চিন্ময় কর- মেদিনীপুর
মেদিনীপুর মেডিক্যালে ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান থেকে কেনা স্যালাইনে ছত্রাক। অভিযোগ, রোগীর পরিবারকে বিক্রি করা হয় এই স্যালাইন।
প্রসূতি মৃত্যু, জাল স্যালাইন ব্যবহারে তোলপাড় গোটা রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসকদের দায়ী করে ১২ জনকে সাসপেন্ডও করেছেন। অথচ নিষিদ্ধ স্যালাইন কিভাবে সরবরাহ হচ্ছে তার কোনও ব্যাখ্যা প্রশাসন দেয়নি।
গত বৃহস্পতিবার এক সঙ্গে প্রায় ৩৯ জন অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনায় মেদিনীপুর মেডিক্যালে হাসপাতালে জাল স্যালাইন প্রয়োগে। তাদের মধ্যে মামনি রুইদাস নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বৃহস্পতিবার রোগীর পরিবারের অভিযোগ, ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে কেনা স্যালাইনে ছত্রাক পাওয়া গিয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে বিক্ষোভ দেখান ছাত্র, যুব, মহিলারা। থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে রোগীর পরিবার।
লিখিত অভিযোগ করেছেন বিভাস দলুই।
অভিযোগপত্রে তিনি বলেছেন যে তাঁর বোন সুদীপা দলুইকে ১৩ জানুয়ারি ভর্তি করা হয়। চিকিৎসক স্নেহাশিস চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে। তিনি অভিযোগপত্রে লিখেছেন, তিনি ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান থেকে স্যালাইন কিনে আনতে বলেন। আমি কিনতে গেলে আমাকে ছত্রাক যুক্ত স্যালাইন দেয়। ডাক্তার বাবু তা ফেরত দিতে বলেন। আমি ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকানে ফেরত দিতে গেলে দোকানদার ফেরত দেয়নি। উপরন্তু আমাকে ধমকায়।’’
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যায় সেপটিক শকেই মামনি রুইদাসের মৃত্যু হয়। সেপটিক শকেই ২০ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে গত ৮ মাসে কেবল এই মেদিনীপুর মেডিক্যালে। আরও জানা গেছে হাসপাতালে চলছে তোলাবাজি। রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক জেনেও টাকা আদায় করা হয়। এমন বিস্ফোরক অভিযোগ সিআইডি দলের কাছে তুলে ধরেছেন মৃত প্রসূতি মামনি রুইদাসের স্বামী দেবাশিস রুইদাস। তিনি ক্ষোভ জানিয়ে অভিযোগ করেছেন হাসপাতালের পরিষেবা পেতে তাঁকে প্রায় তিন হাজার টাকা দিতে হয়েছে। মাতৃমা-তে সিন্ডিকেট বাহিনীর দৌরাত্ম্য। গত শুক্রবার মৃত্যু হয়েছে মামনি রুইদাসের। গত সোমবার থেকে অসুস্থ শিশুকে ভর্তি করিয়ে নিজে মেদিনীপুর মেডিক্যালে মাতৃমা ভবনে রয়েছেন। যদিও এদিন তাঁর শিশু পুত্রকে ছেড়ে দিয়েছে হাসপাতাল। ছেলেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে ক্ষোভ উগরে দেন মিডিয়ার সামনে। বলেন, আমাকে ডেকে ছিল সিআইডি’র সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে সিআইডি’র উপর আস্থা নেই, সঠিক বিচার পাবে বলে মনে করছেন না। তিনি হাসপাতালের মাতৃমা ভবনের সামনে দাঁড়িয়েই ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, ‘‘কখন মারা গিয়েছেন স্ত্রী, তাও জানতে পারেননি। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সঙ্গে পরিবারের লোকজনের সাক্ষাতের নির্দিষ্ট সময়ে যেতেই জানতে পারলেন স্ত্রী মারা গিয়েছে। ভুল চিকিৎসা নাকি বিষাক্ত স্যালাইন, তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুর দায় কার, এই প্রশ্নই এখন ভাবাচ্ছে মৃত প্রসূতি মামণি রুইদাসের স্বামী দেবাশিস রুইদাসকে।
ছাত্র যুব মহিলাদের বিক্ষোভ।
এদিন চিকিৎসকদের সাসপেন্ড করার প্রতিবাদে ধিক্কার জানালেন বহু চিকিৎসক সহ সাধারণ মানুষ। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মেদিনীপুর মেডিকেলে এমএসভিপি, সুপার, ওয়ার্ড মাস্টার দপ্তর খুলে গেল। এই দপ্তরগুলো গত ৮দিন বন্ধ ছিল। ছাত্র যুব মহিলারা এমএসভিপিকে গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে। বিশাল পুলিশ বাহিনী দপ্তরের গেট আটকিয়ে রাখে। পুলিশের বাধা সরিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্র যুব মহিলারা দপ্তরের ভিতরে গিয়ে দখল নেয়। তখন দপ্তরে ডেপুটি সুপার পবিত্র মন্ডল সহ সহকারি ওয়ার্ড মাস্টার সহ অনেক আধিকারিক ছিলেন। তারা দপ্তর ছেড়ে পালাতে গেলে দপ্তরের মধ্যে ঘিরে রেখেই চলে বিক্ষোভ। গত বৃহস্পতিবার থেকে দপ্তরে না থেকে গা ঢাকা দিয়ে জাল ওষুধ কারবারীদের আড়াল করার অভিযোগ তুলে তার কৈফিয়ত চান বিক্ষোভ কারীরা। তুমুল বিক্ষোভ চলে ক্যাম্পাসে। পুলিশ এসে আধিকারিকদের উদ্ধার করে সরিয়ে নিয়ে চলে যান।
Comments :0