NEWSCLICK RAID

সাংবাদিক গ্রেপ্তারির প্রতিবাদে সরব ‘ইন্ডিয়া’, ক্ষোভ জানাল পলিটব্যুরোও

জাতীয় রাজ্য

newsclick bengali news গ্রেপ্তারির পরে প্রবীর পুরকায়স্থ

নিউজ ক্লিকের উপর হওয়া পুলিশি হামলা এবং প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থয়ের গ্রেপ্তারির প্রতিবাদ জানাল বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক বিন্যাস ‘ইন্ডিয়া’। তীব্র ভাষায় এই ঘটনাকে ধিক্কার জানিয়েছে সিপিআই(এম) পলিটব্যুরো। সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও সরব হয়েছেন এই ঘটনার বিরুদ্ধে।  

মঙ্গলবার সকাল থেকে ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম নিউজক্লিকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থ সহ সাংবাদিক এবং কর্মচারীদের বাড়িতে হানা দিয়েছে দিল্লি পুলিশের একাধিক দল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অভিযোগ, চীনের থেকে আসা অর্থ ঢুকেছে নিউজক্লিকে, আর সেই টাকার সাহায্যে চীনপন্থী ‘প্রোপাগ্যান্ডা’ ছড়াচ্ছে নিউজক্লিক। সেই অভিযোগকে সামনে রেখে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের ২০০ কর্মী নিউজ ক্লিক অফিস সহ একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে। বেশ কিছু ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন এবং হার্ড ডিস্ক বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। প্রবীর পুরকায়স্থ সহ বেশ কিছু বর্ষীয়ান সাংবাদিককে লোদী রোডে স্পেশাল সেলের অফিসেও তুলে আনা হয়। দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখার পরে তাঁকে এবং নিউজক্লিকের এইচআর অমিত চক্রবর্তীকে ইউএপিএ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে পলিটব্যুরো বলেছে, সংবিধান প্রদত্ত বাক স্বাধীনতার আদর্শকে আক্রমণ করছে বিজেপি। গত নয় বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে বিবিসি, নিউজলন্ড্রী, দৈনিক ভাস্কর, ভারত সমাচার, দ্যা ওয়ার, দ্যা কাশ্মীরওয়ালা’র মত সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে তদন্তকারী সংস্থা লেলিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। নিউজ ক্লিকের বিরুদ্ধেও একই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই এই ধরণের পদক্ষেপ। 

বিবৃতিতে পলিটব্যুরো দেশের গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন মানুষকে আহ্বাণ জানিয়েছে, মিডিয়াকে দমন করার এই জাতীয় ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সরব হতে। 

পুলিশি অভিযানের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছে ’ইন্ডিয়া’। একই সুরে এই বিজেপি বিরোধী বিন্যাস তুলে ধরেছে, গত নয় বছরে কীভাবে নিরপেক্ষ সংবাদমাধ্যমের কন্ঠরোধের চেষ্টা চালিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। 

বিবৃতি দিয়ে ‘ইন্ডিয়া’ বলেছে, গত নয় বছর ধরে বিজেপি ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়েছে দেশের সংবাদমাধ্যমকে দলীয় মুখপত্রে পরিণত করার। সেই কারণে বিজেপি ঘনিষ্ঠ লুটেরা পুঁজিপতিদের দিয়ে একাধিক সংবাদমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণও নিয়েছে তাঁরা। এর মাঝেও একাংশের ব্যক্তি সাংবাদিক সত্যের পক্ষে থাকার সংগ্রাম চালিয়েছেন। হিন্দুত্ববাদী আদর্শের অনুসারী সংস্থা এবং সংগঠনগুলিকে ব্যবহার করে তাঁদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানো হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমকে নিরঙ্কুশ ভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে ২০২১ সালে ইনফর্মেশন টেকনোলজি রুলস্‌ চালু করেছে বিজেপি। এই সমস্ত কিছুর মাধ্যমে বিজেপি যে কেবল দেশের সাধারণ মানুষের কাছে নিজেদের অপরাধ গোপন করছে তাই নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও ভারতীয় গণতন্ত্রের গৌরবকে মাটিতে মেশাচ্ছে। 

‘ইন্ডিয়া’ আরও বলেছে, বিজেপির এই প্রতিহিংসা শুধুমাত্র সেই সংবাদমাধ্যমগুলির বিরুদ্ধেই, যাঁরা ক্ষমতাকে প্রশ্ন করেন। যেই সাংবাদিক এবং সংবাদমাধ্যমগুলি ক্রমাগত দেশে বিদ্বেষ এবং অসহিষ্ণুতার চাষ করে চলেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি কেন্দ্রীয় সরকারকে। ইন্ডিয়া মনে করছে, দেশের প্রকৃত সমস্যাগুলি থেকে নজর ঘোরাতেই নিউজক্লিকের বিরুদ্ধে এই অভিযান। 

গোটা বিষয়টির তীব্র নিন্দা করেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সোশ্যাল মিডিয়া এক্সে পোস্ট করে তিনি বলেছেন, একদিকে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এবং দিল্লি পুলিশকে ব্যবহার করে সরকার বিরোধী কন্ঠস্বরকে দমন করার চেষ্টা চলছে। অপরদিকে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি ইচ্ছাকৃত ভাবে কলকাতার চোরেদের সাহায্য করে চলেছে। এর থেকেই স্পষ্ট, কীভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করে বিজেপি। 

সেলিম এই বিপরীতধর্মী ঘটনাকে ‘টেল অফ টু সিটিজ’ বা দুই শহরের কাহিনী হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। 

নিউজক্লিকের সাংবাদিকদের হেনস্থার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়াও। সাংবাদিকদের সমমর্মিতা জানিয়ে ক্লাব বলেছে, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে গোটা বিষয়টির দিকে নজর রাখছি। এই ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেলে প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়ার অফিসের সামনে বিক্ষোভ সভাও করেন সাংবাদিকরা। সভা থেকে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার দাবি জানানো হয়। 

 

Comments :0

Login to leave a comment