PEOPLES MARXISM

আলোচনায় ‘জনগণের মার্কসবাদ’, দেশের ইতিবাচক ঐতিহ্যে গুরুত্বের আহ্বান

রাজ্য

শনিবার ইরান সোসাইটিতে আলোচনা করছেন অদ্যাপক শোভনলাল দত্তগুপ্ত। রয়েছেন হাসিম আবদুল হালিম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ফুয়াদ হালিম।

নিজের দেশের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির ইতিবাচক দিকের সঙ্গে মার্কসবাদের মেলবন্ধন করা প্রয়োজন। মার্কসবাদকে জনগণের কাছে পৌঁছানোর জন্যই এই কাজ দরকার। এখানে ধর্মেরও ভূমিকা আছে। 
‘মার্কসবাদ ও ধর্ম’ শীর্ষক আলোচনায় এই পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ অধ্যাপক শোভনলাল দত্তগুপ্ত। তিনি বলেছেন, ‘‘চারদিকে ধর্মের নামে অধর্মের যে আয়োজন চলছে তার মোকাবিলা করতে এই চিন্তা প্রয়োজনীয়।’’
শনিবার ‘জনগণের মার্কসবাদ’ শীর্ষক দু’দিনের মতবিনিময় কর্মসূচিতে শুরুর ভাষণ দিয়েছেন তিনি। হাসিম আবদুল হালিম ফাউন্ডেশন এই কর্মসূচির আয়োজন করেছে ইরান সোসাইটিতে। 
এদিনই আরও তিনটি আলোচনাসভা হয়েছে। ‘মার্কসবাদী দৃষ্ঠিভঙ্গিতে জাত সমস্যা’ শীর্ষক আলোচনা করেছেন অধ্যাপক দেবেশ দাস, ‘রাষ্ট্রচিন্তক: ফিরে দেখা’ শীর্ষক আলোচনা করেন অধ্যাপক আবদুস সামাদ এবং ‘মার্কসবাদ ও জাতীয়তাবাদ’ শীর্ষক আলোচনা করেছেন অধ্যাপক দেবনারায়ণ মোদক।
শোভনলাল দত্তগুপ্ত বলিভারিয়ান বিপ্লবের ধারণাকে উদাহরণ হিসেবে রেখেছেন। লাতিন আমেরিকায় সাম্রাজ্যবাদের মদতে উগ্র দক্ষিণপন্থী শক্তিগুলিকে প্রতিরোধের লড়াই জোরালো হয়েছে। জনতার সমর্থন পেয়েছে। 
দত্তগুপ্ত বলেছেন, ‘‘বলেভারিয়ান বিপ্লবের ধারণা নিয়ে যাঁরা চলছেন তাঁরা কিন্তু মার্কসবাদকে খারিজ করছেন না। বরং, নিজের দেশের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে তার মেলবন্ধন করার চেষ্টা করছেন। যেভাবে কথা নিয়ে জনগণের কাছে মার্কসবাদকে নিয়ে দ্রুত পৌঁছানো যায়, সেই চেষ্টা করছেন।’’ 
এই প্রসঙ্গেই লেনিনের সঙ্গে ‘ প্রোলেতকাল্ট’ সমর্থক বুদ্ধিজীবীর বিতর্ক মনে করিয়ে দিয়েছেন। অধ্যাপক দত্তগুপ্ত বলেছেন, ‘‘প্রোলেতকাল্ট সমর্থকরা বলছিলেন বিপ্লবের পর রাষ্ট্রক্ষমতায় প্রোলেতারিয়েত। ফলে বিশুদ্ধ প্রোলেতারিয়েত সংস্কৃতি থাকবে কেবল। লেনিন বলেছিলেন যে ‘বিশুদ্ধ প্রোলেতারিয়েত সংস্কৃতি’ বলে কিছু হয় না। সভ্যতার বিভিন্ন পর্বের শ্রেষ্ঠ এবং ইতিবাচক উপাদানগুলি নিয়েই প্রোলেতারিয়েতের সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। এই ভাবনা কার্ল মার্কসেরও।’’ 
দত্তগুপ্ত সতর্ক করেছেন মার্কস এবং মার্কসবাদ, এই দুয়ের ফারাক সম্পর্কেও। তিনি বলেছেন, ‘‘১৮৪৩ সালের নিবন্ধে মার্কস যা বলেছিলেন ধর্ম প্রসঙ্গে, আজ কেবল সেই বক্তব্যকে হাতিয়ার করলে বিজ্ঞানকে অস্বীকার করা হয়। কারণ তার পর থেকে সমাজে সভ্যতায় বহু পরিবর্তন হয়েছে। মার্কসবাদীরা তার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন চিন্তায়। যেমন আন্তোনিও গ্রামসি ব্যাখ্যা করেছিলেন।’’ 
হেগেলের রাষ্ট্রতত্ত্বের সমালোচনায় মার্কস ১৮৪৩ সালে ধর্মকে ব্যখ্যা করেছিলেন। দত্তগুপ্ত বলেছেন, ‘‘যে মানুষ নিজেকে অসহায় মনে করে সেই নিপীড়িত মানুষের দীর্ঘশ্বাস বলেছিলেন ধর্মকে। বলেছিলেন এই প্রসঙ্গেই যে ধর্ম হচ্ছে আফিম। আবার গ্রামসি দেখিয়েছিলেন যে ধর্মবিশ্বাস হচ্ছে আপাত সত্য। তা থেকে প্রকৃত সত্যে পৌঁছানোর কাজ মার্কসবাদীদের।’’
ভারতের সঙ্গে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিতও ব্যাখ্যা করেন তিনি। হিন্দু, বৌদ্ধ এবং ইসলাম ধর্মের প্রসঙ্গও ব্যাখ্যা করেছেন অধ্যাপক দত্তগুপ্ত। মনে করিয়েছেন যে আরব দুনিয়ায় উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, দেশে দেশে কমিউনিস্ট পার্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ হতে থাকে এই দেশগুলিতে। ইসলাম এবং খ্রীস্টান কট্টর ধর্মীয় অংশ সম্মেলন করে মার্কসবাদকে শত্রু ঘোষণা করেছিল লেবাননে ১৯৫৪’র কনভেনশনে।

Comments :0

Login to leave a comment