DYFI BRIGADE

সেবার বক্রেশ্বর-হলদিয়ার দাবিতে ব্রিগেডে ছিল জনস্রোত

রাজ্য

CPIM west bengal panchayat election TMC BJP DYFI BENGALI NEWS যুবশক্তির পাতা থেকে। ব্রিগেডে বক্তব্যে রাখছেন জ্যোতি বসু।

অনিন্দ্য হাজরা 

 

৭ জানুয়ারি ব্রিগেডে সমাবেশের ডাক দিয়েছে ডিওয়াইএফআই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি। মূলত যুবদের কর্মসংস্থানের দাবিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। শুরু হয়ে গিয়েছে দেওয়াল লিখন। সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়ালে দেওয়ালে ঘুরছে পোস্টার। 

১৯৮৭ সালের আগস্ট মাসেও ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দিয়েছিল ডিওয়াইএফআই। যুব সংগঠনের নিজস্ব উদ্যোগে ব্রিগেড ভরানোর আহ্বান সাড়া ফেলেছিল বাংলায়। 

সেই সমাবেশের অন্যতম সংগঠক ছিলেন ডিওয়াইএফআই’র তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক রবীন দেব। 

রবীন দেব জানাচ্ছেন, ১৯৮৭ সালের ২৩ আগস্ট সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছিল। প্রধান বক্তা ছিলেন জ্যোতি বসু। মনে আছে, তার আগে ২০ এবং ২১ তারিখ প্রচন্ড বৃষ্টি হয়েছিল। ২৩ তারিখও আকাশের মুখ ভার ছিল। কিন্তু তারপরেও সারা রাজ্যের যুবদের জেদে সেদিন এক ঐতিহাসিক সমাবেশের সাক্ষী ছিল কলকাতা। বৃষ্টির জন্য বহরমপুর এবং বীরভূম থেকে যুব কর্মীরা ব্রিগেডে এসে পৌঁছতে পারেননি। তাই তাঁরা সমাবেশ চলাকালীন বীরভূম এবং বহরমপুরেই সমাবেশ করেন। 

সেই সময় যুব আন্দোলনের কর্মীদের স্মৃতিতে উজ্জ্বল সমাবেশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, মূলত ৩৩ দফা দাবির ভিত্তিতে ব্রিগেডের ডাক দেওয়া হয়েছিল। ১৯৮৪ সালে বোলপুরে ডিওয়াইএফআই’র রাজ্য কমিটির বৈঠক হয়। সেই বৈঠক থেকেই এই দাবি সনদ তৈরি হয়েছিল। সেই সনদ নিয়ে সারা রাজ্যে নিবিড় প্রচার চলে। জনমত সংগঠিত করা হয়। সেই সংগঠিত যুব সমাজের স্রোত ২৩ আগস্ট ব্রিগেডে আছড়ে পড়ে। 

ডিওয়াইএফআই রাজ্য কমিটির মুখপত্র 'যুবশক্তি' পত্রিকায় প্রচার চলে। দাবি ছিল, বক্রেশ্বরে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, হলদিয়ায় শিল্পাঞ্চল স্থাপন, সল্টলেকে স্টেডিয়াম নির্মাণ, সল্টলেকে তথ্য প্রযুক্ত তালুক গড়ে তোলার। 

রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকার তখন কর্মসংস্থানের জন্য প্রস্তাব দিলেও কেন্দ্রের অনুমোদন মিলত না। তার জন্য লড়তে হয়েছিল যুবদের। 

রবীন দেব জানাচ্ছেন, এই দাবিগুলি বাস্তবায়নের জন্য একাধিক পদযাত্রা হয়েছিল। হলদিয়া প্রকল্পের জন্য সল্টলেক-হলদিয়া পদযাত্রা, উত্তরবঙ্গে নেওড়াখোলা জল প্রকল্পের জন্য পদযাত্রা, বাগড়াকোটে শিল্পতালুক স্থাপনের জন্য পদযাত্রা, সল্টলেক স্টেডিয়ামের জন্য পদযাত্রা ব্যাপক সাড়া ফেলে। জেলায় জেলায় প্রচার চলে। 

সেই সময় রাজ্যে একাধিক রেলপথ চালুর জন্যও আন্দোলন করে ডিওয়াইএফআই। একলাখি-বালুরঘাট,বজবজ-নামখানা, হাওড়া-শিয়াখালা রেললাইন স্থাপনের দাবিও ডিওয়াইএফআই’র দাবি সনদে ছিল। রবীন দেবের কথায়, রাজ্যে সরকারে থেকেও দাবি আদায় এবং রূপায়ণের জন্য এমন বৃহৎ আন্দোলন এদেশের ইতিহাসে বিরল। 

কিন্তু ব্রিগেডে সমাবেশ করার ‘চ্যালেঞ্জ’ নেওয়ার কথা কীভাবে মাথায় এল যুব সংগঠকদের? 

রবীন দেবের কথায়, ১৯৮৬ সালের ২৩ আগস্ট বাঁকুড়ার রাইপুরে বিচ্ছিন্নতাবাদ বিরোধী যুব কনভেনশন হয়। কনভেনশনে কয়েক লক্ষ যুব’র বিশাল জমায়েত হয়েছিল। তখনই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ব্রিগেডে সভা করার। 

এবার যুব ব্রিগেডের আগে পরিস্থিতি কী? ডিওয়াইএফআই রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহার কথায়, রাজ্যে শিল্প নেই। কাজ নেই। বেকার যুবদের পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিতে হচ্ছে। সরকারি নিয়োগে লাগামছাড়া দুর্নীতি। গ্রামে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ। কাজের হাহাকার চলছে। এর বিরুদ্ধে প্রচারকে সর্বাত্মক পর্যায়ে নিয়ে যাব আমরা। 

যুব নেতৃবৃন্দ জানাচ্ছেন, সমাবেশের মূল স্লোগান এবং লোগো প্রকাশ করা হবে। কিন্তু কর্মসূচির প্রাথমিক রূপরেখা অনুযায়ী, ৩ নভেম্বর কোচবিহার থেকে শুরু হবে পদযাত্রা। সারা রাজ্য ঘুরে কলকাতায় পৌঁছবেন পদযাত্রীরা। ৭ জানুয়ারি সমাবেশ হবে। ১০০ জন স্থায়ী পদযাত্রী শুরু থেকে শেষ অবধি হাঁটবেন। পদযাত্রাকে ঘিরে জেলায় জেলায় অজস্র ছোট সভা হবে। প্রতি জেলায় কেন্দ্রীয় সমাবেশেরও ভাবনা রয়েছে। 

ইতিমধ্যেই কলকাতা, মুর্শিদাবাদ সহ  একের পর এক জেলা থেকে দেওয়াল লিখনের ছবি আসতে শুরু করেছে। সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনের পরে দেওয়াল লিখনে অংশ নেন ডিওয়াইএফআই’র রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি, ধ্রুবজ্যোতি সাহা সহ সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। 

ধ্রুবজ্যোতি সাহা’র কথায়, কর্মসংস্থানের পাশাপাশি তৃণমূল-বিজেপির বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধেও আমাদের লড়াই। সেই লড়াইয়ে অংশ হওয়ার জন্য সমাজের সমস্ত অংশের মানুষের কাছে আবেদন রাখছি। একইসঙ্গে গ্রামীণ এলাকায় কাজের পরিসর বৃদ্ধি করতে ১০০ দিনের কাজ বাড়িয়ে ২০০ দিন করারও দাবি জানাচ্ছেন যুবরা।

Comments :0

Login to leave a comment