onion price hike

একলাফেই পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজি, রপ্তানি দর ৬৭’তে বাঁধলো কেন্দ্র

জাতীয়

উর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের দামে নাজেহাল মানুষ। এক সপ্তাহের মধ্যে তার দাম ১৫টাকা কেজি থেকে বেড়ে ৮০ টাকা কেজিতে পৌঁছে গেছে। দাম বাড়লেও কৃষকের বাড়তি দাম না মেলায় ক্ষোভ বেড়েছে। মজুতদারেরাই পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে ফায়দা তুলছে বলছে বলে জানিয়েছে বহু কৃষক সংগঠন। এতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে বিজেপি জোট সরকারি শাসিত বড় পেয়াজ উৎপাদনকারী রাজ্য মহারাষ্ট্র।
দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন কম হওয়ায় গত আগস্টে থেকে বাজারে পেঁয়াজের মজুতদারি বাড়তে থাকে। সেই সময় অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের জোগান অব্যাহত রাখতে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে ৪০ শতাংশ হারে রপ্তানি শুল্ক চাপায় কেন্দ্র।এতেও পেঁয়াজের দামে নিয়ন্ত্রণ আনা যায়নি। উলটে কৃষকের থেকে কম দামে পেঁয়াজ কিনে তার মজুতদারি বেড়েছে। ফলে বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহার করে পেঁয়াজের রপ্তানি অব্যাহত রাখার দাবি জানায় কৃষকরা। কৃষকদের দাবি মেনে অবশেষে পেঁয়াজের রপ্তানি দর বেধে দিল মোদী সরকার। শনিবার রাতে কেন্দ্রের ভোগ্যপণ্য বিষয়ক মন্ত্রক বিজ্ঞপ্তি জারি করে পেঁয়াজের রপ্তানি দর ৬৭ টাকা কেজি বেঁধে দিয়েছে। তবে এতে বাজারে পেঁয়াজের দাম কমার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছেনা। পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে। এখন বাজারে ৮০ টাকা কেজি দরে চলে গেছে পেঁয়াজ। সেই পেঁয়াজ রপ্তানি হবে ৬৭টাকা দরে। এদিকে মজুতদারি উদ্ধারে সরকারি কোন উদ্যোগ না থাকায় দামের এই উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মহারাষ্ট্রের নাসিকে রয়েছে পেঁয়াজের বড় বাজার। দেশে সবচেয়ে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়ে থাকে মহারাষ্ট্রে। কম বৃষ্টিপাতের জন্য চলতি বছরের আগস্ট মাস থেকেই পেঁয়াজের উৎপাদন কমতে থাকায় নাসিকের বাজারে কৃষকদের পেঁয়াজের সরবরাহ কমতে থাকে। বাজারে পেঁয়াজের জোগান অব্যাহত রাখতে রপ্তানিতে রাশ টানতে কেন্দ্র পেঁয়াজের রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ হারে রপ্তানি শুল্ক চাপায়। ভারত থেকে মধ্যপ্রাচ্য, শ্রীলঙ্কা,বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াতে পেঁয়াজ রপ্তানি হয়ে থাকে।এদিকে পেঁয়াজের রপ্তানি শুল্ক চাপানোতে রপ্তানি কমে যাওয়ায় পেঁয়াজের ভালো  দাম না মেলায়  কৃষকরা পেঁয়াজ  নিলাম ও বিক্রি বন্ধ রেখে তিন দিনের ধর্মঘট পালন  করে। তারা রপ্তানিতে বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানান। কৃষকদের ক্ষোভ সামাল দিতে কেন্দ্রীয় ভোগ্যপণ্য বিষয়ক মন্ত্রী পিযূষ গোয়েল ২ হাজার ৪১০ টাকা টন দরে কৃষকদের থেকে পেঁয়াজ কিনে নেওয়ার আশ্বাস দেন এবং রপ্তানি শুল্ক বৃদ্ধির হার বহাল রাখেন।কিন্তু তিন মাস আগে থেকে পেঁয়াজের দাম বাড়ার আভাস পাওয়া গিয়েছিল। তবে  কেন্দ্রের শুল্ক বাড়ানোর টোটকায়  দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়নি। কৃষকদেরও পেঁয়াজের ভালো দাম মেলেনি। ফলে এবারে বর্ধিত শুল্ক হার প্রত্যাহার করে পেঁয়াজের রপ্তানি দর বেঁধে দেওয়া হলো। বাজারে মজুতদার কালোবাজারির দাপট অব্যাহত রেখে দাম নিয়ন্ত্রণ যে সম্ভব নয় তা স্পষ্ট হয়েছে মোদী সরকারের দাম নিয়ে দিশাহারা অবস্থায়। বিরোধীরা জানান দাম নিয়ন্ত্রণ নয়, কৃষি কর্পোরেটদের মুনাফা পাইয়ে দেওয়া লক্ষ্য। তাই বছরের মধ্যে বারে বারে কোনও না কোনও খাদ্য পণ্যের দাম বেড়ে চলেছে। আর মুনাফা বেড়ে চলেছে কর্পোরেট ও মজুতদারের।
এদিকে মহারাষ্ট্রে নাসিক ছাড়াও পেঁয়াজের বেশি উৎপাদন হয়ে থাকে পানাজি, পুনে, ধুলে, আহমেদনগর, জলগাঁও এলাকায়। পানিজের সবজি ব্যবসায়ী জানালেন, আচমকা দেখলাম পেঁয়াজের দাম বেড়ে ৭০ টাকা কেজি হয়ে গেল। দুই দিন আগেও পেঁয়াজের দাম ছিল ২০ টাকা কেজি। ঠিক টমেটোর দাম যেভাবে আচমকা বেড়েছে ঠিক একইভাবে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাচ্ছে। ভাইজাগের পাইকারি সবজি বিক্রেতা জানান, হঠাৎ করে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। যেখানে ভাইজাগ শহরে প্রতিদিন ৬০ টন পেঁয়াজ বিক্রি হয়। সেখানে দৈনিক পেঁয়াজ সরবরাহ হচ্ছে ৪০ টন। জোগানে এই ঘাটতিতে দাম বাড়ছে।   
এদিকে মোদী সরকার দেশে মুলবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যর্থ বলে জানিয়েছে কংগ্রেস। দলের সভাপতি সাংসদ মল্লিকার্জুন খাড়গে এদিন বলেন, মোদী সরকার ক্ষমতায় এসেই জানিয়েছিল তারা দেশে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু দেখা গেছে, মোদীর আমলেই বেপরোয়াভাবেই খাদ্যপণ্য থেকে সমস্ত কিছুর দাম বেড়ে চলেছে।এদিন বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে ৮০টাকা কেজি। মজুতদারি কালো বাজারি জন্য দাম বেড়ে চলেছে পেঁয়াজের। কিন্তু  তা নিয়ন্ত্রণ করার কোন সদিচ্ছাই নেই মোদী সরকারের। তিনি বলেন, যখনই এভাবে অস্বাভাবিক দাম বাড়ে তা নিয়ে নিছক মশকরা করে তার জবাব এড়িয়ে যান নেতারা। যেমন মুল্যবৃদ্ধি নিয়ে মোদী বলেছেন কিসের মূল্যবৃদ্ধি? আমি দেখিনি তো। মোদী আরও দাবি করেন বিশ্বে অন্য দেশে যে হারে মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে, সেখানে ভারতে সেরকম মূল্যবৃদ্ধি অনেক কম। আবার দেখা গেল পেঁয়াজের দাম বাড়ায় কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছিলেন আমি পেঁয়াজ খাই না। আমার পরিবারের কেউ পেঁয়াজ খায় না। এরপরেই তাঁর সাফ কথা পেঁয়াজ না খেলে কিছু এসে যায় না। একই ভাবে মহারাষ্ট্রের বিজেপি মন্ত্রী দাদা ভুসে বলেছেন, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে তো কি হয়েছে? যখন দাম কমবে তখন পেঁয়াজ খাবেন। এখন পেঁয়াজ খাবার দরকার নেই। খাড়গে বলেন, শুধু পেঁয়াজ নয় যখনই কোনও কিছুর দাম বাড়ে মন্ত্রীরা তা নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে উড়িয়ে দেন। খাড়গে বলেন, মোদী সরকার মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে মানুষ মোদী সরকারকে এর উপযুক্ত জবাব দেবেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment