MANIPUR

হিংসা চলছেই, মণিপুরের গ্রামে খুন আরও ৩

জাতীয়

manipur rahul gandhi bjp congress ethnic violence bengali news

দু’সপ্তাহ থমকে থাকার পরে শুক্রবার ফের নতুন করে হিংসার ঘটনা ঘটলো মণিপুরে। এদিন ভোরে উখরুল জেলার থোয়াই গ্রামে আচমকা হানা দিয়ে ৩ জনকে হত্যা করে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা। এই তিনজনই গ্রামের পাহারাদার কমিটির স্বেচ্ছাসেবক। 
কুকি সম্প্রদায়ের স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, মেইতেই দুষ্কৃতীরাই এই হামলা চালিয়েছে। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, ভোরবেলায় ওই গ্রামে তুমুল গুলিবিনিময় হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, মেইতেই দুষ্কৃতীদের গুলির পালটা হিসেবে গ্রামবাসীরাও গুলি ছোঁড়েন। লড়াই থামার পরে গুলি ও ছুরির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত ৩ টি দেহ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনার পরে উত্তর-পূর্বের অশান্ত রাজ্যটিতে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
উখরুলের লিটন থানার অন্তর্গত থোয়াই গ্রামটিতে মোটামুটি ৫০টি পরিবারের বাস। উখরুল জেলায় তাঙখুল নাগারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও থোয়াইয়ে বেশি রয়েছেন কুকিরাই। থোয়াইয়ে চারপাশে রয়েছে সাঙ্গকাই, মঙ্গকোট, জালেনবুঙ্গের মতো বেশ কয়েকটি কুকি প্রধান গ্রাম। মণিপুরে কুকি-মেইতেই সংঘর্ষ বাড়তে থাকায় থোয়াইয়ের বাসিন্দারা পালা করে গ্রাম পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করেন। মোটামুটি এক কিলেমিটার দূরে গ্রামের প্রবেশপথে একটি বাঙ্কার বানিয়ে স্থানীয় যুবকরা গত কয়েক মাস ধরে পাহারা দিচ্ছিলেন।
জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে ৪ জন স্বেচ্ছাসেবক ওই বাঙ্কারে থেকে গ্রাম পাহারা দেন। শুক্রবার ভোর পাঁচটায় তাঁদের দায়িত্ব শেষ হওয়ার কথা ছিল। তার খানিকক্ষণ আগে এঁদের একজন পরিবর্ত স্বেচ্ছাসেবকদের খুঁজতে গ্রামে যান। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, ওই স্বেচ্ছাসেবক গ্রামে ঢোকার পরপরই পাহারা স্থল থেকে গুলির আওয়াজ শোনা যায়। থোয়াইয়ের লোকজন সঙ্গে সঙ্গে সেখানে দৌড়ে যান। দুষ্কৃতীদের মোকাবিলায় পালটা গুলি চালাতে থাকেন থোয়াইয়ের পাহারাদার কমিটির সদস্যরা। 
প্রায় এক ঘণ্টা গুলি বিনিময়ের পরে হামলাকারীরা পালালে বাঙ্কারের কাছে থোয়াইয়ের তিন পাহারাদার যুবকের রক্তাক্ত দেহ মেলে। নিহতরা হলেন জামখোগিন হাওকিপ, থাঙখোকাই হাওকিপ এবং হ্যালেনসন বাইতে। সকলেরই বয়স ২৪ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুষ্কৃতীদের পরপর গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল দু’টি দেহ। আরেকটি দেহে গুলির চিহ্নের সঙ্গে ছিল একাধিক ছুরিকাঘাত। হামলাকারী দুষ্কৃতীরা থোয়াই গ্রাম লক্ষ্য করে গ্রেনেডও ছোঁড়ে বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের সংখ্যাগুরু মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছিল মণিপুর হাইকোর্ট। এর প্রতিবাদেই ৩ মে মিছিল করে ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অব মণিপুর (এটিএসইউএম) নামে একটি সংগঠন। সেই মিছিলের পরেই বিজেপি-শাসিত মণিপুরে ভয়াবহ জাতি সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। শাসকদল বিজেপি’র প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদতে টানা সাড়ে তিন মাস ধরে ভয়াল চেহারায় এই সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা চলছে। ইতিমধ্যেই খুন হয়েছেন ২০০ জনের বেশি নিরীহ মানুষ। সাধারণ নাগরিকদের ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ছাড়াও মহিলাদের সম্ভ্রমহানির বর্বর ঘটনাবলীতে শিউরে উঠেছে সারা দেশ। ৬০ হাজারেরও বেশি ঘরছাড়া মানুষ মণিপুরের বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে অসহায় জীবনযাপন করছেন। বিজেপি নেতা তথা মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন সরকারের চরম নিষ্ক্রিয়তা দেখে শেষপর্যন্ত রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে বেনজির হস্তক্ষেপে বাধ্য হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। উল্লেখ্য, মণিপুরের জনসমষ্টির প্রায় ৫৩ শতাংশ মেইতেই সম্প্রদায়ের। তাঁরা প্রধানত ইম্ফল উপত্যকায় বসবাস করেন। অন্যদিকে কুকি, নাগাদের মতো ৪০ শতাংশ আদিবাসী মানুষের বাস রাজ্যের পার্বত্য জেলাগুলিতে। 

Comments :0

Login to leave a comment