MIGRANT DEATH

ভিনরাজ্যে ফের মৃত্যু পরিযায়ীর

জাতীয় রাজ্য জেলা

migrant worker death news odisha birbhum cooch behar cpim surjya kanta mishra bengali news

রণদীপ মিত্র: মুরারই

পেটের দায়ে ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর তালিকায় জুড়লো বীরভূমের আরও এক পরিযায়ী শ্রমিকের নাম। এবার মুম্বাইয়ে পাঁচতলা ছাদ থেকে পড়ে প্রাণ হারালেন জেলার রাজগ্রামের এক নির্মাণ শ্রমিক। এই নিয়ে গত এক মাসে এরাজ্য ও ভিনরাজ্য মিলিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বীরভূমেরই ন’জন শ্রমিকের।  
বীরভূমের মুরারই থানার রাজগ্রামের নির্মাণ শ্রমিক উত্তম মাল (৪৩) মাত্র দশদিন আগেই মুম্বাই যান। মাথায় ছিল সংসার চালানোর চাপ। গোদের উপর বিষফোড়া হয়েছিল মাইক্রোফিনান্স সংস্থা থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধের চাপ। পরিবারের কথাতে স্পষ্ট হয়েছে, আর্থিক চাপে যথেষ্ট জর্জরিত ছিলেন এই শ্রমিক। সহকর্মীরাই শুক্রবার সকালে তাঁর বাড়িতে এই দুঃসংবাদ দেন। মুম্বাইতে যেখানে কাজ করছিলেন উত্তম মাল, সেই কাজের জায়গাতে একটি পাঁচতলা বহুতলের খোলা ছাদে শুয়েছিলেন বাকিদের সঙ্গে। এদিন ভোরবেলায় তাঁর সহকর্মীরা দেখেন উত্তম যেখানে শুয়েছিলেন তিনি সেই জায়গায় নেই। পরে তাঁদের নজরে আসে তিনি ছাদ থেকে নিচে পড়ে গিয়েছেন। অনুমান, ঘুমের ঘোরেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাঁর সহকর্মীরা তড়িঘড়ি তাঁকে উদ্ধার করলেও ততক্ষণে তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। 
খবর পৌঁছাতেই গ্রামজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মৃত শ্রমিকের স্ত্রী তাপসী মালের কথায়, ‘‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দু’বার ফোনে কথা হয়েছিল। হাজার টাকা জোগাড় করতে বলেছিল। কারণ, বন্ধন ব্যাঙ্কে নেওয়া লোনের টাকা জমা দিতে হতো। আমি গ্রামেরই একজনের কাছে টাকা ধার করি। ফোন করে টাকা জোগার হয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েও দিই। টাকাটা জমা করে দেওয়ার কথা বলে ফোন রাখি। তারপরই সকালে শুনছি এই ঘটনা। আমরা ভেসে গেলাম।’’ 
শ্রমিকের দেহ এদিন রাত পর্যন্ত পৌঁছায়নি গ্রামে। ব্লক প্রশাসনের কর্তারা গিয়েছিলেন তাঁর পরিবারের কাছে।  মুরারই-১ নম্বর ব্লকের যুগ্ম বিডিও জাগ্রত চৌধুরি জানিয়েছেন, ‘‘ব্লকের তরফে কিছু সাহায্য করা হয়েছে পরিবারকে। পাশাপাশি দেহ ফিরিয়ে আনা সহ অন্যান্য সবরকম সহযোগিতা করা হবে।’’ 
মাত্র একমাসে পরপর শ্রমিক মৃত্যু রাজ্যের শ্রমিক নিরাপত্তার উদ্বেগজনক চিত্রকে স্পষ্ট করে দিয়েছে। এক্ষেত্রেও গ্রামের মানুষের একই মত, ‘‘স্রেফ দুটো রোজগারের তাগিদে দূর বিভুঁইয়ে গিয়ে এভাবে আর কত প্রাণ হারাতে হবে জানা নেই।’’ 
গত ৩১ জুলাই মুরারই-২নং ব্লকের লক্ষ্ণীডাঙাল গ্রামের বাদিন্দা আফিউদ্দিন শেখ (৩৫) ও ছোটু শেখ(২৩)-র মৃত্যু হয় দুর্ঘটনায়। মুম্বাইয়ের কান্দিভালিতে নির্মীয়মাণ বহুতলে কাজ করার সময় সতেরো তলা থেকে মাচা ভেঙে দু’জনেই মাটিতে পড়ে যান। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। তার দু’দিন আগে একই ব্লকের নয়াগ্রামের সাফিকুল শেখ (২২) ও গোলশাহানুর শেখ (১৮) নামে দুই নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয় ওড়িশায়। ওডিশার খুরদা জেলার ধাউলি থানার রঘুনাথগঞ্জ এলাকায় একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে সেপটিক ট্যাঙ্ক সংস্কারের কাজে নেমে প্রাণ হারান এই দুই শ্রমিক।  
এই দুই ঘটনার পর গত ৮ আগস্ট বীরভূমেরই তারাপীঠের বুধিগ্রামের পরিযায়ী শ্রমিক পলাশ বায়েন রাজস্থান থেকে কাজ করে ছুটিতে বাড়ি ফিরছিলেন। ফেরার পথে রাজস্থানেরই এক স্টেশনে ট্রেনের ধাক্কায় তাঁর মৃত্যু হয়। অপরদিকে, গত ২২ জুলাই বীরভূমেরই খয়রাশোলের ব্লকের হজরতপুরের হুটুপাড়ায় এই সেপটিক ট্যাঙ্কে নেমেই মৃত্যু হয় তিনজনের। ঘটনার দিন হজরতপুরের হুটুপাড়ার সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে গিয়ে নির্মাণ শ্রমিক স্বপন বাদ্যকর (৪৬) বাড়ির মালিক সনাতন ধীবরের (৪৯) ও স্থানীয় যুবক অমৃত বাগদি (৩২)’র মৃত্যু হয়। পাঁচ ঘণ্টা পর তিনজনের দেহ উদ্ধার হয়েছিল। 

Comments :0

Login to leave a comment