editorial

গণ‍‌তন্ত্রের প্রহসন

সম্পাদকীয় বিভাগ

সংসদে দাঁড়িয়ে মোদী সরকার স্পষ্ট জানিয়েছে তারা জম্মু ও কাশ্মীরের পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা শীঘ্রই ফিরিয়ে দেবে। সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে হলফনামা দিয়ে জানানো হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর ফের পূর্ণাঙ্গ রাজ্য হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ একাধিকবার পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা ফেরানো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধীদের প্রচারের অন্যতম বিষয়ও ছিল রাজ্যের অধিকার ফেরানোর। ২০১৯ সালে সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেবার এবং রাজ্যকে দ্বিখণ্ডিত করে দুটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল করার পর জম্মু-কাশ্মীরে প্রথম বিধানসভা নির্বাচন হয় ২০২৪ সালে। নির্বাচন হয়েছে। আরএসএস-বিজেপি’র পরাজয় হয়েছে। ওমর আবদুল্লাহ’র নেতৃত্বে কংগ্রেস-ন্যাশনাল কনফারেন্স জোট সরকার গঠন করেছে। মোদী-শাহরা সবকিছু মনে রাখলেও ভুলে গেছেন পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা দেবার প্রতিশ্রুতির কথা। অথচ প্রতিনিয়তই তারা ভাষণ দিয়ে বেড়ান তাদের জমানায় কাশ্মীর এখন শান্ত ও স্বাভাবিক। কাশ্মীর থেকে তারা নাকি সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করে ফেলেছেন। যদি কাশ্মীরে শান্তি ফিরে থাকে, সন্ত্রাসবাদকে ইতিহাস করে দিয়ে থাকে তাহলে কাশ্মীর পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা পাচ্ছে না কেন? এই প্রশ্নের কোনও জবাব মোদী-শাহ-দের মুখে শোনা যায় না। আসলে কাশ্মীরের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, নিজেদের সরকার গড়ার অধিকার মোদী-শাহরা দিতে রাজি নন। তাঁরা চান তারাই দিল্লি থেকে কাশ্মীরের প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করবেন নিজেদের মরজি অনুযায়ী। কাশ্মীরের মানুষের মতামতকে অস্বীকার করবেন। মুখে গণতন্ত্রের কথা বলা চরম স্বৈরাচারী কা‌য়দায় কাশ্মীরের মানুষকে গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখেছেন। এটা কেনা জানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নাগরিকদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্বচ্ছ প্রশাসন গড়ে উঠতে পারে। আর নাগরিকদের সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয় রাজনৈতিক অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে। রাজনৈতিক দলের যোগ থাকে প্রতিটি নাগরিকের সঙ্গে। লেফটেনেন্ট গভর্নরের মাধ্যমে দিল্লি থেকে প্রশাসন চালানো মানে জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নভাবে চাপিয়ে দেওয়া প্রশাসন। এমন প্রশাসন গণতন্ত্রে কাম্য নয়। যেখানে জনগণের সংযোগ নেই, মানুষের মনের কথা জানা বা বোঝার কোনও পরিকাঠামো নেই সেটা আর যাই হোক সরকার নয়। কাশ্মীরের মানুষ এমন সরকার চাননি, চান না। তারা চান তাদের ভোটে নির্বাচিত সরকার। যে সরকার তাদের যন্ত্রণাকে গুরুত্ব দেবে। ভোট হয়েছে। মানুষ‍‌ ভোট দিয়েছেন। বিধানসভা গঠন হয়েছে। হয়েছে নির্বাচিত সরকারও। কিন্তু সেই সরকার নিধিরাম সর্দার। সেটা নামে সরকার কিন্তু কামে নয়। এই সরকারের কোনও ক্ষমতা নেই। সব ক্ষমতা সেই লেফটেন্টের হাতে। তাকে সামনে রেখে দিল্লি থেকে কাশ্মীর চালান মোদী-শাহরা। গণতন্ত্রের প্রহসন চলছে। নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকে ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়ে কাশ্মীরের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে আছেন মোদীরা। গণতন্ত্রের নামে এমন প্রতারণা, এমন শয়তানি চলতে পারে না।

Comments :0

Login to leave a comment