NEW TOWN ILLEGAL CONSTRUCTION

সরকারি জমিতে যত্রতত্র তৃণমূলের কার্যালয় নিউটাউনে, চিঠি প্রশাসনকে

রাজ্য কলকাতা লোকসভা ২০২৪

NEWTOWN TMC CPIM PARTY OFFICE ILLEGAL CONSTRUCTION BENGALI NEWS নিউটাউন জুড়ে সরকারি জমি দখল করে পার্টি অফিস তৈরি করেছে তৃণমূল।

নিউটাউন শহর জুড়ে সরকারি জমি দখল করে দলীয় কার্যালয় তৈরি করেছে তৃণমূল। তার বিরুদ্ধে নিউটাউনের প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের চিঠি দিলেন নিউটাউনের বাসিন্দা তথা সিপিআই(এম) নেতা সপ্তর্ষি দেব। 

নিউটাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা এনকেডিএ’র চেয়ারপার্সন আলাপন বন্দোপাধ্যায় এবং  ডব্লিউবিহিডকো’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর সঞ্জয় বনশলকে পাঠানো চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে এনকেডিএ’র মুখ্য এক্সিকিউটিভ অফিসার এবং নির্বাচন কমিশনের এরাজ্যের সিইও’র কাছেও। 

সপ্তর্ষি দেব লিখেছেন, এনকেডিএ কর্তৃপক্ষের আওতাধীন এবং ডব্লিউবিহিডকো’র মালিকানাধীন জমি দখল করে গোটা নিউটাউন জুড়ে অবৈধ কার্যালয় বানিয়েছেন তৃণমূল নেতারা। সরকারি জমি দখলে নাম জড়িয়েছে রবিউল মল্লিক, অনুপম মাইতি, তপন মন্ডলের মত স্থানীয় জ্যাংড়া হাতিয়ারা-২ এবং পাথরঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য এবং নেতাদের। প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম ‘প্ল্যানড টাউনশিপ’ হলেও রাজ্য সরকারের ব্যর্থতায় পৌরসভার স্বীকৃতি পায়নি। 

চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, বিএ ব্লকে, ডিই ব্লকে এবং সুখবৃষ্টির উল্টোদিকে কাজা গ্রামে ঢোকার মুখে, হিডকোর শেষ প্রান্তে গত কয়েক মাসের মধ্যে এই অবৈধ নির্মাণগুলি করা হয়েছে। দলীয় কার্যালয়গুলিতে নিয়মিত অসামাজিক কাজের আসর বসে, বহিরাগতরা সেখানে এসে হুজ্জুতি করে এলাকার শান্তি বিঘ্নিত করে। নির্বাচনী আচরণবিধি চালু হওয়ার পরে পার্শবর্তী বিভিন্ন এলাকার দাগী দু্ষ্কৃতিরা এখানে আশ্রয় নিচ্ছে। 

এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, টিনের তৈরি দলীয় দপ্তরগুলি মমতা ব্যানার্জি এবং অভিষেক ব্যানার্জির কাটকাউট দিয়ে মোড়া। কার্যালয়ের সামনের ফুটপাথ দখল করে তৈরি হয়েছে শহীদ বেদী। বারাসত কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদারের ফ্লেক্স এবং কাটকাউটও রয়েছে। 

নিউটাউনের বাসিন্দাদের ক্ষোভ, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট বয়কটের জিগির তুলে তাঁদের ভোট দিতে বাধা দিয়েছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতিরা। এই অবৈধ দপ্তরগুলিতে দুষ্কৃতী মজুত করে লোকসভা নির্বাচনেও তৃণমূল একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করানোর চেষ্টা করতে পারে বলে অভিযোগ করেছেন সপ্তর্ষি। তিনি লিখেছেন, একটি পরিকল্পিত শহরের বাসিন্দা হিসেবে সহনশীল উন্নয়ন আমাদের নাগরিক অধিকার। কিন্তু অবৈধ ও প্ল্যানবিহীন যে কোনও নির্মাণের ফলে সেই কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়। অবিলম্বে এই নির্মাণগুলি ভেঙে দেওয়া এবং যথাযত তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেছেন, এনকেডিএ কর্তৃপক্ষের প্রশ্রয় ছাড়া এই কাজ করা সম্ভব নয়। তাই যথাযত তদন্ত হওয়া প্রয়োজন, এবং অভিযুক্ত তৃণমূল নেতারা ছাড়াও ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সরকারি আধিকারিকদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। 

নিউটাউনের বাসিন্দাদের বক্তব্য, বেশ কয়েক মাস ধরে নিউটাউনকে হকার মুক্ত করার অভিযান চালাচ্ছে এনকেডিএ। শাপুরজী, ডিএলএফ-২’র সামনে থাকা হকার মার্কেট উচ্ছেদ করা হয়েছে। আধিকারিকদের বক্তব্য প্ল্যানড শহরে যত্রতত্র দোকান তৈরি করা যায় না। বাসিন্দাদের প্রশ্ন, নিয়মের দোহাই দিয়ে গরিব মানুষের রুজিরুটির উপরে যদি আঘাত হানা যায়, তাহলে শাসক দলের দুষ্কৃতী ও জমি মাফিয়াদের প্রশ্রয় কেন দিচ্ছে এনকেডিএ এবং ডব্লিউবিহিডকো কর্তৃপক্ষ? 

সপ্তর্ষি দেবের বক্তব্য, নিউটাউন শহরে ব্লক পিছু কমিউনিটি সেন্টার নেই। আবাসিকরা দীর্ঘদিন ধরে কমিউনিটি সেন্টারের দাবি জানিয়ে আসছেন। সিপিআই(এম)’র আন্দোলনের চাপে এতদিন পরে ২-৪ কাঠা জমি কমিউনিটি স্পেস হিসেবে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে কোনও স্থায়ী কাঠামো তৈরির অনুমতি নেই। নিউটাউনের সাধারণ মানুষ, যাঁরা সরকারকে কর দিচ্ছেন একটি আধুনিক শহরে থাকার জন্য, তাঁদের এত নিয়ম মানতে হলে তৃণমূল কিভাবে হিডকোর জমি দখল করে যা খুশি তাই করে যেতে পারে? 

প্রসঙ্গত, সল্টলেকের ক্ষেত্রে প্রতিটি ব্লকে কমিউনিটি সেন্টার তৈরির অনুমতি দিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার। সেই স্থায়ী কাঠামো এখনও ব্যবহার হচ্ছে সল্টলেক জুড়ে। কিন্তু নিউটাউনের ক্ষেত্রে নাগরিক পরিষেবার দিকে তাকানোর হুঁশ নেই তৃণমূলের। 

কলকাতা শহরের গার্ডেনরিচে অবৈধ নির্মাণের জেরে নিহত হয়েছেন ১৩জন। ২৪ মার্চ গার্ডেনরিচে পাশের টালির ঝুপড়ির উপর ভেঙে পড়ে নির্মীয়মাণ বেআইনি বহুতল। শনিবার উত্তর ২৪ পরগণার বিরাটিতে বেআইনি ভাবে তৈরি হওয়া বাড়ির ইঁট মাথায় পড়ে প্রাণ হারান কেয়া শর্মা চৌধুরী নামে এক মহিলা। প্রতিটি ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠেছে, তৃণমূল কাউন্সিলর, বিধায়ক, স্থানীয় থানার মদতে চলছে বেআইনি নির্মাণ। কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলির মেয়র, চেয়ারপার্সন পরিষদ সদস্যদের পকেটেও মোটা কাটমানি ঢোকে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। তারমধ্যেই নিউটাউনের ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে, রাজ্যের কোনও অংশ তৃণমূলের জমি হাঙরদের থেকে সুরক্ষিত নয়। 

Comments :0

Login to leave a comment