NEWSCLICK HIGH COURT

নিউজক্লিক: নিপীড়নের প্রতিবাদ ছড়ালো বিশ্বে, হাইকোর্টে শুনানি ৯ অক্টোবর

জাতীয়

newsclick bengali news নিউজক্লিক কান্ডে কলকাতায় বিক্ষোভে সাংবাদিকরা

নিউজক্লিকের পাশে দাঁড়িয়ে খোলা চিঠি দিল আন্তর্জাতিক সংবাদ প্রতিবেদক ‘পিপলস্‌ ডেসপ্যাচ’, আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রাই কন্টিনেন্টাল রিসার্চ সার্ভিসেস, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, তিন মহাদেশের সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, প্রগতিশীল সমাজকর্মীরা। শুক্রবার ২৩০ জনের সই সহ এই চিঠি প্রকাশ করা হয়েছে। 

এদিনই দিল্লি হাইকোর্টে নিউজক্লিকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থের আবেদনে ৯ অক্টোবর, সোমবার শুনানির দিন ঠিক করেছে। বিচারপতি তুষার রাও গেদেলা কেন্দ্রীয় সরকারের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে বলেছেন, ‘‘অভিযুক্তদের হেপাজতে রাখতে নিম্ন আদালত নির্দেশ দিয়েছে। নির্দেশে ফাঁক রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’’ দিল্লি পুলিশ এবং কেন্দ্রকে বক্তব্য জানাতে বলেছে হাইকোর্ট। পুরকায়স্থের আইনজীবীর বক্তব্য না শুনে হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছে নিম্ন আদালত। হেপাজতের জন্য দিল্লি পুলিশের দায়ের করা আবেদনে কারণ নির্দিষ্ট করে জানানো নেই। 

‘পিপলস ডেসপ্যাচ’-র চিঠিতে নিউজক্লিকের সাংবাদিকদের সহকর্মী বলে সম্বোধন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বুধবার নিউজক্লিক এবং পিপলস্‌ ডেসপ্যাচের সাংবাদিকদের উপর ভয়ঙ্কর নিপীড়ন নামিয়ে আনা হয়েছে। যে ভাবে নিউজক্লিকের সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক, কার্টুনিস্ট এবং সংস্থার সঙ্গে যুক্ত কমেডিয়ানদের নিগ্রহ করা হয়েছে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে লঙ্ঘন করে। একইসঙ্গে নিউজক্লিকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থ এবং সংস্থার শীর্ষ আধিকারিক অমিত চক্রবর্তীর গ্রেপ্তারিকেও কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। 

এই খোলা চিঠিতে সই করেছেন রাশিয়া, ব্রাজিল, ইউকে, আমেরিকা, কিউবা, জার্মানি, ভেনেজুয়েলা,  ইতালি সহ ৩০টি দেশের বিশিষ্টরা। সই রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার কমিউনিস্ট পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি সোলি মাপিলা, সিন ফিয়েনের সাংসদ ক্রিস হ্যাজার্ড, জার্মান সাংসদ সেভিম ড্যাগডেলেন, যুদ্ধবিরোধী গোষ্ঠী কোডপিঙ্কের জোডি ইভান্স প্রমুখ। 

এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবাদী ‘জ্যাকোবিন’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ভাস্কর সুঙ্কারা, মর্নিং স্টারের দুই সম্পাদক বেন চাকো এবং রজার ম্যাকেঞ্জি, কমেডিয়ান এবং ডেঞ্জারেস মাইন্ডের সাংবাদিক লি ক্যাম্প, উইকিলিক্‌স খ্যাত জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের ভাই গ্যাব্রিয়েল শিপটন প্রমুখ এই খোলা চিঠিতে সই করেছেন। 

বিশিষ্টরা জানাচ্ছেন, ‘নিউজক্লিক’-র মত প্রতিষ্ঠান গণতন্ত্রের স্বরকে জোরালো করে। সমাজের অবহেলিত এবং পিছিয়ে থাকা অংশের কন্ঠস্বর হয়ে উঠে প্রকৃত সামাজিক বদল ঘটানোর অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে নিউজক্লিক। দেশদ্রোহের অভিযোগ এনেও প্রতিবাদী স্বর বন্ধ করা যাচ্ছে না। দেশজুড়ে সাংবাদিক, প্রতিবাদীরা শামিল হয়েছেন। 

দেশের নানা প্রান্ত থেকেও নিউজক্লিকের সমর্থনে জোরালো আওয়াজ উঠতে শুরু করেছে। সিপিআই(এম) নেত্রী এবং  কেরালা সরকারের প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেকে শৈলজা নিউজক্লিক কান্ডে কেন্দ্রের সমালোচনা করে বলেছেন, যাঁরাই মোদী সরকারের সমালোচনা করেন, সাধারণ মানুষের সামনে সত্যিকে তুলে ধরার চেষ্টা করেন, তাঁদের উপরেই ফ্যাসিবাদী কায়দায় আক্রমণ চালায় কেন্দ্র। 

সিদ্ধার্থ বরদারাজন ‘দ্যা ওয়ার’ ওয়েবসাইটে প্রশ্ন তুলেছেন, গত ১০ বছরে বহু সংস্থা চীনের বিনিয়োগে পুষ্ট। সেই সমস্ত ক্ষেত্রেই কী তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে? নাকি কেবল নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে সরকারের এই তৎপরতা? 

প্রসঙ্গত, ইউটিউবার ধ্রুব রাঠি তাঁর প্রতিবেদনে তুলে ধরেছিলেন, পিএম কেয়ার্স তহবিলে কোটি কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে শাওমি, ওপো, ওয়ান প্লাসের মত চীনা সংস্থা। গৌতম আদানির শেয়ার কারচুপি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে ঘুরপথে বিদেশে টাকা দেশে পাঠানোর চক্রের চীন সংযোগের অভিযোগ উঠেছে। তা’হলে একইভাবে কী তদন্ত হবে, প্রশ্ন উঠেছে। 

নিউজক্লিকের উপর চলা হামলার প্রতিবাদে কলকাতা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পথে নেমেছেন সাংবাদিকরা। এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি দিয়েছে ১৬টি প্রেসক্লাব। 

নিউজক্লিকের তরফেও প্রেস বিবৃতি দিয়ে একাধিক বিষয় তুলে আনা হয়েছে। ডিজিটাল প্রতিষ্ঠানটি জানাচ্ছে, দিল্লি পুলিশের তরফে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি ঠিক কোন প্রতিবেদনে চীনের হয়ে সওয়াল করা হয়েছে। এফআইআরেও স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। 

এই ঘটনায় হাতিয়ার করা হয়েছে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক টাইমসের আগস্ট মাসের একটি প্রতিবেদনকে। নিউ ইয়র্ক টাইমস দাবি করেছে, মার্কিন উদ্যোগপতি নেভিল রয় সিংঘামের মাধ্যমে বিশ্বের বেশ কিছু প্রভাবশালী সংবাদ প্রতিষ্ঠানে চীনের সরকার লগ্নি করেছে। তার মাধ্যমে চীনপন্থী খবর প্রকাশের পথ তৈরি হয়েছে। এই ‘খবর’ গুলি থেকেই জানা গিয়েছে, পুরকায়স্থ এবং চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারায় মামলা হয়েছে। দেশদ্রোহের অভিযোগও আনা হয়ে থাকতে পারে। 

ঠিক কোন প্রতিবেদনে দেশদ্রোহী বক্তব্য ছড়ানো হয়েছে, চীনের প্রচারই বা হয়েছে কিভাবে জানতে চেয়েছিল নিউজক্লিক। প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ, দিল্লি পুলিশ একটি প্রতিবেদনও নির্দিষ্ট করতে পারেনি। হাইকোর্টে এবার সেই প্রশ্ন উঠবে।

একইসঙ্গে নিউজক্লিক জানিয়েছে, ২০২০ এবং ২০২১ সালে দিল্লি পুলিশের ইকোনমিক অফেন্স উইং এবং ইডি তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়েছিল। কিন্তু সেই জোড়া তদন্তে আপত্তিকর কিছুই উঠে আসেনি। 

ইতিমধ্যেই দিল্লি হাইকোর্টে পুরকায়স্থ এবং চক্রবর্তীর হয়ে সওয়াল করেছেন বিশিষ্ট আইনজীবী কপিল সিব্বল। তিনি আবেদন জানিয়েছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত এই এফআইআর খারিজ করা হোক। 

 

 

Comments :0

Login to leave a comment