Sandeshkhali

শিবু গ্রেপ্তারির রাতেই অভিযোগকারির বাড়িতে হামলার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে

রাজ্য জেলা

ক্যাম্প বসলেও কার্যত ক্যাম্প শূন্য।

প্রবীর দাস- সন্দেশখালি

এতদিন রাতের অন্ধকারে শেখ শাহজাহান, শিবপ্রসাদ হাজরা, উত্তম সর্দার, লাল্টু বোসদের বাহিনীর অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছিল সন্দেশখালি দ্বীপের ১০টি বুথ এলাকার নস্করপাড়া, পাত্রপাড়া,মাঝের পাড়া কলোনি পাড়া, ৭ নং এলাকা থেকে। এবার পুলিশের বিরুদ্ধে উঠলো সেই একই অভিযোগ। অভিযোগ আনলেন পাত্রপাড়ার রেখা পাত্র।
এবার রেখা পাত্রের বাড়িতে পুলিশের বিরুদ্ধে উঠলো হামলার অভিযোগ। শনিবার রাতে পুলিশের ৫ জনের একটি দল মদ্যপ অবস্থায় যায় রেখা পাত্রের বাড়িতে। সে সময় রেখা পাত্র বাড়িতে ছিলেন না। এক সময়ে হোমগার্ডের চাকরি করতেন তার শ্বশুরকে হুমকি দেয় এবং কার্যত তাড়া করে নিয়ে যায়। গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শীদের এমনই বয়ান উঠে আসে রবিবার ভোর না হতেই। খবর পেয়ে রেখা পাত্র এদিন সকালে বাড়িতে এসে দেখেন প্লাস্টিকে টাকা ঘরের জানালার প্লাস্টিকে পুলিশের বেতের লাঠি দিয়ে ফুটো করে ফেলা হয়েছে। কেন? রেখার অভিযোগ সে ঘরে আছে কিনা তা দেখতেই থানার বড়বাবু পুলিশ পাঠিয়েছিল। রেখার আরও বক্তব্য তাকে মার্ডার করতেই এসেছিল। শুধু পুলিশ না, সাথে শেখ শাহজাহানের লোকজন ছিল। রেখা এদিন এও অভিযোগ করেছেন ঢিল ছোড়া দূরত্বে থানা বিডিও অফিস। তা সত্ত্বেও আমাদের কোন নিরাপত্তা নেই। আমরা মহিলারা যারা শিবু হাজরা উত্তম সর্দারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করেছি তারা কেউ রাতে দিনে বাড়িতে থাকতে পারছি না। শিবু উত্তম তো গ্রেপ্তার হয়েছে। তবে এখনও কিসের ভয়? শেখ শাহজাহান যতদিন গ্রেপ্তার না হচ্ছে ততদিন আমরা আগের মতো শান্তি ফিরে পাবো না। রাতের অন্ধকারে শাহজাহান এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে মোটরবাইক নিয়ে বন্দুক নিয়ে। আমাদের দেখলই মার্ডার করে দেবে। রাজ্যপাল তো এসে বলে গেছেন আপনাদের জন্য রাজভবনের দরজা খোলা। সেখানে কেন যাচ্ছেন না? কেন যাব। বাপ মায়ের দান করা জমিতে বাস করি।
রাজ্যপাল এখানে আমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করুক। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন আপনারা যারা আন্দোলন করছেন তারা বহিরাগত বহিরাগত। রেখা পাল্টা মুখ্যমন্ত্রীকে বহিরাগত বলে কটাক্ষ করতেও ছাড়লো না। তার স্পষ্ট উচ্চারণ মুখ্যমন্ত্রী সিংহাসনে বসে মজা নিচ্ছেন। শাহজাহান মুখ্যমন্ত্রীর  হাতের লোক। আর পুলিশ মুখ্যমন্ত্রীর দাস। তাই শাহজাহানকে না ধরে আমাদের ধরতে চাইছে আমাদের মেরে ফেলতে চাইছে। স্বামী বাইরে কষ্ট করে টাকা আয় করে এই ঘর বেঁধে থাকি। ঘর তো দিল না, উজোন কাল রাতে ভেঙে দিয়ে গেল। 
কে এই রেখা? কী তার অপরাধ? গত ৭ ফেব্রুয়ারি পাত্র পাড়ার রাস্তায় রেখা মেয়ে খেলা করছিল। রেখা মেয়েকে আনতে যায়। সে সময় গ্রামে বহিরাগত দুষ্কৃতীদের জড়ো করে মিছিল করছিল শিবু হাজরা ও উত্তম সর্দার। রেখার উদ্দেশ্যে অশ্লীল মন্তব্য করে। তার হাত টেনে নিয়ে যেতে চায়। রেখা আপত্তি জানালে তাকে বিবস্ত্র করে মারধর করে। গ্রামবাসীরা ছুটে এলে রেখা সে যাত্রায় রক্ষা পেয়ে যায়। পরদিন অর্থাৎ ৮ ফেব্রুয়ারি রেখা থানায় এফআইআর দায়ের করতে গেলে পুলিশ তার অভিযোগ পত্রে রিসিভড বাট কন্টেন্ট নট ভেরিফায়েড লিখে ছেড়ে দেয়। যা নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে অবশ্য গ্রেপ্তর হয় উত্তম। এরপর আদালতে গ্রামের এক মহিলার গোপন জবানবন্দিতে দলবেঁধে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে পুলিশ শনিবার রাতে ন্যাজাট থেকে গ্রেপ্তার করে শিবুকে।
রবিবার শিবুকে ১০ দিনের পুলিশ হেফাজত চেয়ে বসিরহাট মহকুমা আদালতে পাঠানো হয়েছে। শিবপ্রসাদ হাজরার ৮ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালতে।  অন্যদিকে সন্দেশখালি ২নং বিডিও পক্ষ থেকে গ্রামে ক্যাম্প বসানো হয়েছে। কার কি বিষয়ে অভিযোগ, সমস্যা আছে তা জানতে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে লিজের টাকা না দেওয়া, জমি জোর করে কেড়ে নিয়ে মেছোঘেরি তৈরি করা, চাষের জমিতে নোনা জল ঢুকিয়ে দেওয়া, সরকারি খাল জবরদখল করা ইত্যাদি অভিযোগ করা হয়েছিল। প্রায় দুসপ্তাহ হতে যাচ্ছে। অবশেষে টনক নড়লো প্রশাসনের। পাশাপাশি অভিযোগ শুনতে গ্রামে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন বিডিও। বিডিওকে শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন মানুষ। ক্যাম্প বসলেও কার্যত ক্যাম্প শূন্য।

Comments :0

Login to leave a comment