এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটের সময় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করেছিলেন কিছুদিনের মধ্যে দেশের অর্থনীতির বিকাশ নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করবেন। তাতে দেখানো হবে ইউপিএ জমানার দশ বছরের তুলনায় মোদী জমানার দশ বছরে বিকাশের গতি ও হার অনেক বেশি। সামনে লোকসভা নির্বাচনে প্রচারের তাগিদে কালবিলম্ব না করে অর্থ মন্ত্রী সেই শ্বেতপত্র প্রকাশও করে দিয়েছেন। ভুলভাল তথ্য, হিসাবের গরমিল, বিশ্লেষণে লুকোচুরিতে ভরা শ্বেতপত্রটি এখানে আলোচ্য নয়। আলোচ্য শ্বেতপত্র প্রকাশের প্রয়োজন ও অতি তৎপরতা নিয়ে। দলের নির্বাচনী প্রচারের জন্য মনগড়া তথ্য হাজির করতেই এই শ্বেতপত্র। কিন্তু এখন দাবি উঠেছে কর্পোরেট থেকে বিজেপি’র জন্য তোলা আদায়ের শ্বেতপত্র প্রকাশের। অনেক দিন ধরে বিচ্ছিন্নভাবে খবর মিলছে দলের জন্য টাকা তুলতে মোদী সরকার কর্পোরেটের পেছনে ইডি, সিবিআই এবং আয়কর দপ্তরকে লেলিয়ে দিচ্ছে। দু’টি অনলাইন সংবাদ পোর্টালের রিপোর্টে প্রকাশ অন্তত ৩০টি কর্পোরেটের পেছনে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকে লাগিয়ে আতঙ্কর পরিবেশ তৈরি করে তাদের বাধ্য করা হয়েছে। বিজেপি’র তহবিলে মোটা অঙ্কের তোলা দিয়ে কেন্দ্রীয় এজেন্সির সন্ত্রাস থেকে রেহাই। অর্থাৎ শুধু কর্পোরেট বন্ড নয়, কেন্দ্রীয় সংস্থাকে অপব্যবহার করে জোর জবরদস্তি দলের জন্য কোটি কোটি টকা তুলছেন মোদী-শাহরা।
সংবাদে প্রকাশ বিজেপি-কে যারা টাকা দিচ্ছিলো না সেই সব সংস্থায় তদন্ত সংস্থাকে পাঠানোর পর মোটা অঙ্কের টাকা জমা পড়েছে দলের তহবিলে। টাকা আসার পর তদন্ত সংস্থার কাজও শেষ হয়ে গেছে। যে সব কর্পোরেট বিজেপি’র চাহিদা মতো টাকা দিত না তাদের পেছনেও লাগানো হয় ইডি, সিবিআই, আয়কর-কে। হানা দেবার পর যথারীতি সেই কর্পোরেটগুলি বিজেপি-কে খুশি করার মতো টাকা দিয়ে দিয়েছে। কিছু সংস্থা নিয়মিত তোলা দিলেও হঠাৎ একবছর বন্ধ করার পর ক্ষিপ্ত সরকার পাঠিয়ে দেয় তদন্ত সংস্থাকে। তারপরই ফের নিয়ম করে তোলা দেওয়া শুরু হয়ে যায়। আবার তোলা দেবার ক্ষেত্রে লেনদেনের গোপন শর্তও থাকে। মোটা টাকা দলের কোষাগারে জমা পড়লে সরকারের কাছ থেকে প্রত্যাশিত অনেক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত হয়ে যায়। অর্থাৎ মোদী সরকার শাসক দলের তহবিলের জন্য তোলা আদায়ের যন্ত্রে পরিণত করেছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলিকে। সংস্থাগুলি নির্লজ্জভাবে সেকাজ করে চলেছে।
দেশে এক দল, এক নেতার শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন সমস্ত বিরোধী শক্তিকে নির্মূল করা। কিন্তু গণতান্ত্রিক পথে সে কাজ সম্ভব নয়। তাই নেছে নেওয়া হয়েছে দু’টি অসৎ পথ। প্রথমত বিরোধী নেতাদের পেছনে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে লাগিয়ে তাদের এমন হাল করা যাতে তারা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। মিথ্যা অভিযোগে বন্দি করে জনমানসে বিরূপ ধারণা তৈরি করে সেই নেতা ও তার দলকে কলুষিত করা। পাশাপাশি জনগণের ভোটে বিরোধীদের পরাজ্য নিশ্চিত করা সম্ভব নয় বুঝে মোটা টাকার বিনিময়ে বিরোধী বিধায়ক, সাংসদ কিনে বিরোধীদলকে শক্তিহীন, প্রভাবহীন, এমনকি ক্ষমতাহীন করা। এইভাবে রাজ্যে রাজ্যে বিরোধী সরকার ভেঙে নিজেদের সরকার গড়েছে মোদী-শাহরা। এইভাবে কোটি কোটি টাকা দিয়ে বিধায়ক, সাংসদ, নেতা কেনার প্রয়োজনীয় টাকার জোগান দিতে চলে কর্পোরেট তোলা আদায়ের কাজ। এমনি এমনি কেউ টাকা দেয় না। তাই জোর করে কর্পোরেটের কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে। এই গোটা চিত্রটা দেশের জনগণ দেখতে চায়। তাই মোদী সরকারের যদি সাহস থাকে তাহলে অবিলম্বে কর্পোরেট তোলা আদায় নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক।
EDITORIAL
কর্পোরেট তোলাবাজ
×
Comments :0