পরবর্তী লকডাউনের ফলে দেশের অর্থনীতি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীকালে অর্থনীতির গতি ফেরাতে দেশ তাকিয়ে ছিল মূলধনী খাতে কেন্দ্রীয় বরাদ্দের দিকে। পরিকাঠামো খাতে খরচ বাড়লে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ে, বাড়ে আয়ের সংস্থান। 

বাজেটে কৃষকদের জীবনমান পরিবর্তনে ইতিবাচক একাধিক পদক্ষেপের দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু কৃষিক্ষেত্রেও খরচ বরাদ্দের চেয়ে কম। আগের বাজেটে বরাদ্দ ছিল ১,৪৪,২১৪ কোটি টাকা। খরচ হয়েছে ১,৪০,৫৩৩ কোটি। এখানে ব্যর্থতার পরিমাণ ৪ হাজার কোটির আশেপাশে। নতুন বছরের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১,৪৬,৮১৯ কোটি। নতুন বরাদ্দও তেমন বাড়েনি। মুখে যাই বলুন, কৃষি থেকে সরে আসার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। 

একই কথা বলা যায় সারের ভর্তুকির ক্ষেত্রেও। ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে সারের ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ হয়েছিল ১,৭৫,১০০ কোটি টাকা। খরচ হয়েছিল ১,৮৮,৮৯৪। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে সারের ভর্তুকির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সারের দামও বেড়েছে মারাত্মক মাত্রায়। কিন্তু কৃষকের কথা বলা সরকার নতুন বাজেটে সেই চাহিদার কোনও ছাপ রাখতে চায়নি। বরং বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে ১ লক্ষ ৬৪ হাজার কোটিতে। 

প্রসঙ্গত, সারের ভর্তুকি কমে যাওয়া এবং বাজারে সারের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলেই কৃষি অলাভজনক হয়ে পড়েছে। ফসলের দাম না মেলায় কৃষক আত্মহত্যার সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। কৃষক আন্দোলনও লাগাতার সারের দামে অসন্তোষ জানাচ্ছে। 

খাদ্যে ভর্তুকির জন্য ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে বরাদ্দ ছিল ১,৯৭,৩৫০ কোটি। কেন্দ্র খরচ করেছে ২,১২,৩৩২ কোটি। বরাদ্দের থেকে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা বেশি খরচ করতে হয়েছে কেন্দ্রকে। কারণ দেশে ক্ষুধার পরিমাণ বাড়ছে। ২০২৩ প্রকাশিত বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারতের অবস্থান ১২৫ দেশের মধ্যে ১১১তম স্থানে। কেন্দ্রীয় সরকার প্রকাশ্যে সেই রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করলেও বাজেটে তার প্রতিফলন ঘটেছে। 

কিন্তু ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে দেশের ক্ষুধার্ত গরীব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কোনও সদিচ্ছা দেখায়নি কেন্দ্র। তারফলে বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে মাত্র ২,০৫,২৫০ কোটি।

অর্থাৎ, গরিব মানুষের পাশে না থাকার ইঙ্গিত স্পষ্ট। 

২০২৩-২৪ আর্থিক বর্ষে পেট্রোলিয়ামের ভর্তুকির জন্য কেন্দ্র খরচ করেছে ১২,২৪০ কোটি। খরচ হয়েছে, মানে চাহিদা রয়েছে। কিন্তু ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে বরাদ্দ কমে হয়েছে ১১,৯২৫ কোটি। এখানেও সেই ফর্মুলা। চাহিদা থাকলেও খরচ করবে না কেন্দ্র। 

 

Comments :0

Login to leave a comment