কেন্দ্রীয় বাজেটকে ‘জনতার প্রতি নিষ্ঠুর বিশ্বাসঘাতকতা‘ আখ্যা দিল সিপিআই(এম)। কেন্দ্রের মোদী সরকার এবং বাজেটের প্রতিবাদে জনতাকে সংগঠিত করার ডাক দিয়েছে পলিট ব্যুরো।
শনিবার পলিট ব্যুরো বলেছে, দেশের অর্থনীতিতে সমস্যার মূলে রয়েছে বিভিন্ন উৎপাদন ক্ষেত্রে চাহিদার অভাব। ব্যাপক বেকারি এবং মজুরি হ্রাসের ফলে জনতার বেশিরভাগ অংশের ক্রয়ক্ষমতা নেই। সেদিকে নজর না দিয়ে উচ্চবিত্ত অল্প অংশের করে ছাড় দিয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে চেয়েছে।
অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকেই বোঝা গিয়েছে ভারতীয় শ্রমশক্তি কঠিন অবস্থায় রয়েছে, গত পাঁচ বছরে আয় কমেছে। অথচ এই বাজেটে সরকারি ব্যয় কমানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বড়লোককে ছাড় দেওয়ার এই নীতিতে ভারতে বাড়বে বৈষম্য।
পলিট ব্যুরো বলেছে, ধনীদের ওপর কর বাড়ানোর সুযোগ ছিল। সরকারি বিনিয়োগ বাড়িয়ে কর্মহীনতা কমানো যেত। ন্যূনতম মজুরিরও ব্যবস্থা করা যেত। কিন্তু ঠিক তার উলটো করা হয়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে গিয়ে ধনীদের হাতে বাড়তি সম্পদ পুঞ্জীভূত করার ব্যবস্থা হয়েছে।
বিমা ক্ষেত্রে একশো শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে বাজেট। পলিট ব্যুরো বলেছে, বিমায় এই প্রস্তাবের পাশাপাশি বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। ফলে এই বাজেট ধনীদের তৈরি ধনীদের জন্য।
পলিট ব্যুরো বলেছে, ২০২০-২১ থেকে মোট জাতীয় উৎপাদনের শতাংশে সরকারি খরচ কমছে। ফের তা হতে চলেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে এই হার ছিল ১৪.৬ শতাংশ। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে হবে ১৪.২ শতাংশ। প্রতিশ্রুতির তুলনায় প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা কম খরচ করেছে সরকার চলতি অর্থবর্ষে।
পলিট ব্যুরো বলেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে রাজ্যের জন্য অর্থের ক্ষেত্রে ১ লক্ষ ১২ হাজার কোটি টাকা কম পাঠিয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় সহায়তাপ্রাপ্ত প্রকল্পে খরচ ৯০ হাজার টাকা কমিয়েছে। অর্থ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী রাজ্যকে অর্থ ২২ হাজার কোটি টাকা কম দিয়েছে। বাজেটে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ফের লঘু করা হয়েছে। ‘২৪-‘২৫ অর্থবর্ষে মূলধনী ব্যয়ও প্রতিশ্রুতির চেয়ে ৯৩ হাজার কোটি টাকা কম।
পলিট ব্যুরো মনে করিয়েছে যে খাদ্য ভরতুকি, কৃষি, শিক্ষা, গ্রামোন্নয়নের মতো ক্ষেত্রগুলিতে খরচ বরাদ্দের তুলনায় কম। প্রকৃত মূল্যে বরাদ্দ স্থির হয়ে রয়েছে। মূল্যবৃদ্ধি এবং জিডিপি’র অংশ হিসেবে আনলে দেখা যাবে সরকারি খরচ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।
পলিট ব্যুরো বলেছে, খাদ্যের ভরতুকিতে গতবার ২.০৫ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু সংশোধিত অনুমান দেখাচ্ছে ৭ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা কম খরচ হবে। আর এই বাজেটে বরাদ্দ হয়েছে ২.০৩ লক্ষ কোটি টাকা, যা গতবারের বরাদ্দের চেয়ে কম। শিক্ষার ক্ষেত্রেও ১১ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা কম খরচ হচ্ছে বরাদ্দের তুলনায়। আর এবারের বাজেটে গতবারের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় মাত্র ১৪ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা বেড়েছে বরাদ্দ। টাকার অঙ্কেই বৃদ্ধি মাত্র ২.৩ শতাংশ। মূল্যবৃদ্ধি হিসেবে ধরলে কোনও বৃদ্ধিই হয়নি। পলিট ব্যুরো দেখিয়েছে যে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও একই হাল।
পলিট ব্যুরো বলেছে, মনরেগায় সরকারের বরাদ্দ দ্বিচারিতাকে স্পষ্ট করেছে। গ্রামের গরিবের এই অধিকার তার জীবনরেখা। কাজের চাহিদা বাড়া সত্ত্বেও বরাদ্দ ৮৬ হাজার কোটি টাকায় আটকে রাখা হলো। গ্রামের গরিবের ওপর নিষ্ঠুর আঘাতই কেবল নয়, একশো দিন কাজের অধিকারের ওপর বেপরোয়া আক্রমণ। অগ্রাহ্য করা হলে কৃষকের ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য পাওয়ার অধিকারকে। কৃষি সঙ্কট এবং কৃষক আত্মহত্যার সঙ্গে যুক্ত এই বিষয়টিই।
পলিট ব্যুরো বলেছে, তপশিলি জাতির উন্নয়নে ২৭ হাজার কোটি টাকা কম খরচ হয়েছে। আদিবাসী উন্নয়নে ছাঁটাই হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। জনসংখ্যায় এই অংশগুলির হারের তুলনায় গুরুতর মাত্রায় কম খরচের হার। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে তপশিলি জাতির জন্য মোট খরচের মাত্র ৩.৪ শতাংশ এবং আদিবাসীদের জন্য ২.৬ শতাংশ খরচ করা হয়েছে।
মধ্যবিত্তদের কর ছাড় প্রসঙ্গে পলিট ব্যুরো বলেছে, ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর ছাড় নিয়ে বড় দাবি করা হচ্ছে। ব্যক্তিগত আয়করে এই পরিবর্তন আসলে মধ্যবিত্তকে অল্পই সুবিধা দেবে। যারা সম্পদশালী, নতুন আয়কর কাঠামোয় সুবিধা হবে তাদেরই। মুখ্যত তাদের জন্য সরকার ১ লক্ষ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ে ছাড় দিয়েছে।
পলিট ব্যুরো বলেছে, আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো যারা অনেক বেশি আয় করে তাদের করের হার বাড়ানো হলো না। কেন্দ্রীয় বাজেট স্পষ্ট করেছে ধনী এবং কর্পোরেট ক্ষেত্রের স্বার্থরক্ষায় এই সরকার দায়বদ্ধ। অর্থনীতির শ্লথতা মোকাবিলায় কার্যকরী কোনও নীতি নেওয়া হয়নি। সঙ্কটের আয়তন বা তার ধরন, কোনোটিই অর্থমন্ত্রীর চোখে পড়েছে বলে মনে হয় না। অর্থনৈতিক সমীক্ষাই দেখিয়েছে ভারতে মজুরির হার মহামারীর আগের সময়ের তুলনায় কম। বৃদ্ধিও কমে যাচ্ছে চাহিদার অভাবের কারণে। অসংখ্য নজির রয়েছে যা থেকে স্পষ্ট যে ব্যয় সঙ্কোচন বা ধনীদের করছাড়ে বেসরকারি কর্পোরেট বা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ‘অ্যানিম্যাল স্পিরিট’ উদ্দাম হয়ে ওঠে না। বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতেও এই নীতি সহায়ক হয় না। এই বাজেট সেই বিফল নীতিকেই আরেকটি কিস্তিতে হাজির করল।
পার্টির সব স্তরের কাছে পলিট ব্যুরোর আহ্বান, মোদী সরকার এবং জনবিরোধী বাজেটের বিরুদ্ধে জনতাকে সংগঠিত করতে হবে।
Budget 2025-26: Polit Bureau
বাজেটের প্রতিবাদে জনতাকে সংগঠিত করার ডাক পলিট ব্যুরোর
×
Comments :0