ODISHA RAIL ACCIDENT

পাঁচ কামরায় তল্লাশি হয়নি,
‘উদ্ধার শেষ’ বলে দিল রেল

জাতীয় রাজ্য

odisha rail accident coromondal express bengali news

অপরাজিত বন্দ্যোপাধ্যায়: বাহানাগা 
 

৪৮ ঘণ্টা পার হলেও উদ্ধার কাজ পুরোপুরি শেষ করতে পারলো না রেল। যদিও রেলমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, ‘উদ্ধারের কাজ শেষ’। যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের দুটি বগির পাশাপাশি উলটো দিকে পড়ে থাকা করমণ্ডলের তিনটি এসি বগি তোলা যায়নি। উঁচু রেল লাইন থেকে প্রায় বাইশ ফুট নিচে নির্জলা নয়ানজুলিতে এদিনও পড়ে দুর্ঘটনা বিধ্বস্ত পাঁচটি বগি। 

করমণ্ডলের এসি ফার্স্ট ক্লাস, এসি-টু টেয়ার বি-৯ ও বি-৮ বগির ভিতরে যাত্রী না থাকলেও হাওড়াগামী যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের উলটে থাকা জেনারেল বগিতে এখনো রয়েছে মৃতদেহ। জেনারেল বগির পিছনের মহিলা ও বিশেষভাবে সক্ষমদের বগিটি ঠায় পড়ে।  বিশেষভাবে সক্ষমদের বগিতে তল্লাশি চালানো হলেও রবিবার বিকাল পর্যন্ত হাত দেওয়া হয়নি ওই জেনারেল বগিতে। উদ্ধারের বদলে রেলের এখন মুখ্য উদ্দেশ্য আপ লাইন দিয়ে বালেশ্বর দিকে ট্রেন চালানো। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব নিজেই সেই ‘অগ্রাধিকারের’ কথা বলেছেন। 

রেলের তরফে এদিন মৃতের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। শনিবারের ২৮৮ থেকে তা নেমে এসেছে ২৭৫-এ। অথচ অজস্র মানুষ ‘নিখোঁজ’। আদৌ সব মৃতদেহ গণনা করা হয়েছে কিনা, ময়নাতদন্ত করা হয়েছে কিনা, তা নিয়ে ঘোর সংশয় রয়েছে। 


পড়ে থাকা ষশবন্তপুর এক্সপ্রেসের জেনারেল বগি থেকে মারাত্মক দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে।  বাহানাগা লেভেল ক্রশিং কাছে আসলে পাওয়া যাচ্ছে সেই দুর্গন্ধ। ওই দুর্গন্ধের মধ্যেই রেল লাইনের কাজ করে যাচ্ছেন রেলের ঠিকা শ্রমিকরা। সাধারণ মানুষ ওই দুর্গন্ধ নিয়ে কথা বললেও কোনও সুরাহা হয়নি। 

রবিবার সকাল থেকে ওডিশা জেলা পুলিশের থেকে রেল লাইনের আশপাশে নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে রেল প্রোটেকশন ফোর্স (আরপিএফ)। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সঙ্গে রেলের বিভিন্ন ডিভিসন থেকে আনা হয়েছে প্রচুর আরপিএফ কর্মী।

সুরক্ষার নামে সকাল থেকে আরপিএফ কর্মীদের বাড়াবাড়িতে বীতশ্রদ্ধ স্থানীয় মানুষ। বাহানাগা বাজার থেকে বাড়ি ফিরতে থাকা মানুষজনকে বারেবারে পথ আটকাচ্ছে তারা। লম্বা লাঠি নিয়ে মাঝেমধ্যে চড়াও হচ্ছেন এলাকা বাসিন্দাদের ওপর। কাউকে রেল লাইন পার করতে দিচ্ছে না। স্থানীয় বাড়ির উঠোন আর বাহানাগার ইস্কন মন্দির দখল করে রেখেছে আরপিএফ কর্মীরা। সেখান থেকে নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে নিচ্ছেন তাঁরা। বাইরের কাউকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কিছু বললে স্থানীয়দের শাসানি শুনতে হচ্ছে। অথচ এই মানুষজনই দুর্ঘটনার রাতে উদ্ধার করেছিলেন শত শত মানুষকে। 

সকাল থেকে রেল আদা-জল খেয়ে নেমেছে রেল লাইন সারানোর কাজে। ভিন রাজ্য থেকে আনা হয়েছে দুটি আর্থ মুভারের সঙ্গে অনেকগুলি পে-লোডার। ভদ্রক থেকে বালেশ্বরের দিকে যাওয়ার আপ লাইনের কাজ এদিন সন্ধ্যায় শেষের পথে এসে ঠেকেছে। সেই সঙ্গে চলছে বালেশ্বর থেকে ভদ্রকের দিকে যাওয়ার ডাউন লাইন সারাইয়ের কাজ। প্রচুর ঠিকা  শ্রমিককে আনা হয়েছে। দিন-রাতের তিনটে শিফটে এক হাজার কর্মী প্রতি শিফটে  লাইন সারানোর কাজ করছেন। চামড়া পোড়া গরমের মধ্যে তাঁদের কাজ করতে হচ্ছে। ডাউন লাইনের ইলেকট্রিক লাইনের কাজ হয়ে গেলেও বিস্তর বাকি রেল ট্রাক বসানোর কাজ।


বাহানাগা রেল দুর্ঘটনাটি কীভাবে ঘটলো, তা জানতে রবিবার সকালে উড়িয়ে আনা হয়েছে কলকাতা, দিল্লি ও হায়দরাবাদে সরকারি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের। কলকাতার নিউটাউনের কেন্দ্রীয় ফরেনসিক ল্যাব (সিএফএসএল) থেকে এসেছেন দশ জনের একটি দল। অতিরিক্ত অধিকর্তা ড. পি পল্লবেশের নেতৃত্বে এসেছেন ওই দল। এসেছেন ন্যাশনাল ফরেনসিক ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন অধিকর্তা ড. আর কে সারিন। 

বাহানাগা সিগন্যাল কেবিনের নিচে  বসে দুর্ঘটনার তথ্যতলাশ চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ঠিক রাখতে এদিন রাতারাতি বাহানাগা বাজারে বসানো হলো মোবাইল টাওয়ার। 

এদিন রেলমন্ত্রী স্বয়ং সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন দুর্ঘটনার ‘মূল কারণ’ চিহ্নিত করা গেছে। সিগন্যালিং ব্যবস্থার ত্রুটি বা গাফিলতির দিকেই ইঙ্গিত করেছিলেন তিনি। কিন্তু সন্ধ্যায় হঠাৎই রেল বোর্ড সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেছে। 


রেল দুর্ঘটনায় মৃত ১৬৮ জনের দেহ এদিনও শনাক্ত করা যায়নি। শনিবার দুপুর থেকে বাহানাগা হাইস্কুলে রেখে দেওয়া সেই সব দেহকে রবিবার সকালে ভুবনেশ্বর এইমসে পাঠানো হয়েছে। সেখানে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। কেননা উদ্ধার করা দেহগুলো ক্ষতবিক্ষত। চেনা যাচ্ছে না। এদিকে, নিকট আত্মীয়দের সন্ধান না পেয়ে রবিবার বালেশ্বর ও বাহানাগাতে ছুটে আসতে দেখা যাচ্ছে পরিজনদের। বালেশ্বরের ফকির মোহন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দুর্ঘটনায় জখমরা বেশিরভাগ ভর্তি রয়েছে। সেখানে পরিজনদের সন্ধান না পেয়ে অনেকে ছুটছেন বাহানাগায়।

পরিজনদের এই ছুটে বেড়ানো রুখতে রবিবার   শনাক্ত না করা দেহ ও দেহাংশের ছবি তুলে তা বালেশ্বরে নসি বিজনেস পার্কে রাখা হয়েছে। সেখানে গিয়ে আত্মীয়-পরিজনরা খুঁজে বেড়াচ্ছেন নিখোঁজ যাত্রীদের।  
বালেশ্বর হাসপাতালে ভর্তি কিছু পশ্চিমবাংলার বাসিন্দাদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের বাসিন্দা সন্দীপ মাহাতো ও তাঁর স্ত্রী রূপালী মাহাতোকে অ্যাম্বুলেন্সে সকাল সকাল ফিরতে দেখা গেল কলকাতায়। বেঙ্গালুরুতে স্ত্রী রূপালী মাহাতোর নার্সিং কোর্সের সার্টিফিকেট নিয়ে যশবন্তপুর এক্সপ্রেসে ফিরছিলেন সন্দীপ মাহাতো। দুর্ঘটনায় জখম ওই দম্পতি প্রথম থেকেই ফকির মোহন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।

 হাসপাতালে মোবাইল হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন নিখোঁজ যাত্রীদের অনেক আত্মীয়। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে খাদ্য, খাবার দেওয়ার অফুরন্ত ব্যবস্থা থাকলেও উৎকণ্ঠা কমানোর কোনও উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।


 

Comments :0

Login to leave a comment