কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমোচ্ছিল বলেই তৃণমূল অবাধে বারো বছর ধরে রাজ্যে দেদার চুরি দুর্নীতি চালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। রবিবার গলসীতে ইনসাফ যাত্রায় যোগ দিয়ে তিনি বলেছেন, চোর কখনো চোরকে ধরে না। রাজ্য ও কেন্দ্রের শাসকদলও তাই কেউ কারো চুরি ধরেনি। এখন মানুষ ইনসাফ চেয়ে পথে নেমেছে দেখে ওরা ভয় পাচ্ছে। তাই ব্রিগেড সমাবেশে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
এদিনই রানিগঞ্জে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, গত বারো বছর ধরে রাজ্যে দুর্নীতি হচ্ছে মিড ডে মিল, রেশন, আবাস যোজনা, একশো দিনের কাজ, শিক্ষা, নিয়োগ ইত্যাদি সব কিছু নিয়ে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কী ঘুমোচ্ছিল? ২০১৪ সালে মোদী সরকারে বসার পর থেকে তৃণমূলের দুর্নীতিবাজদের সাহস বেড়ে গেছে। বুঝে গেছে যে চুরি করলেও কেউ কিছু বলবে না। পাচার কারবার বেড়ে গেছে। বিজেপি সরকার কুম্ভকর্ণের মতো মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে ওঠে আর বলে তদন্ত হবে। কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়ে তদন্ত হয়নি কেন? কেন্দ্রের শাসকদল এবং রাজ্যের শাসকদল দুই পক্ষই চুরি করছে, চোর কখনো চোরকে ধরে? তাহলে তো ভাইপো সহ তৃণমূল নেতারা এতদিনে জেলে থাকতেন।
চারজনের বদলায় আটজনকে ধরার যে হুমকি মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছেন সেই সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, আটজন কেন? মমতা ব্যানার্জির সাহস থাকলে সিপিআই(এম)’র সঙ্গে গলা মিলিয়ে বলুন, ‘চোর ধরো, জেল ভরো’। সে চার জন হোক চারশো জনই হোক, তৃণমূল বিজেপি সিপিআই(এম) যে দলেরই হোক। তা না করে উনি দেখাচ্ছেন, তুমি আমাদের চারজনকে ধরলে আমি তোমাদের আটজনকে ধরবো। মানে তোমারও চোর থাক, আমারও চোর থাক। তোমারও ভাইপো থাক, আমারও ভাইপো থাক। কেউ কাউকে ধরবে না। এটাই ইডি সিবিআই করছে। এভাবে চোরেদের সাম্রাজ্য অটুট রাখার চেষ্টা হচ্ছে।
তৃণমূল বিজেপি’র বিরুদ্ধে রাজনীতিকে নীতি বিবর্জিত করে দুর্নীতির আখড়া করার অভিযোগ করে সেলিম বলেন, দুর্নীতির সাম্রাজ্য তৈরির জন্য রাজনীতিতে নৈতিকতা ধংস করা হয়েছে। সাংসদ বিধায়ক কেনাবেচা হচ্ছে, আসানসোলের বিজেপি সাংসদ হয়ে গেলেন তৃণমূলের মন্ত্রী। নীতি নৈতিকতা বর্জিত হয়ে কামানোর রাজনীতি হচ্ছে। সজ্জন ব্যক্তিরা এতে দূরে সরে যায়, দুর্জনদের দাপট বেড়ে যায়। এখন তাই হচ্ছে। তারা ধর্মের আবরণ লাগিয়ে অপকর্ম করছে। দুর্নীতি, দুষ্কৃতী, সাম্প্রদায়িকতা সব একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। এগুলোর বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়তে হবে।
তিনি একথাও বলেছেন, বিজেপি যেভাবে ধর্মীয় উসকানি দিয়ে সংখ্যাগুরু সংখ্যালঘু ভাগ করছে, তৃণমূলও সেভাবে ভাষাকে কেন্দ্র করে বাংলাভাষী ও হিন্দিভাষীদের মধ্যে বিভাজন ও ঘৃণা তৈরি করছে। বিজেপি আবার হিন্দিভাষীদের ত্রাতা সাজার ভান করছে। আরএসএ এবং তৃণমূল উভয়েই উভয়কে সাহায্য করছে ভাগাভাগিতে।
রবিবার ইনসাফ যাত্রা জনজোয়ারে ভেসে পৌঁছেছে গলসীতে। বর্ধমান থেকে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে ইনসাফ যাত্রা এগিয়েছে। কুলগড়িয়া চটিতে প্রচুর মানুষ জড়ো হয়েছিলেন পদযাত্রীদের সংবর্ধনা জানাবার জন্য। বিকালে গলসী কালীমতি বিদ্যালয়ের সামনে ইনসাফ যাত্রা পৌঁছয়। গলসী চৌমাথা মোড়ে সংবর্ধনা সভার আয়োজন করেছিলেন যুবরা। সংক্ষিপ্ত সভায় মহম্মদ সেলিম বলেন, নয়া বাংলার ইতিহাস এই যৌবন লিখবে। তার জন্য সবাই এককাট্টা হচ্ছে।
গলসী থেকে ইনসাফ যাত্রা পৌঁছায় বুদবুদে। পাঁচটা গ্রাম পঞ্চায়েতের মানুষ সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন। এখানে ডিওয়াইএফআই’র রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি বক্তব্য রাখেন।
Comments :0