বিশ্বনাথ সিংহ - রায়গঞ্জ
প্রাথমিকে চাকরি দেওয়ার নাম করে ৬ লক্ষ টাকা নেওয়ার অভিযোগ তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার ওই তৃণমূল নেতার অগ্রিম জামিনের আবেদন খারিজ করে ওই তৃণমূল নেতাকে দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয় রায়গঞ্জ জেলা আদালত। অভিযুক্ত তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সদস্য, তথা রায়গঞ্জ ব্লকের প্রাক্তন সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি ফরিজুদ্দিন শেখ ওরফে ফিরোজ। তাঁর বাড়ি বাড়ি রায়গঞ্জ থানার ভাতুন গ্রাম পঞ্চায়েতের ভাটোল গ্রামে। আদালত সূত্রে আর জানা গেছে, রায়গঞ্জ থানার ভাটোলের বাসিন্দা মহম্মদ ইসমাইলের কাছ থেকে প্রাথমিকে চাকরি দেওয়ার নাম করে ২০১৭ সালে প্রায় ছয় লক্ষ টাকা নিয়েছিল। দীর্ঘদিন পার হয়ে গেলেও চাকরি না হওয়ায় সেই টাকা চাইতে গেলে তাকে মারধোর করা হয়। এমনকি প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়। এই অভিযোগে বেশ কিছুদিন আগেও ভাটোল ফাঁড়িতে অভিযোগ জানানো হয়েছিলো। ফের রায়গঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অবশেষে রায়গঞ্জ জেলা আদালতের দ্বারস্থ হন। শুধুমাত্র মহম্মদ ইসলামের কাছেই নয়, জামিল আক্তার, রবিউল ইসলাম সহ ৯ জনের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়েছে।
মঙ্গলবার রায়গঞ্জ জেলা আদালতের বিচারক অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার জামিনের আবেদন নাকচ করে পুলিশকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০/৫০৬ ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। ক্রিমিনাল কেস নম্বর ১৯৬/২৪।
এই প্রসঙ্গে অভিযোগকারী মহম্মদ ইসমাইল বলেন,“২০১৭ সালে চাকরি দেবে বলে আমার কাছ থেকে ৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা নিয়ে এখনো পর্যন্ত চাকরি দিতে পারেনি। এরপর তার কাছে টাকা চাইতে গেলে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। ২০২২ সালে আমি নিজে পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছি। পুলিশ সুপার সাহেব ফের রায়গঞ্জ থানায় পাঠিয়েছিলেন। বারে বারে অনুরোধ সত্বেও তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ নেয়নি। এরপর বাধ্য হয়েই ২০২৩ সালে ফের আমি থানার দারস্থ হয়েছি। রায়গঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করতে পেরেছিলেন তিনি। এরপর থানা থেকে গোপন জবানবন্দির জন্য রায়গঞ্জ কোর্টে পাঠায়। প্রথম অবস্থাতে লোয়ার কোটে জামিনের জন্য আবেদন করলে সেটা রিজেক্ট হয়। এরপর জর্জ কোর্টের দুবার পিটিশন দিয়েছি । আজকে আবার হিয়ারিং ছিল জজ সাহেব বেল রিজেক্ট করেছেন। আমি গরিব মানুষ খুবই অসহায়, বারবার আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। আমি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ওপর আস্থা রেখে সিআইডির দ্বারস্থ হতে চাইছি। কারণ যে তদন্তকারি অফিসার রয়েছে তিনি সঠিকভাবে তদন্ত করছেন না। কিন্তু এখনো পর্যন্ত অভিযুক্তকে গ্রেফতার করছেন না।" রায়গঞ্জ জেলা আদালতের আইনজীবী শুভজিৎ মুখার্জি বলেন, “ মঙ্গলবার অভিযুক্ত আগাম জামিনের আবেদন করেছিলেন। জর্জ কোর্টে বিচারক সেই আবেদন খারিজ করে দেন।" রায়গঞ্জ জেলা আদালতের সরকারি আইনজীবী স্বরুপ বিশ্বাস বলেন, “মহম্মদ ইসমাইল একজন টেট পরীক্ষার্থী ছিলেন। তাকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে টাকা দিলে তার চাকরিটা কনফার্ম হয়ে যাবে। দীর্ঘদিন পরে বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন টাকাটাও ফেরত পাননি এবং তাকে বারবার খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এরপর বাধ্য হয়ে তিনি রায়গঞ্জ থানার দ্বারস্থ হয়েছিলেন। অনেক ঘোরাফেরার পর রায়গঞ্জ থানায় কেসটি শুরু হয়। তিনি বারংবার টাইম পিটিশন দেন এবং এদিন আগাম জামিনের আবেদন করেছিলেন রায়গঞ্জ জেলা আদালতের বিচারক সেই আগাম জামিন খারিজ করেন। " গোটা ঘটনার পরে রায়গঞ্জ হেমতাবাদ জুড়ে ব্যপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
raiganj
চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা, তৃণমূল নেতাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ আদালতের
×
Comments :0