Nadia Rape Murder

এবার নদীয়ায় পরিযায়ী শ্রমিকের স্ত্রীকে বাড়িতেই দলবদ্ধ ধর্ষণ-খুন

জেলা

 আর জি কর কাণ্ডের আবহেই রাজ্যে আবারও ধর্ষণ-খুনের ঘটনা ঘটল নদীয়ায়। এবার এক পরিযায়ী শ্রমিকের স্ত্রীকে রাতের অন্ধকারে বাড়িতে ঢুকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেছে দুষ্কৃতীরা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতাল থেকে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় তাঁর। বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ সন্দেহজনক এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে।
সম্প্রতি হাঁসখালি থানার বগুলাতে এক ছাত্রীকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার পর ২৫ বছর বয়সি এই গৃহবধূর ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। নদীয়ার ভীমপুর থানার এই ঘটনায় বুধবার রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় কাঁচা বাড়ি সিঁধ কেটে ঘরে ঢোকে দুষ্কৃতীরা। বৃহস্পতিবার সকালে অর্ধনগ্ন ও জ্ঞানহীন অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে পরিবার এবং প্রতিবেশীরা শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে চিকিৎসকরা কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে বলেন। এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে এগারোটার সময় তাঁর মৃত্যু হয়। সিপিআই(এম) নদীয়া জেলা সম্পাদক সুমিত দে বর্বরোচিত এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে দোষীরা যাতে কোনওভাবেই ছাড় না পায়, তার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে যথাযথ উদ্যোগী ভূমিকা পালনের দাবি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, নিহত গৃহবধূর স্বামী পেশায় কাঠমিস্ত্রি। বর্তমানে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে চেন্নাইতে আছেন। বাড়িতে বিধবা শাশুড়ি ও তাঁদের একমাত্র সন্তানকে নিয়েই দিনযাপন করতেন গরিব পরিবারের এই গৃহবধূ। পুলিশ পাশের আন্দলপোতা গ্রামের মনোতোষ বিশ্বাস নামে ১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি যুক্ত ছিল বলেই প্রাথমিকভাবে সকলের অনুমান। 
এদিন নাতিকে সাথে নিয়ে গ্রামেই আত্মীয়ের বাড়িতে এক অনুষ্ঠানে যান তাঁর শাশুড়ি। একটু রাত করেই ফিরেছিলেন তিনি। নাতিকে সাথে নিয়েই পাশের ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। গৃহবধূ একাই ঘুমিয়ে  ছিলেন তাঁর ঘরে। বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগকে ব্যবহার করে, রাতের অন্ধকারে এক বা একাধিক ব্যক্তি মাটির ভিতের টিনের ঘরের সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকে মহিলাকে ধর্ষণ করে এবং প্রমাণ লোপাটের জন্য ইট দিয়ে মাথায় একাধিক আঘাত করে প্রাণে মারার চেষ্টা করে। আঘাতে ও অত্যাচারে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে, দুষ্কৃতীরা মৃত ভেবে সেই কাটা সিঁধ দিয়েই পালিয়ে যায়। এদিন সকালে মহিলা ঘুম থেকে উঠছেন না দেখে, ডাকাডাকি করেন শাশুড়ি। আওয়াজ না পেয়ে উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েন তিনি। বাড়িতে ছুটে আসেন আশেপাশের প্রতিবেশীরা। দরজা ভেঙে গ্রামের ও পরিবারের লোকজন ঘরের ভেতরের বিছানায় অর্ধনগ্ন ও রক্তাক্ত অবস্থায় অচেতনভাবে পড়ে থাকতে দেখে। তাঁর শরীরে আঘাতে ছিহ্ন ছিল স্পষ্ট। শাশুড়ি মাথায় হাত দিতেই রক্তে তার হাত ভিজে যায়। বালিশও ছিল রক্তে জবজবে ভিজে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুমান, ঘটনায় বেশ কয়েকজন যু্ক্ত। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীও দুষ্কৃতীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। 
ময়নাতদন্ত শেষে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর গ্রামের বাড়িতে। ৭ বছর আগে বিবাহ হয়েছে এই গৃহবধূর। সংবাদ পেয়েই তাঁর স্বামী চেন্নাই থেকে ইতিমধ্যেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। নির্যাতিতার মরদেহ শক্তিনগর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে আসলে গ্রাম ভেঙে পড়ে হাসপাতালে। ছুটে যান কৌশিক দত্ত, আলো দে, মালবিকা মৈত্র, লতিফ সেখ, সুশোভন গোস্বামী,  নিতাই বিশ্বাস, অমিত ঘোষ প্রমুখ যুব ও মহিলা সমিতির নেতৃত্ববৃন্দ। 
এদিন বিকালে ভীমপুর থানার সামনে দোষী সকলকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ সভা হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে এদিন সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি, এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই’র যৌথ উদ্যোগে ভীমপুর থানায় ডেপুটেশন দেওয়ার পর থানার সামনে যৌথ উদ্যোগে অবস্থান বিক্ষোভ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ সভায় সভাপতিত্ব করেন কৃষ্ণা সাহা। বক্তব্য রাখেন সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির জেলা সম্পাদিকা মধুছন্দা গুহ, রমা বিশ্বাস, কৃষ্ণা সরকার, যুব নেতৃত্ব শুভেন্দু ঘোষ ও ছাত্র নেতা যতন বিশ্বাস প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণে কার্যত থানা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সভা শেষে রমা বিশ্বাসের নেতৃত্বে থানার ওসি-র কাছে ডেপুটেশন দেন এক প্রতিনিধি দল। 
পার্টি এরিয়া কমিটির সম্পাদক অদ্বৈত বিশ্বাস বলেন, ইতিপূর্বে কখনো এমন ঘটনা এই সমস্ত এলাকায় ঘটে নি। পার্টি সর্বতোভাবে এই পরিবারের পাশে আছে। দোষীদের সর্বোচ্চ সাজা না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। 
প্রসঙ্গত, গত ৩১ আগস্ট শনিবার কৃষ্ণগঞ্জের ভাজনঘাট এলাকার সর্দারপাড়ায় ১৪ বছরের আদিবাসী নাবালিকাকে ধর্ষণ করা হয় এবং পরিবারকে ভয় দেখানো হয়েছে।  গত সাত দিনের মধ্যে পর পর তিনটি এমন ঘটনা ঘটেছে। প্রথমে বগুলা স্টেশনের রেল লাইনের ওপর অর্ধনগ্ন অবস্থায় এক নাবালিকার দেহ উদ্ধার হয়েছিল। দ্বিতীয় ঘটনা, কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের ভাজনঘাট এলাকার সর্দারপাড়ায় একটি আদিবাসী নাবালিকাকে ধর্ষণ করা হয় এবং ধর্ষকের পক্ষ থেকে ধর্ষিতার পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয় ও ভয় দেখানো হয়। তৃতীয় ঘটনা, গতকাল রাতে ভীমপুর থানা এলাকায় এই মহিলাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে।

 

Comments :0

Login to leave a comment