Mamata Banarjee Singur

সিঙ্গুরে মমতার সেই ‘পার্ক’ বিশ বাঁও জলে

রাজ্য

দু’ বছর আগে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন প্রকল্প। এখন সরকারই ভুলতে বসেছে।
দু’বছর আগে, ২০২০-র ২৪ ডিসেম্বর নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। তার চার দিন আগে শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে গেছেন। যাওয়ার সময় তৃণমূল-বিজেপি’র দীর্ঘদিনের সম্পর্ক মনে করিয়ে দিয়েছেন। সামনে তখন বিধানসভা নির্বাচন। সেই পরিস্থিতিতে মমতা ব্যানার্জির সিঙ্গুর নিয়ে বড় ঘোষণা ছিল। 
সাংবাদিক সম্মেলনে কী বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী? বলেছিলেন, ‘‘যেহেতু সিঙ্গুরের ফসল খুব সুজলা, সুফলা, শস্যশ্যামলা। সেইজন্য সিঙ্গুরের ফসলের জন্য নানারকম ডিসপ্লে করতে পারবে। কৃষকরা নতুন নতুন আইটেম করতে পারে। এইসব দিক লক্ষ্য রেখে সিঙ্গুরে অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক আমরা তৈরি করছি।’’  


রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের অন্যতম রাষ্ট্রমন্ত্রী বেচারাম মান্না সিঙ্গুরের বিধায়ক। শনিবার দাবি করেন,‘‘সিঙ্গুরের প্রকল্প এলাকায় তো খুব চাষ হচ্ছে। ৯০%-র বেশি এলাকায় চাষ হচ্ছে। কিছু জমি পড়ে আছে। তা সামান্য।’’ কিন্তু সিঙ্গুরে মমতা ব্যানার্জির সেই ‘অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক?’ সিঙ্গুরের বিধায়ক বেচারাম মান্নার কথায় সিঙ্গুরে তেমন কোনও পরিকল্পনার কথা নেই। তিনি দাবি করলেন,‘‘বোরাইয়ে হচ্ছে ইনডাস্ট্রিয়াল পার্ক।’’ 
যদিও বোরাইয়ের কাজের অগ্রগতি বিশেষ নেই। সিঙ্গুরে কোনও ‘পার্ক’র পরিকল্পনা সরকারের নেই।
অথচ দু’ বছর আগে ‘সিঙ্গুরের কৃষক আন্দোলনের নেত্রী’ মমতা ব্যানার্জি জানিয়েছিলেন,ওয়েস্ট বেঙ্গল স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (ডব্লিউবিএসআইডিসি) ওই পার্ক বানাবে। ১১ একর জমিতে এই শিল্প পার্ক হবে। সিঙ্গুর স্টেশনের কাছে পার্কের জমিতে এখন পাঁচিল ঘেরার কাজ চলছে বলে সেদিন সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেছিলেন। তিনি সেদিন আরও বলেছিলেন, ‘‘ইচ্ছুক শিল্পপতিদের কাছে জমির আবেদন চাওয়া হবে। ১০কাঠা থেকে থেকে ৩০কাঠা পর্যন্ত প্লট দেওয়া হবে। বড় প্লটও মিলবে।’’
কিচ্ছু হয়নি তেমন।


ডব্লিউবিএসআইডিসি’র এক আধিকারিক জানিয়েছেন,‘‘রেজিনগরে শিল্প পার্কের আগাছা, জঙ্গল পরিষ্কারের জন্য টেন্ডার দিয়েছি আমরা কয়েকদিন আগে। ২৩০টি প্লট পড়ে আছে সেখানে। জমির দামে ৫০% ছাড় দিয়েও লোক পাওয়া যাচ্ছে না ক্ষুদ্র শিল্প করার। এই বিষয়ে বলতে পারি। নাম লিখবেন না। কিন্তু সিঙ্গুরে আমাদের পার্ক তৈরির কোনও প্রকল্প নেই।’’
অর্থাৎ মাত্র দু’ বছর পরে সেই ঘোষণার কণামাত্র বাস্তবায়নের চিহ্ন কোথাও নেই। শনিবার ছিল রাজ্যের প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী, যিনি সিঙ্গুরেই এক সমাবেশে শিল্প প্রসঙ্গে বলেছিলেন,‘‘শিল্পায়নের উদ্যোগে বাধা দিয়ে বিরোধীরা শ্রমজীবী মানুষের বিরুদ্ধেই শুধু যুদ্ধে নামেনি, নতুন প্রজন্মের বিরুদ্ধেও যুদ্ধে নেমেছে।’’
আজকের সিঙ্গুর তারই প্রতিধ্বনি। এখন ‘সিঙ্গুরে শিল্প’ মমতা ব্যানার্জি সরকারের প্রবল মাথাব্যথা। শুধু দু’ বছর আগেই নয়, এর আগেও সিঙ্গুর নিয়ে নানা ঘোষণা করেছেন মমতা ব্যানার্জি। তার অন্যতম ‘কিষান ভিশন।’ ২০১১-র ১৮ নভেম্বর প্রকল্পটি শুরু হয়। প্রথম থেকেই এই প্রকল্পটির হাল খুবই খারাপ ছিল। এই পেরিশবল কার্গো সেন্টারটিতে কাজকর্ম কখনই যথেষ্ট হয়নি। ২০১৫-র মে-তে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়ে দেয় যে, খুবই কম ব্যবহারের কারণে যে সংস্থা সিঙ্গুরের কার্গো সেন্টারের দায়িত্বে ছিল তারা প্রকল্পটি ছেড়ে চলে যায়। নতুন সংস্থার সঙ্গে সিঙ্গুরের ‘কিষান ভিশন’ প্রকল্পটি নিয়ে চুক্তি করতে চেয়ে এক্সপ্রেশন অব ইনটারেস্ট প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি। এখন বিদ্যুৎই নেই সেই কিষান ভিশনেও। পোড়ো বাড়ির মতো পড়ে আছে।

 

Comments :0

Login to leave a comment