BOOK FAIR

‘ঠিককে ঠিক, ভুলকে ভুল বলতে শেখায় বই’

রাজ্য কলকাতা

Kolkata book fair bengali news

সদ্য খোলা হয়েছে অযোধ্যার রাম মন্দিরের দরজা। ধর্ম এবং উগ্র জাতীয়তাবাদের মিশেলে দেশজুড়ে উন্মাদনার ঝড় বইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে বিজেপি আরএসএস। কোথাও তারা সফল। কোথাও আবার পড়তে হয়েছে প্রতিরোধে মুখে। উগ্র জাতীয়তাবাদের এই ঝড়ের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে উগ্র ভাবাবেগ। এই ভাবাবেগ যুক্তির তোয়াক্কা করে না। কিন্তু ভয় পায়, যখন যুক্তিবাদ জোরালো হয়। 
মুক্তচিন্তা আর যুক্তিবাদের সব থেকে বড় সহায়ক হলো বই। ৪৭ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় বিকল্প এই চেতনা ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছে বেস কয়েকটি প্রকাশনা। 
বইমেলায় আলাপ হলো দেবাশিস পালের সঙ্গে। অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। বর্তমানে মেয়ের কাছে থাকেন দিল্লিতে। কিন্তু প্রতি বছর বইমেলায় আসা চাই-ই চাই। তাঁর কথায়, "একদম প্রথম বছর থেকে বইমেলায় আসছি। বদল অনেকগুলো হয়েছে। কিন্তু আমার দেখা সব থেকে বড় পরিবর্তনের কথা বলতে চাই। প্রথমবার বইমেলায় মনে আছে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার তরফে একটা স্টল দেওয়া হয়েছিল। তো সেখানে ওদের এনসাইক্লোপিডিয়ার সবকটা খন্ড বিক্রি করা হচ্ছিল। চামড়ায় বাঁধানো কালেক্টরস এডিশন। তখনকার দিনেই দাম ছিল প্রায় কয়েক হাজার টাকা। এই সময় এক ভদ্রলোক, পরে জানলাম স্কুল শিক্ষক, এসে দেখলাম বইয়ের দরদাম করছেন। ব্রিটানিকার স্টলে রয়েছেন সাহেবরা। এই কথা সেই কথার পরে তারা শিক্ষকটি কে জিজ্ঞেস করলেন,আপনি কি বই গুলি কিনবেন?"

দেবাশিস পালের কথায়, "তারপরের অধ্যায় খুব সংক্ষিপ্ত। নিজের স্বল্প বেতনের ফলে, বই কিনতে না পারার কথা জানালেন সেই শিক্ষক। ব্রিটিশরাও  আকার ইঙ্গিতে বোঝালেন, বাংলার শিক্ষকদের দুরবস্থার কথা তাঁরা জানেন। যদিও সেই দুরবস্থা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার আসার পরে অনেকটাই বেতন বৃদ্ধি ঘটেছিল শিক্ষকদের।"
শিক্ষকদের শুধু বেতনই বাড়েনি। বেড়েছিল গণশিক্ষার হার। বেড়েছিল স্কুলের সংখ্যা। সেই শিক্ষার প্রসারের ফলেই উগ্র ধর্মান্ধতা গ্রাস করতে পারেনি বাংলাকে। 
বইমেলা জুড়ে যখন তুমুল বিতর্ক, কেন খাবারের স্টলে ভিড় বেশি আর বইয়ের স্টলে ভিড় কম, তখনই গিল্ড অফিসের সামনে দেখা মিলল অরিজিৎ সেনগুপ্তর। দেগঙ্গার কলিযুগা শান্তিনিকেতন ইনস্টিটিউট হাই স্কুলের শিক্ষক। রোজ দমদম থেকে দেগঙ্গায় যাতায়াত করেন শিক্ষকতা করতে। দেগঙ্গা থেকে স্কুলের  এক ঝাঁক ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে এসেছেন বইমেলায়। 
অরিজিৎ সেনগুপ্তর কথায়, "বইয়ের থেকে মানুষের বড় বন্ধু হয় না। চেষ্টা করছি ছেলেমেয়েদের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই এই চেতনা ঢুকিয়ে দেওয়ার। বই পড়ার অভ্যাস  যুক্তিবোধের জন্ম দেয়। ঠিককে ঠিক আর ভুলকে ভুল বলতে শেখায়।"

গণশক্তির স্টলে দেখা হল সোমনাথ মন্ডলের সঙ্গে। হাওড়া জেলায় বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বলে জানালেন। সোমনাথের কথায়, "চারিদিকে অরাজক পরিস্থিতি। কাজের বদলে অকাজের কথাকেই রাজনীতির মূল এজান্ডায় পরিণত করার চেষ্টা চলছে। সেইখানে দাঁড়িয়ে গণশক্তি, এনবিএ'র মত প্রতিষ্ঠানগুলি বিকল্পের কথা বলছে যথেষ্ট স্পষ্ট ও বলিষ্ঠ ভাবে। পাঠক হিসেবে গণশক্তির কাছে একটাই প্রত্যাশা, এই ভূমিকা যেন আগামী দিনেও বজায় থাকে।"

Comments :0

Login to leave a comment