Daluakhaki

দলুয়াখাকিতে ফের ত্রাণ সিপিআই(এম)’র

রাজ্য জেলা

ক্যাপশন- বুধবার জয়নগরের দলুয়াখাকি গ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের হাতে সেলাই মেশিন তুলে দিচ্ছেন সুজন চক্রবর্তী, শমীক লাহিড়ী, রতন বাগচী।

অনিল কুণ্ডু - জয়নগর

জয়নগরের সেই দলুয়াখাকি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির হাতে ১৬টি সেলাই মেশিন তুলে দিলেন সিপিআই(এম) নেতৃত্ব। বুধবার সিপিআই(এম) দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটির উদ্যোগে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ৬টি পরিবারের রুটিরুজির জন্য ১৬টি মেশিন ক্রয় করে এদিন তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এই ৬টি দর্জি শ্রমিক পরিবার নিজেদের বাড়িতে সেলাই মেশিন দিয়ে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দলুয়াখাকি গ্রামে তৃণমূলের সশস্ত্র বাহিনী আক্রমণ করে বাড়ি ঘর ভাঙচুর, লুটপাট চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়। এমনকি এই ৬টি পরিবারের বাড়িতে থাকা সেলাই মেশিন ভাঙচুর, লুট করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত জামালউদ্দিন লস্কর, আব্দুল হামিদ লস্কর, মাজেদা লস্কর, আমিরউদ্দিন লস্কর, হালিম লস্কর ও আলাউদ্দিন লস্করের হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হয়। সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, শমীক লাহিড়ী, পার্টির দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক রতন বাগচী, প্রভাত চৌধুরী, দেবাশিস দেসহ ৫ জনের এক প্রতিনিধি দল এদিন বিকালে দলুয়াখাকি গ্রামে আসেন। তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত এই পরিবারগুলির হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেন। ছিলেন পার্টির জয়নগর ১ এরিয়া কমিটির সম্পাদক আব্দুল ওদুদ মোল্লা, অপূর্ব প্রামাণিকসহ স্থানীয় অন্যান্য নেতৃত্ব। 
গত ১৩ নভেম্বর জয়নগরের বামনগাছি অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি সইফুদ্দিন লস্করকে খুন করে দুস্কৃতীরা। এই খুনের ঘটনায় পরিকল্পিতভাবে দলুয়াখাকি গ্রামে পুলিশের উপস্থিতিতে সিপিআই(এম) কর্মী, সমর্থকদের বাড়িতে চড়াও হয়ে আক্রমণ করে তৃণমূলের সশস্ত্র দুর্বৃত্ত বাহিনী। ঘরের নিত্য প্রয়োজনীয় বাসনপত্র পর্যন্ত ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দিয়েছে দুস্কৃতীরা। দলুয়াখাকি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত ৩১টি পরিবার গৃহহীন, সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়েন। রুটিরুজি তাঁদের বন্ধ হয়। ঘটনার পর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুরুষরা এখনো অনেকেই গ্রাম ছাড়া রয়েছেন। দর্জি শ্রমিক পরিবারগুলির অসহায় পরিস্থিতি তৈরি হয়। ঘটনার পর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছে সিপিআই(এম)। ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আবেদা বেওয়া সাফ বললেন, সরকার কোন সাহায্য করেনি। সিপিআই(এম) ঘটনার পর থেকে পাশে না দাঁড়ালে এতোদিনে অনাহারে মরতে হতো। 
ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে দলুয়াখাকি। ছন্দে ফিরছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জীবন জীবিকা। শীতের ঠান্ডায় গৃহহীন হয়ে পড়া বাসিন্দারা শিশু সন্তানদের নিয়ে দীর্ঘদিন খোলা আকাশের নীচে রাত কাটিয়েছেন। ভেঙে দেওয়া, পুড়িয়ে দেওয়া সেই ঘরের মাথায় সিপিআই(এম)’র দেওয়া টিনের ছাউনি হয়েছে। সেই ঘরেই নতুন করে সংসার সাজিয়েছেন। সেই ঘরেই এখন বসবাস করছেন। বুকের ভিতরে জমে থাকা তীব্র যন্ত্রণার মধ্যেও ঠোটের কোণে হাসি ফুটেছে আবেদা বেওয়া, মাজেদা লস্করদের মুখে। তাঁদের কথায়, সিপিআই(এম) পার্টি ও বিভিন্ন গণ সংগঠন যে সাহায্য করেছেন সেটা থেকেই এখনো চলছে। অনেকেই তো এসেছিল। তারপর আর তাঁদের দেখা যায়নি। সিপিআই(এম) প্রথম দিন থেকেই পাশে দাঁড়িয়েছে সাহায্য করছে এখনো। সেলাই মেশিন দেওয়ায় আবার কাজ শুরু হবে। ঘরে মেশিনের চাকা ঘুরবে। শ্রমিকরা কাজ করবে। লালঝান্ডা আমাদের বেঁচে থাকার রসদ জুগিয়েছে। তৃণমূলের বাহিনী যে ক্ষতি আমাদের করেছে তা হয়তো ফিরে পাব না। কিন্তু পার্টি সাধ্যমতো আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করেছে। আমরা সুবিচার চাই। আক্রমণকারীদের গ্রেপ্তার কঠোর শাস্তি চাই।
দলুয়াখাকি গ্রামে ভয়াবহ, বর্বরোচিত সেই ঘটনার প্রায় আড়াই মাস পেরিয়েছে। এখনো আক্রমণকারী তৃণমূলের সশস্ত্র দুস্কৃতীরা কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। বুক ফুলিয়ে তারা গ্রামে ঘুরে বেড়ায়। এফআইআর এ নাম থাকা সেই অভিযুক্তরা পুলিশের কাছে এখনো অধরা। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ঘটনার পর থেকে জয়নগর থানার পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার না করে আক্রান্ত পরিবারের নিরীহ ৯ জন গ্রামবাসীকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়েছে। আতঙ্ক, ভয় এখনো পিছু ছাড়েনি আক্রান্ত গ্রামবাসীদের। বুকের ভিতরে যেনো তাঁদের আগুন জ্বলছে। শাসক, দলদাস পুলিশের প্রতি ঘৃণার আগুন। তা সত্বেও ঐক্যবদ্ধ গ্রামবাসীরা নিজেদের জীবন জীবিকা আর বেঁচে থাকার সংগ্রামে লালঝান্ডাকে শক্ত করে ধরেই যেনো ছন্দে ফিরছেন। গ্রামে শান্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরছেন তাঁরা।

 

Comments :0

Login to leave a comment