‘‘আমরা আমাদের বর্তমান ব্যাচের পড়ুয়াদের জন্য প্লেসমেন্ট জোগাড় করতে পারছি না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তনী হিসেবে আপনাদের কাছে অনুরোধ, আপনারা নিজেদের যোগাযোগ ব্যবহার করে নিজের জুনিয়রদের প্লেসমেন্টের উদ্যোগ নিন।’’
দেশের প্রথম সারির ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বিড়লা ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স (পিলানি) বা বিটস্ পিলানির তরফে প্রেস বিবৃতি দিয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তনীদের কাছে এমনই আবেদন জানানো হয়েছে। প্রেস বিবৃতিতে বিটস্ কর্তপক্ষ বলেছেন, ‘‘আন্তর্জাতিক বাজারে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তারফলে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ছোট থেকে বড় বিভিন্ন সংস্থা ব্যয় সঙ্কোচন শুরু করেছে। এর ফলে নতুন চাকরি তৈরি হচ্ছে না। তার প্রভাব এসে পড়ছে ক্যাম্পাসিংয়ে।’’
কেবলমাত্র বিটস্ পিলানি নয়, আইআইএম আমেদাবাদের তরফেও পড়ুয়াদের ক্যাম্পাসিং এবং প্লেসমেন্টের জন্য প্রাক্তনীদের সাহায্য চাওয়া হয়েছে। একই পথে হেঁটেছে আইআইএম লক্ষ্ণৌও। প্রতিষ্ঠানের তরফে বিভিন্ন ব্যাচের প্রাক্তনীদের একত্রিত করতে হোয়াটস্যাপ গ্রুপও খোলা হয়েছে।
আইআইএম লক্ষ্ণৌ জানিয়েছে, ‘‘আমাদের বর্তমান ব্যাচের ৭২জন মেধাবী পড়ুয়া কর্মসংস্থানের খোঁজ চালাচ্ছেন। তাঁদের কর্মসংস্থানের জন্য ২০১১ সালের ব্যাচের প্রাক্তনীদের সাহায্য চাওয়া হয়েছে।’’
বিটস্ পিলানির তরফে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘২০২২ সালের গোড়া থেকে আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ৪ লক্ষের বেশি কর্মচারী কাজ হারিয়েছেন। বিশ্ব অর্থনীতি কয়েক দশকে এমন শৈত্যের মুখোমুখি হয়নি। এই পরিস্থিতি সত্ত্বেও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে আমাদের ভারতীয় ক্যাম্পাসগুলির ৮৯.২শতাংশ পড়ুয়া প্লেসমেন্ট পেয়েছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে পরিস্থিত প্রতিকূল হয়েছে। আমাদের প্লেসমেন্ট টিম চেষ্টার কোনও খামতি না রাখলেও, আমরা প্রাক্তনীদের কাছে অনুরোধ করছি আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।’’
বিটস্ পিলানির উপাচার্য ভি রামগোপাল রাও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাকে বলেছেন, ‘‘বিটস্ পিলানির ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ প্লেসমেন্ট না হওয়াটাই বিরল ঘটনা। এই বছর সেটাই ঘটেছে। তাই আমাদের প্রতিষ্ঠানের ৩ হাজার প্রাক্তনীর কাছে সাহায্য চাওয়া হয়েছে। তাঁরা প্রায় প্রত্যেকেই কোনও না কোনও প্রতিষ্ঠানের সিইও। সেই নোটিশটি ভাইরাল হয়েছে।’’
আইআইএম, বিটস্ পিলানির পাশাপাশি আইআইটি’র তরফেও একই পথে হাঁটার ইঙ্গিত মিলেছে। আইআইটি মান্ডি’র এক আধিকারিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ‘‘ক্যাম্পাসিং থেকে ৬০ শতাংশ পড়ুয়া চাকরি পেয়েছেন। বাকিদের ক্ষেত্রে প্রাক্তনীদের সাহায্য নেওয়া হবে।’’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গোটা বিশ্বের পাশাপাশি ভারতেও চাকরির বাজারে মন্দা দেখা দিয়েছে। এই সঙ্কট আইআইটি, আইআইএম, বিটস্-এর পাশাপাশি সাধারণ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কিংবা ডিগ্রি কলেজের পড়ুয়াদের গ্রাস করছে। অধিকাংশ জায়গায় প্লেসমেন্টের হার তলানিতে এসে ঠেকেছে। সাধারণ কলেজগুলিতে বিজ্ঞান বিষয়ক কোর্সগুলির আসন ফাঁকা থাকছে। বরং সাধারণ ডিগ্রি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলির প্রাক্তনী সমাজ সুসংহত না হওয়ার ফলে সেখানকার পড়ুয়াদের সঙ্কটের মাত্রাও বেশি।
এই অংশের বক্তব্য, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগে কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত হস্তক্ষেপ করা। কর্মজগতে ইতিমধ্যেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রবেশ করছে ঝড়ের গতিতে। আগামী প্রজন্মের পড়ুয়াদের এআই বিষয়ে সড়গড় না করতে পারলে কর্মসংস্থানের ছবি আরও করুণ হবে।
Comments :0