মীর আফরোজ জামান - ঢাকা
যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়া বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার পাঁচথুবি ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলামের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে গোমতী বেরিবাঁধের গোমতী বিলাস এলাকা থেকে তৌহিদুলকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত তৌহিদুলের ভাই আবুল কালাম আজাদ টিপু দাবি করেন, বৃহস্পতিবার রাতে তৌহিদুলকে যৌথবাহিনীর পোশাকে ও সিভিল পোশাকে কয়েকজন ব্যক্তি তুলে নিয়ে যায়। তার শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে।
পরিবারের সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাত ২ টো নাগাদ পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক তৌহিদুলকে যৌথবাহিনীর সদস্য পরিচয়ে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। পর দিন সকালে পুলিশ ফোন করে জানায়, তৌহিদুল আহত অবস্থায় গোমতী নদীর পাড়ে পড়ে আছে। সেখান থেকে পুলিশ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত যুবক চট্টগ্রাম কর্মরত ছিলেন। তৌহিদুল ইসলামের বাবা মারা যান, গত ২৬ জানুয়ারি। একজনের মৃত্যু শোকের মধ্যেই তৌহিদুলের দেহ উদ্ধারের ঘটনায়
তৌহিদুল ইসলামের ভাই আবুল কালাম আজাদ টিপু বলেন, " বৃহস্পতিবার রাতে যৌথবাহিনীর পোশাকে ও সিভিল পোশাকে কয়েকজন ব্যক্তি আমার ভাইকে ধরে নিয়ে যায়। শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটায় যৌথবাহিনী আমার ভাইকেসহ আরেকজনকে নিয়ে বাড়িতে এসে এক ঘণ্টা যাবৎ বাড়ির বিভিন্ন ঘরে তল্লাশি চালায়। তল্লাশির পরে কোনো অস্ত্র না পেয়ে আমার ভাইকে আবারও তারা নিয়ে যায়।
দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ আমাদেরকে ফোন করে বলে গোমতী বিলাসের কাছে আমার ভাই পড়ে আছে আহত অবস্থায়। আপনারা হাসপাতালে আসেন আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা প্রথমে কুমিল্লা সদর জেনারেল হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাই। চিকিৎসক তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে রেফার করে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে আনার পর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।"
কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ মহিনুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সকাল এগারোটায় আমরা জানতে পারি গোমতী নদীর পাড়ে গোমতী বিলাসে একজন আহত অবস্থায় আছে। পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
কুমিল্লায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে বেসামরিক ব্যক্তির মৃত্যুবরণ প্রসঙ্গে আইএসপিআর জানিয়েছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে যৌথবাহিনীর অভিযানে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলা হতে আটককৃত মো: তৌহিদুর রহমান (৪০), একই দিন সাড়ে ১২টা নাগাদ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক ঘটনাটি তদন্তে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে, উক্ত সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডারকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়াও, মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য একটি উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সেনা আইন অনুযায়ী যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মোহাম্মদ ইউনূসের দপ্তর থেকে একটি বিবৃতি পাঠানো হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার ভোরে নিরাপত্তা বাহিনী তৌহিদুল ইসলাম নামে এক যুবককে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ গভীর রাতে কুমিল্লার হাসপাতালে নিয়ে আসে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মৃত্যুর জরুরি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে আইজি যেকোনো ধরণের হেফাজতে নির্যাতন ও হত্যার নিন্দা করেন। মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এই সরকারের একটি মূল লক্ষ্য, যার মধ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় কিছু অধিকার কর্মীও রয়েছেন। এদিকে যৌথ বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুবরণ বিষয়টি নিয়ে প্রতিটি সেক্টরে এখন আলোচনা চলছে বইছে নিন্দার ঝড়।
Comments :0