ভোট এলেই আরএসএস-বিজেপি ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। বিভাজনের অজস্র ইস্যুর মধ্যে ইদানিং নাগরিকত্ব হয়ে উঠেছে অন্যতম। যেকোনও দেশের নাগরিকদের কাছে নাগরিকত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নাগরিকত্বহীন ব্যক্তি অধিকারহীন। জীবনযাপনের অধিকার বলেই কিছু থাকে না। তাই এই নাগরিকত্বের প্রশ্নে প্রবল ভীতি ও উদ্বেগ তৈরি করে মানুষকে বিজেপি’র প্রতি অনুগত হওয়ার অর্থাৎ বিজেপি’কে ভোট দেবার নিশ্চয়তা তৈরি করতে চাইছে। এই প্রতারণামূলক ষড়যন্ত্রের অন্যতম অস্ত্র এনআরসি। আসামে কীভাবে এনআরসি’র যাঁতাকলে পিষে ২০ লক্ষ নিরপরাধ মানুষের নাগরিকত্ব অস্বীকার করে তাদের ছুঁড়ে ফেলা হলো অনিশ্চয়তার অন্ধকারে। নাগরিকত্ব হারানো আটকাতে বা নাগরিকত্ব রক্ষা করতে মানুষ যাতে বিজেপি’র শরণাপন্ন হয় তার জন্যই এই ব্যবস্থা।
এনআরসি’র আগুনে ধুনো দিতে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে তৈরি হয়েছে সিএএ বা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন। বিরোধীদের সমস্ত রকম আপত্তি ও বিরোধিতাকে উপেক্ষা করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে আইন পাশ করা হলো একতরফাভাবে। আইনটি যে সংবিধান অনুসারী নয় সেটা জোরালোভাবে তুলে ধরার পরও আমল দেওয়া হয়নি। উলটে এর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রবল বিক্ষোভ-প্রতিবাদ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লে তাকে দমন করতে গিয়ে শতাধিক মানুষকে খুন করা হয় বিভিন্ন রাজ্যে। জেলবন্দি করা হয় বহু আন্দোলনকারীকে। তাদের অনেকে আজও জেলে বন্দি।
প্রতিবেশী বা অন্য দেশ থেকে আসা মানুষদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেবার বিধান আগের নাগরিকত্ব আইনেই ছিল। এতদ্সত্ত্বেও আইন সংশোধন করা হয় নাগরিকত্ব আইনে ধর্মীয় বিভাজন আনার জন্য। সংশোধিত আইন পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে আসা অ-মুসলিমদেরই নাগরিকত্ব দেবার ধারা যুক্ত করা হয়েছে। অ-মুসলিমদের নাগরিকত্ব দেবার ক্ষেত্রে আগের আইনে কোনও বাধা ছিল না। তথাপি সংশোধন করা হলো তাকে ঘিরে বিভাজনের রাজনীতি করার লক্ষ্যে। তখনই বিরোধীরা স্পষ্ট করে বলেছিল বিদেশ থেকে আগতদের নাগরিকত্ব দেবার জন্য সংশোধনের প্রয়োজন নেই। এমনকি সংশোধিত আইনের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। বিষয়টি বিবেচনার জন্য সর্বোচ্চ আদালতেও তোলা হয়েছিল। ফলে আইন পাশ হলেও তার বিধি এখনও তৈরি করা সম্ভব হয়নি। অথচ ইস্যুটি জাগিয়ে রেখে ভোটের ময়দানে ফসল তুলতে মাঝে মধ্যে সক্রিয় হয়ে ওঠে সরকার। সম্প্রতি গুজরাট নির্বাচনের মুখে দুই জেলার জেলা শাসককে অধিকার দেওয়া হয়েছে তিন প্রতিবেশী রাজ্য থেকে আসা অ-মুসলিমদের নাগরিকত্ব দেবার জন্য। স্বরাষ্ট্র দপ্তরে রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে গত পাঁচ বছরে দেশ থেকে আসা প্রায় পাঁচ হাজার অ-মুসলিমকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। সেটা পুরানো নাগরিকত্ব আইন মেনে।
পুরানো আইনেই যদি নাগরিকত্ব দেওয়া যায় তাহলে ধর্মের ভিত্তিতে আইন সংশোধন কেন? এখানেই হিন্দুত্ববাদীদের সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। নাগরিকত্ব দেবার জন্য নয়, মোদী-শাহরা আইন সংশোধনের নামে সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা ও মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে মেরুকরণকে তীক্ষ্ণ করতেই আইন সংশোধন করা হয়েছে।
Citizenship
নাগরিকত্ব নিয়ে বিভাজনের রাজনীতি
×
Comments :0