Dharmendra Pradhan

কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী বলছেন তারা কোন ভাষা চাপিয়ে দিচ্ছে না, জাতীয় শিক্ষানীতি বলছে অন্য কথা

জাতীয়

নয়া জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে কোন ভাষা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিনের লেখা চিঠির উত্তরে একথা বললেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। তিনি তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, একজন পড়ুয়ার স্বাধীনতা থাকবে নিজের পছন্দের মতো ভাষায় লেখা পড়া করার। সূত্রের খবর চিঠিতে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী উল্লেখ করেছেন জাতীয় শিক্ষানীতির বিরোধীতা করে রাজনীতি করছে অবিজেপি শাসিত রাজ্য গুলো। তার দাবি এই নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে রাজনীতি বন্ধ করা প্রয়োজন। 
দক্ষিণ ভারতের অবিজেপি রাজ্য গুলোর দাবি হিন্দি ভাষা তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য এটা শুধু দক্ষিণ ভারতের রাজ্য গুলোর কথা এই কথা গোটা দেশের সব রাজ্যের।
২০২০ সালে সংসদে কোনও আলোচনা ছাড়াই নয়া শিক্ষা নীতি পাশ করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। জাতীয় শিক্ষানীতির ১৩ নম্বর পাতার ৪.১১ পয়েন্টে বলা হয়েছে, পঞ্চম শ্রেণি বা খুব বেশি হলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত একজন পড়ুয়া নিজের মাতৃভাষা বা স্থানীয় ভাষায় নির্দেশনার মাধ্যমে পড়তে পারবেন। তারপর? 
না। মাতৃ ভাষা বা স্থানীয় ভাষায় নির্দেশনার মাধ্যমে পড়ার কোনও সুযোগ থাকবে না। অষ্টম শ্রেণির পর মাতৃ ভাষা শুধুমাত্র একটি ‘ভাষা’ হিসাবে সে পড়তে পারবে, তাও যদি তা সম্ভব হয় তবেই।
উল্লেখ্য রাজ্যে বাংলা নির্দেশনায় যেই স্কুল গুলিতে পড়ানো হয় সেই স্কুলগুলির ভবিষ্যৎ কি হবে? স্কুল গুলি কি বন্ধ করে দেওয়া হবে? 
আপাতবিচারে মনে হবে জাতীয় শিক্ষা নীতিতে সব ভাষাকে সমান মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।  আসল খেলা রয়েছে তিন ভাষা সূত্র (‘Three Language Formula’)’ তে লুকিয়ে। কী বলছে এই ফর্মুলা?
বলা হয়েছে একজন পড়ুয়া তৃতীয় ভাষা হিসাবে ভারতের যে কোনও ভাষাকে বেছে নিতে পারে, এমনকি সে বিদেশি ভাষাও বাছতে পারে। মানে ধরা যাক, বাংলা, ইংরেজি যদি যথাক্রমে প্রথম এবং দ্বিতীয় ভাষা হয় তবে তৃতীয় ভাষা হিসাবে সে তামিল নিতে পারে বা বিদেশি কিছু নিতে পারে। কিন্তু বাস্তবে সে নিতে পারবে না।
কেন?
কারণ সব শ্রেণিতে সংস্কৃত বাধ্যতামূলকও করা হয়েছে। প্রাচীন ভারতে যে ভাষায় প্রান্তিক, অন্ত্যেজীবী অংশের কোনও অধিকার দেয়নি বর্ণ বিভাজন। বিজেপি আরএসএস’র কাছে জনিশক্ষার প্রসারের থেকে অনেক জরুরি ‘দেবভাষার’ প্রসার। 
ধীরে ধীরে ধাপে ধাপে এই জাল তৈরি করেছে বিজেপি। শিক্ষা নীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ষষ্ঠ এবং অষ্টম শ্রেণিতে ‘এক ভারত, শ্রেষ্ট ভারত’ নামে একটি  প্রোজেক্ট করতে হবে পড়ুয়াদের। এই প্রজেক্টে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষার সাথে সংস্কৃত এবং অন্যান্য ধ্রুপদি ভাষার সঙ্গে যোগসূত্রের  উল্লেখ করতে হবে। 
শিক্ষানীতির ৪.১৮ নম্বর ধারায় উল্লেখ রয়েছে, সব শ্রেণির জন্য সংস্কৃত বাধ্যতামূলক। ‘Three Language Formula’ র মাধ্যমে সংস্কৃতকে বাধ্যতামূলক করা হবে। তাহলে তামিল পড়তে ইচ্ছা হলে কেউ পড়তে পারবে না। বিদেশি কোনও ভাষা শিখতে চাইলে কেউ পড়তে পারবে না। বাকি যেই ভাষাগুলি পড়ার কথা বলা হচ্ছে সেগুলি কুমিড় ছানা দেখানোর মতো। 
বিশেষঞ্জদের মতে, মোদী সরকারের মাধ্যমে আরএসএস’র লক্ষ্য ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ তৈরি করা। যে রাষ্ট্র ধর্মের ভিত্তিতে খেটে খাওয়াকে ভাগাভাগি করবে। কিন্তু বড় মাপের কর্পোরেট মালিকদের নিশ্চিন্ত ছায়া জোগাবে। জোট বেঁধে প্রতিবাদ করা যেখানে অন্যায়। সেই লক্ষ্যে শিশুমনে সম্মতি তৈরির প্রাথমিক ধাপ হলো ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০’।

Comments :0

Login to leave a comment