শিয়ালদহে দুই ট্রেনের ধাক্কার জেরে চরম দুর্ভোগে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। বহুক্ষণ ধরে ট্রেন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। বুধবার দুর্ঘটনার জেরে দুপুরের পর থেকে লন্ডভন্ড হয়ে যায় পূর্ব রেলের মেন শাখার ট্রেন চলাচল। দুর্ঘটনার ফলে কেউ হতাহত না হলেও চূড়ান্ত দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে যান নিত্যযাত্রীরা। অফিস টাইমে এই গোলযোগে বহু নিত্যযাত্রীকে রেললাইন ধরে হেঁটে শিয়ালদহে আসতে হয়। বহু ট্রেন বিধাননগরে দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়। রাত পর্যন্ত স্বাভাবিক হয়নি পরিষেবা। শিয়ালদহ স্টেশনে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় নিত্যযাত্রীদের। একই সঙ্গে বিপাকে পড়েন দূরপাল্লার ট্রেন ধরার যাত্রীরাও।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এদিনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। ঘটেছে সিগন্যাল অমান্য করার জন্য। রেল যেহেতু সিগন্যাল নির্ভর পরিষেবা, তাই সিগন্যাল অমান্যের মতো গুরুতর অপরাধের জেরে এদিনই চালককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট এলে বাকি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে রেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে। গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।
জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত চালক অভিজ্ঞ ছিলেন না। তিনি ছিলেন বয়সে নবীন। তিনি লোকো পাইলট এখনও হননি। তিনি এখনো ‘সান্টার’। সদ্য প্রশিক্ষণ নিয়ে কিছুদিন আগে কাজে যোগ দিয়েছিলেন ওই চালক। এই জন্যই আপাতত তাঁকে ট্রেন নিয়ে কারশেড নিয়ে যাওয়ার কাজে লাগানো হয়েছিল। চালকের জীবন শুরু করার আগেই বড় ধাক্কা খেলেন ওই নবীন চালক।
এদিন দুপুর ১২টা নাগাদ শিয়ালদহ স্টেশনের কাছে কারশেডমুখী একটি ফাঁকা ট্রেনের সঙ্গে রানাঘাটগামী একটি যাত্রীবাহী ট্রেনের ধাক্কা লাগে। সেই ধাক্কার তীব্রতা খুব বেশি না হওয়ায় বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি। তবে কারশেডমুখী ফাঁকা ট্রেনটির একটি চাকা ভেঙে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় রানাঘাটগামী ট্রেনের কেবিনের একটি দরজাও। ক্ষতি হয় রেললাইনের। ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রেল অবশ্য প্রথম থেকেই যান্ত্রিক ত্রুটির সঙ্গে মানব ত্রুটির কথা বলে আসছিল। দিনের শেষে প্রাথমিক তদন্তে সিগন্যাল ভাঙার কথাটা উঠে এল।
প্রথমে অভিযোগ উঠেছিল ইন্টারলকিং কেবিন বা আরআরআই কেবিনে সমস্যা জেরেই এদিনের দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। কিন্তু পরে তদন্ত চালাতে গিয়ে দেখা গিয়েছে আরআরআই কেবিনের কোনও সমস্যা ছিল না। যদিও রেলের কর্মী সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ তুলে আসছিল যে আরআরআই কেবিনে গ্রুপ ডি’র কর্মীদের কাজ করানো হয়। যাদের সেই কাজের কোনও অভিজ্ঞতা নেই। প্রযুক্তি জানা কর্মীর নিয়োগ গত পাঁচ বছর ধরে বন্ধ। এক্ষেত্রেও সেরকম কোনও ঘটনা ঘটতেও পারে অনেকের সন্দেহ। রেল নিজের দোষ ঢাকতেই নবীন চালককে দোষী ঠাওরাচ্ছে।
পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্দিষ্ট সময়েই তিন নম্বর প্ল্যাটফর্ম ছেড়েছিল রানাঘাট লোকালটি। ওটি চলে যাওয়ার পর ছয় নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে আগত ফাঁকা ট্রেনটি কারশেডে যাওয়ার কথা। কিন্তু একই সময়ে দুটি ট্রেন চলে আসায় ঘটে যায় দুর্ঘটনাটি। দু’টি ট্রেনের লাইন বদল করার জায়গাটা সঙ্কীর্ণ থাকায় ট্রেন দুটোর মধ্যে ধাক্কা লাগে। কারশেডগামী ফাঁকা ট্রেনটি সিগন্যাল ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার জেরেই এদিনের দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে রেলের প্রাথমিক ধারণা। নির্দিষ্ট দূরত্ব অবধি গিয়ে কারশেডগামী ট্রেনটিকে থামতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ট্রেনের চালক সেই কথা মানেননি। কারশেডগামী ট্রেনটি রানাঘাটগামী ট্রেনের বগিতে ধাক্কা মারে।
Comments :0