PANCHAYAT TAX BENGAL

চালু হচ্ছে অনলাইন, গ্রামের কর বৃদ্ধির পথে রাজ্য

রাজ্য

গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কর আদায় নিয়ে এবার কোমর বেঁধে নামতে চাইছে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তর। 
সম্পত্তি করের নতুন করে মূল্যায়ন করার জন্য বাড়ি, বাড়ি যেতে হবে নির্বাচিত প্রতিনিধি থেকে পঞ্চায়েত কর্মচারীদের। মূল্যায়নের জন্য ছাপানো আবেদনপত্র পৌঁছে দেওয়া হবে গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে। রাজ্যের এক আধিকারিকের বক্তব্য,‘‘ বহুদিন ধরে এরাজ্যে পঞ্চায়েতে কর আদায়ের হার নিম্নগামী। তারসঙ্গে সম্পত্তি কর নিয়ে মূল্যায়ন বহুদিন হয়নি। তাই নতুন করে মূল্যায়ন করা হবে। একইসঙ্গে কর আদায়ে গতি আনতে অনলাইনে কর আদায় চালু হচ্ছে।’’ 
অনলাইনে কর আদায় চালু হলেও প্রথমে তা জমা পড়বে রাজ্য সরকারের নিজস্ব অ্যাকাউন্টে। সেখান থেকে সেই টাকা পাঠানো হবে গ্রাম পঞ্চায়েতের তহবিলে। এখনই ট্রেড লাইসেন্স ও বিল্ডিং প্ল্যানের জন্য জমা পড়া টাকা চলে যায় রাজ্যের অ্যাকাউন্টে। ১৫দিন থেকে মাস কাবার করে সেই টাকা ফিরে আসে পঞ্চায়েতের হাতে। সূত্রের খবর, পঞ্চায়েতের কর আদায়ের ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে আসলে রাজ্য সরকার নিজের খাতেও টাকার সংস্থান তৈরি রাখতে চাইছে।  
পঞ্চায়েত এলাকায় ইতিমধ্যেই ট্রেড লাইসেন্সের কর অনলাইনে চালু হয়েছে। রাজ্যের বহু পঞ্চায়েত এলাকায় বিল্ডিং প্ল্যানের অনুমোদনের জন্য দেয় করের ব্যবস্থাও অনলাইন করে দেওয়া হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই গোটা রাজ্যেই পঞ্চায়েত এলাকাতেই বিল্ডিং প্ল্যানের অনুমোদন অনলাইন করে দেওয়া হবে। তার মধ্যেই সম্পত্তি কর দেওয়ার ব্যবস্থা এবার অনলাইনে নিয়ে আসতে চাইছে রাজ্য সরকার। এখন ঠেকায় পড়ে সম্পত্তি কর আদায় নিয়ে উঠেপড়ে লাগতে চাইছে রাজ্য সরকার। 
রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তর থেকে সমস্ত জেলা শাসকদের কাছে একটি নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। ওই নির্দেশিকাতেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার গ্রাম সংসদ ভিত্তিতে বাসিন্দাদের সম্পত্তি করের জন্য নতুন করে মূল্যায়ন করার জন্য বাড়ি, বাড়ি যাওয়ার কথা জানানো হয়েছে। আসলে আগামীদিনে এরাজ্যের গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সম্পত্তি করও অনলাইন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে,‘ওয়েস্ট বেঙ্গল পঞ্চায়েত অনলাইন প্রপার্টি ট্যাক্স ইনফর্মেশান অ্যান্ড কালেকশান সিস্টেম’ পোর্টাল। আগামীদিনে গ্রামের মানুষের কাছ থেকে কর আদায়ের পরিমাণ যাতে আরও দ্রুত বাড়ানো যায় তারজন্য যাবতীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তরের প্রধান লক্ষ্য কর মূল্যায়ন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো। পঞ্চায়েত আইনেই আছে, পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের কাছে ৬নং আবেদন পত্র পূরণের মাধ্যমে তাঁদের সম্পত্তি করের স্ব-মূল্যায়ন করা। দীর্ঘদিন এই কাজ বকেয়া পড়ে আছে। এখন বাড়ি, বাড়ি গিয়ে করের স্ব-মূল্যায়নের জন্য আবেদন পত্র দিয়ে নতুন করে কর কাঠামোর পুনর্বিন্যাস করতে চায় রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তর।
রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়,‘‘ কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে। ফলে আয় ও ব্যায়ের মধ্যে ফারাক বাড়ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের টাকার ওপর নির্ভরতা কমাতে পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল তৈরির ওপর জোর দেওয়া ছাড়া উপায় থাকছে না।’’ বামফ্রন্ট সরকারের আমলে এরাজ্যে পঞ্চায়েতে গণউদ্যোগে বহু কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে। সাধারণ মানুষের পঞ্চায়েতে ট্যাক্স জমা দেওয়ার স্বাভাবিক প্রবণতাও ছিল। কিন্তু গত ১২ বছরে তৃণমূল সরকারের আমলে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা আসলে টাকা লুটের ক্ষেত্র হিসাবে গড়ে তোলে শাসক দলের নেতারা। ফলে গ্রাম সংসদ সভা, গ্রাম সভা থেকে পঞ্চায়েতি ব্যবস্থায় মানুষের অংশগ্রহণের প্রক্রিয়াই থমকে যায়। বন্ধ হয়ে যায় কর আদায়ের পরিমাণ। 
এমনকি কর আদায় নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগও এই সময়ে উঠতে শুরু করে। কর আদায়কারদের একাংশকে সঙ্গে নিয়ে পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান মিলে যোগসাজশ করে ভুয়ো রসিদ ছাপিয়ে লুট হয়েছে করের টাকা। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সংসদ ভিত্তিতে কর মূল্যায়নের যাবতীয় তথ্য পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা এখনও কার্যকর হয়নি। তার কারণ হিসাবে আধিকারিকরা বলছেন,‘‘ সামনে লোকসভা ভোট তাই এখনই পঞ্চায়েতের কর নিয়ে সরকার খুব একটা এগতে চাইছে না। লোকসভা ভোটের পর কর আদায় নিয়ে নামার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
করের মূল্যায়ন ও অনলাইনে কর আদায় নিয়ে এখন রাজ্যের প্রায় প্রতিটি জেলাতে একদিকে পঞ্চায়েত কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ চলছে। তেমনই ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরও বৈঠকে ডেকে এলাকাবাসীদের কাছে গিয়ে কর আদায় নিয়ে সচেতনতা প্রচারের জন্য জোর দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। 
আসলে এরাজ্যে গত ১২ বছরে পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দেওয়ার ফলে জনগণের মধ্যেও কর দেওয়ার প্রবণতা কমেছে বলে স্বীকার করছেন আধিকারিকরা। তাঁরা বলছেন, সরকার এখন অনুদান প্রকল্প চালু করেছে। কিন্তু মানুষ যখন সেভাবে আর্থিক অনুদান পেতেন না তখন কর দেওয়াতে নিয়মিত ভূমিকা পালন করতেন। সেই অভ্যাস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হবে।’’ কর আদায়ের সঙ্গে যুক্ত আছে পঞ্চায়েতের স্বশক্তিকরণ। নিজের পায়ে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী না হলে আগামীদিনে বিশ্ব ব্যাঙ্কের অনুদানও রাজ্যের পঞ্চায়েতগুলি আর পাবে না। তাই কর আদায় নিয়ে এখন ঝাঁপাতে চাইছে রাজ্য সরকার।
 

Comments :0

Login to leave a comment