জাতীয় নমুনা সমীক্ষা সংস্থা বা এনএসএসও এই সমীক্ষা করেছে। এর আনুষ্ঠানিক নাম গার্হস্থ্য ভোগব্যয় সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে গ্রামীণ এলাকায় মোট ব্যয়ের ৪৬ শতাংশ খরচ হয় খাবার কেনার জন্য। শহরে এলাকায় এই পরিমাণ ৩৯ শতাংশ। দেশের গ্রামীণ এলাকায় ৭০ শতাংশ গড়ে প্রতিমাসে মাথাপিছু ৪ হাজার টাকারও কম খরচ করে। আর শহরাঞ্চলের ৫০ শতাংশ মাসে ৫ হাজার টাকাও খরচ করতে পারে না।
প্রসঙ্গত, ভারতীয়দের আয়ের উপর কোনও সমীক্ষা করেনা কেন্দ্র। তাই ব্যায়ের খতিয়ান থেকে সাধারণ মানুষের, বিশেষত প্রান্তিক মানুষের আয়ের একটা ছবি তৈরি করা সম্ভব। ২০১১-১২ আর্থিক বর্ষে এর আগে এমপিসিই’র রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছিল। চলতি মাসে ২০২২-২৩ আর্থিক বছরের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। ২০২২ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০২৩ সালের জুলাই মাস অবধি সমীক্ষা চালানো হয়।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১১-১২ আর্থিক বছরে গ্রামীণ এলাকায় গড় মাথাপিছু খরচ ছিল ১৪৩০ টাকা। ২০২২-২৩ সালে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭৭৩ টাকায়। শহরাঞ্চলের ক্ষেত্রে ২০১১-১২ সালে ২৬৩০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪৫৯ টাকায়। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধিকে হিসেবে রাখলে প্রকৃত খরচ কমছে অনেকটাই। সেক্ষেত্রে যথাক্রমে গ্রামীণ এবং শহুরে গড় মাথাপিছু মাসিক ব্যয় কমে হচ্ছে ২০০৮টাকা এবং ৩৫১০ টাকা। শতাংশের হিসেবে গ্রামীণ এলাকায় গড় বার্ষিক বৃদ্ধি মাত্র ৪ শতাংশ এবং শহরে ৩ শতাংশ।
এই চিত্র থেকে খুব সহজেই গড় মাসিক পারিবারিক ব্যয়ের হিসেব করা সম্ভব। ধরা যাক পরিবারে ৪জন সদস্য রয়েছে। সেক্ষেত্রে এই সংখ্যাকে ৪দিয়ে গুণ করলেই হবে। এবং সেই হিসেবে ২০১১-১২ সালে গ্রামে গড় পারিবারিক মাসিক ব্যয় ছিল ৫৭২০ টাকা, যা ২০২২-২৩ সালে হয়েছে ১৫,০৯২। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির হিসেব ধরলে প্রকৃত ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৮০৩২ টাকা।
একইভাবে শহরের ক্ষেত্রে ২০১১-১২ সালে গড় পারিবারিক ব্যয় ছিল ১০,৫২০ টাকা, যা ২০২২-২৩ সালে খাতায় কলমে বেড়ে হয়েছে ২৫,৮৩৬ টাকা। কিন্তু প্রকৃত ব্যয় হল ১৪,০৪০ টাকা।
কেন্দ্রীয় তথ্য থেকে যেমন স্পষ্ট যে গত ১১ বছরে আয় তেমন বাড়েনি বলেই ব্যয়ও বাড়েনি, তেমনই ধনী এবং দরিদ্র মানুষের মধ্যে বৈষম্যের হারও স্পষ্ট হয়েছে রিপোর্টে। রিপোর্ট বলছে, গ্রামীণ এলাকার দরিদ্রতম ৫ শতাংশ মানুষের গড় মাথাপিছু মাসিক খরচ মাত্র ১৩৭৩ টাকা। অপরদিকে অঞ্চলের ধনীতম ৫ শতাংশ মানুষের গড় মাথাপিছু মাসিক ব্যয় ১০,৫০১ টাকা! অর্থাৎ প্রান্তিকতম মানুষের তুলনায় বিত্তশালী মানুষ ৮ গুণ টাকা খরচ করতে সক্ষম।
এই বৈষম্য শহরাঞ্চলে আরও প্রকট। শহরে দরিদ্রতম ৫ শতাংশ মানুষের গড় মাথাপিছু মাসিক ব্যয় ২০০১ টাকা। ধনীতম ৫ শতাংশের ব্যয় সেখানে ২০,৮২৪ টাকা। শহরে এই অন্তর ১০ গুণেরও বেশি।
রিপোর্টে স্পষ্ট, উচ্চবর্ণের খরচ করার ক্ষমতা তপশিলি জাতি, আদিবাসী এবং অন্যান্য অনগ্রসর অংশের থেকে অনেকটাই বেশি। গ্রামীণ এলাকায় আদিবাসীদের ক্ষেত্রে গড় মাথাপিছু মাসিক খরচের পরিমাণ ৩০১৬ টাকা, তপশিলিদের ক্ষেত্রে সেটা ৩৪৭৪ টাকা এবং ওবিসিদের ক্ষেত্রে সেটা ৩৮৪৮ টাকা। উচ্চবর্ণের ক্ষেত্রে এই খরচের পরিমাণ ৪৩৯২ টাকা।
শহুরে এলাকায় এই পরিমাণ যথাক্রমে আদিবাসীদের ক্ষেত্রে ৫৪১৪ টাকা, তপশিলিদের ক্ষেত্রে ৫৩০৭ টাকা, ওবিসি’দের ক্ষেত্রে ৬১৭৭ টাকা এবং উচ্চবর্ণের ক্ষেত্রে সেটা ৭৩৩৩ টাকা।
এই রিপোর্টে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারগুলির বিভিন্ন অনুদানের ফলে গড় মাথাপিছু মাসিক ব্যয় বৃদ্ধির হার অত্যন্ত কম। গ্রামীণ এলাকায় সরকারি অনুদান গ্রহণ করলে গড় মাসিক মাথাপিছু ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৩৮৬০ টাকা। আর অনুদান বাদ দিলে সেই পরিমাণ ৩৭৭৩ টাকা। অর্থাৎ ৮৭ টাকার অন্তর। মূল্যবৃদ্ধি খেয়ালে রাখলে পরিমাণ কমে দাঁড়াবে মাত্র ৪৬ টাকায়। শহরের ক্ষেত্রে এই অন্তরের পরিমাণ ৬২ টাকা, এবং মূল্যবৃদ্ধির হার ধরলে মাত্র ৩৪ টাকা!
Comments :0