ফুটবল কি নিছকই একটি খেলা, যা কেবল ৯০ মিনিটেই সীমাবদ্ধ? নাকি ফুটবল আসলে জীবন বোধের শিক্ষক?
শুক্রবারের ব্রাজিল ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ তুলে দিল সেই প্রশ্নই!
২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালের খেলা শেষ হয়েছে। ক্রোয়েশিয়ার কাছে পেনাল্টিতে হেরে মুষড়ে পড়েছে গোটা টিম ব্রাজিল। মাঠের মাঝেই কান্না ভেজা চোখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন নেইমার। তাঁকে ঘিরে দলের সতীর্থরা, এবং ব্রাজিল দলের নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকা নিরাপত্তারক্ষীরা। সবার শরীরি ভাষাতেই বিষাদের ছোঁয়া। উল্টো দিকে ক্রোয়েশিয়া শিবির তখন জয়ের আনন্দে মাতোয়ারা। গ্যালারি, রিজার্ভ বেঞ্চ এবং মাঠের এক প্রান্তে- উৎসবে মেতে উঠেছে গোটা লাল-সাদা ব্রিগেড। হবে নাই বা কেন! পরপর দুইবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার হাতছানি রয়েছে যে তাঁদের সামনে।
এমনই অবস্থায় ক্রোয়েশিয়া শিবির থেকে এক খুদে ছুটে এল ব্রাজিলের জটলার দিকে। সাত-আট বছরের ছেলেটির জেদ, সে নেইমারের সঙ্গে দেখা করবে। করবেই। ব্রাজিল দলের নিরাপত্তা রক্ষী এক-দুই বার তাঁকে চোখ রাঙালেন বটে, কিন্তু সে দমবার পাত্র নয়। এরই মাঝে নেইমারের নজরও পড়েছে সেই ছেলেটির দিকে। চোখের ইশারায় তিনি নিরাপত্তারক্ষীকে নির্দেশ দেন, ছেলেটিকে ছেড়ে দিতে।
এরপরের দৃশ্যগুলির কোলাজ সম্ভবত এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহূর্তের জন্ম দিল। সেই ছেলেটি এসে জড়িয়ে ধরল নেইমারকে। দিল সান্ত্বনা। যেন বলল, এত সহযে ভেঙে পড়লে চলবে চ্যাম্প? লড়াই যে আরও বড়। নেইমারও জড়িয়ে ধরলেন তাঁকে। কয়েক মুহূর্তের কোলাজ। তারপর ক্রোয়েশিয়ার এনক্লোশারের দিকে ফিরে গেল ছেলেটি।
এই কিশোরের নাম লিও। ক্রোয়েশিয়ার জয়ের অন্যতম কান্ডারি ইভান পেরিসিচের ছেলে হল লিও। বাবার টিম জেতায় সে বেজায় খুশি। কিন্তু নেইমার যে তার স্বপ্নের নায়ক। এই ম্যাচ হারের পর তাঁর নায়ক যে কাঁদছে। তাই সব ভুলে সে ছুটে গিয়েছে নিজের প্রিয় ফুটবলারকে সান্ত্বনা দিতে!
ফুটবল শেখায় একে অপরের পাশে দাঁড়াতে। শেখায় টিম স্পিরিট। যেই স্পিরিট একে অন্যের চোখের জল মুছিয়ে দেয়। এদিনের ম্যাচে যেই হারুক, জিতল কিন্তু ফুটবল বোধের সেই শিক্ষা। জিতলেন লিও। নেইমার কিংবা পেরিসিচরাও কিন্তু হারলেন না!
Comments :0