Rujira Banarjee

ইডি দপ্তরে হাজিরা দিলেন রুজিরা

রাজ্য

যথা সময় ইডি দপ্তরে হাজির হলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির স্ত্রী রুজিরা ব্যানার্জি। নিয়োগ দুর্নীতি কান্ডে তাকে তলব করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারি সংস্থা। এর আগে কয়লা পাচার মামলায় একাধিক বার তিনি হাজিরা দিয়েছিলেন। কিন্তু নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এই প্রথম জেরা মুখে পড়ছেন তিনি।
বুধবার সকাল ১১টার মধ্যে সিজিও কমপ্লেক্সে পৌঁছে যান রুজিরা। রুজিরা একা নয়। অভিষেকের মা এবং বাবাকেও তলব করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারি সংস্থা। 
নিয়োগ দুর্নীতি কান্ডে অভিষেকের সংস্থা লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডসের প্রসঙ্গ সামনে এসেছে। সেই মামলায় তলব করা হয়েছে তৃণমূল সাংসদ এবং তার পরিবারের সদস্যদের। রুজিরা এই সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর।


হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা অভিষেক সহ ওই সংস্থার ডিরেক্টরদের সম্পত্তির খতিয়ান জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় ইডিকে। কিন্তু কেন্দ্রীব তদন্তকারি সংস্থা তৃণমূল সাংসদের সম্পত্তির কোণ খতিয়ানই আদালতের কাছে জমা করতে পারেনি। যার জন্য আদালতে তাদের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়। 
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বিচারপতি অমৃতা সিনহার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের ডিভিসন বেঞ্চে মামলা করেন অভিষেক ব্যানার্জি। গত ২৫ সেপ্টেম্বর ও ২৯ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অমৃতা সিনহার একক বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করেই মামলা অভিষেকের।


গত ২৯ সেপ্টেম্বর এই মামলায় বিচারপতি অমৃতা সিনহা ইডি’র তদন্ত প্রক্রিয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে, এমনকি লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের বিরুদ্ধে দায়সারা রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরে তদন্তকারী আধিকারিককেও সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেদিন বিচারপতি অমৃতা সিনহা নির্দেশ দেন ‘নতুন যে আধিকারিক দায়িত্বে আসবেন, তাঁকে দেখতে হবে সমন পাঠিয়ে যে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ৩ অক্টোবরের তদন্ত বা অনুসন্ধান যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তার জন্য যে কোনও পদক্ষেপ করা যাবে।’
বিচারপতির এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই এদিন কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিসন বেঞ্চে মামলা করেন অভিষেক। সঠিক সময়ে মামলার ফাইল এজলাসে এসে না পৌঁছানোয় শুনানি পিছিয়ে দেন বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিসন বেঞ্চ।


তার আগে যদিও বিচারপতি সৌমেন সেন এজলাসে অভিষেক ব্যানার্জির আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, কবে নোটিস পাঠিয়েছিল ইডি? এতগুলো দিন কেটে গিয়েছে। অভিষেক যে হাজিরা দিতে পারবেন না, তা তিনি আগে জানালেন না কেন? তখন পালটা অভিষেক ব্যানার্জির তরফে আইনজীবী বলেন, প্রতিবার রাজনৈতিক কর্মসূচির দিনেই ওঁকে তলব করা হচ্ছে। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে রাজ্যের বাইরে থাকবেন উনি সেটা তো আগেই ঘোষণা করেছিলেন।
অভিষেক ব্যানার্জির তরফে আইনজীবী এদিন বিচারপতিকে বলেন, ‘এই মামলায় ইডির তদন্তকারী অফিসারকে আদালত সরিয়ে দিয়েছে। যে আধিকারিক সমন পাঠিয়েছিলেন তাঁকেই তো সরানো হয়েছে, সমনের জবাব দেব কীভাবে’।

ডিভিসন বেঞ্চ পালটা বলে, ‘আপনি ঠিক করে দেবেন কে তদন্ত করবে? সেটা পারেন না। আপনার মক্কেলের অন্তত চিঠি দিয়ে জানানো উচিত ছিল উনি হাজিরা দিতে পারবেন না।’ আদালতে ইডির পাশাপাশি সিবিআই’র আইনজীবীও হাজির ছিলেন। সিবিআই’র তরফেও জানানো হয় কোনও চিঠি অভিষেক ব্যানার্জির তরফে মেলেনি।
হাজিরা না দিলেও যদিও বিচারপতি অমৃতা সিনহার রায়কে চ্যালেঞ্জ করে মামলা ঠুকে দিয়েছেন অভিষেক ব্যানার্জি। এই প্রথম নয়। গত দু’বছরে কয়লা পাচার থেকে নিয়োগ দুর্নীতি-প্রতিটি তদন্তে জেরা ঠেকাতে, তদন্ত প্রক্রিয়া বিলম্ব করতে বারেবারে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টে বিপুল খরচে মামলা করেছেন অভিষেক ব্যানার্জি। এমনকি, নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডেই সিবিআইয়ের তলব এড়াতেও আদালতে মামলা করেছিলেন। প্রতিবার জেরার আগে রক্ষাকবচের আর্জি জানিয়েও মামলা রুজু করেছেন। যদিও এই মুহুর্তে অভিষেক ব্যানার্জির ওপর কোন রক্ষাকবচ নেই। তদন্তে যদি অসহযোগীতা করেন তবে তদন্তকারী সংস্থা তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ অর্থাৎ গ্রেপ্তারির পথেও হাঁটতে পারেন। আইনি বাধা অন্তত নেই।

নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে মানি-লন্ডারিংয়ের তদন্তেই লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের ডিরেক্টর অমিত ব্যানার্জি (অভিষেকের বাবা) ও লতা ব্যানার্জি( অভিষেকের মা)’কে তলব করা হয়েছে। এর আগে ইডি’র চার্জশিটেই দাবি করা হয়েছিল নিয়োগ দুর্নীতি টাকা ঢুকেছে মুখ্যমন্ত্রীর এই পারিবারিক সংস্থায়। মুখ্যমন্ত্রীর পারিবারিক সংস্থা লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের প্রাক্তন ডিরেক্টর ও বর্তমান সিইও অভিষেক ব্যানার্জির সম্পত্তির যে তালিকা খোদ আদালত জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছিল, সেখানে ইডি’ অভিষেক ব্যানার্জির কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্যই উল্লেখ করেনি। চূড়ান্ত দায়সারা সেই রিপোর্টের পরে আদালতে যেমন ভর্ৎসিত হতে হয়েছে, তেমনি রাজনৈতিক মহলেও ইডি’র ঐ রিপোর্ট যে সেটিংয়ের ফলশ্রুতি সেই অভিযোগও ওঠে।

Comments :0

Login to leave a comment