Storm Affected Jalpaiguri

দুদিন পরেও জলের সঙ্কট, ত্রাণের হাহাকার

রাজ্য জেলা

দীপশুভ্র সান্যাল- জলপাইগুড়ি

রবিবার বিকেলের ক্ষণিকের ঘূর্ণিঝড়ে এক্কেবারে বদলে গিয়েছে জলপাইগুড়ি শহরের সম্পূর্ণ চিত্র। ঘরবাড়ি ভেঙে তছনছ অবস্থা শহর এলাকার। বাড়িঘর ভেঙে, গাছ ভেঙে, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে রয়েছে শহরের রাস্তা জুড়ে। এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন অবস্থায় রয়েছে জেলার বেশ কিছু এলাকা। দমকা হাওয়ায় উড়ে গেছে গয়না সমেত আস্ত আলমারি! ঝড় ভেস্তে দিয়েছে মেয়ের বিয়ে! ঝড়ে জলপাইগুড়ি ময়নাগুড়ির বার্নিশ গ্রামের এক পরিবারের
কেড়ে নিয়েছে শেষ সম্বলটুকু।  ওই গ্রামেই সরকারি সাহায্য নিয়ে শুরু হয়েছে ক্ষোভ বিক্ষোভ। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো বলেছেন রয়েছি পলিথিনের নিচে। শুকনো চিড়া মুড়ি খেয়ে  থাকতে হচ্ছে। এভাবে আর আর কতদিন চলতে হবে। আমাদের ঘরের কী ব্যবস্থা হবে? ঝড়ে সর্বশান্তদের প্রশ্নের মুখে তৃণমূল ও বিজেপির নেতারা।
নিরন্ন অসহায় মানুষ সরকারি সাহায্যের আশায় বসে রয়েছেন । মেলেনি সুরাহা। 
রবিবার রাত থেকে এখন পর্যন্ত ঝড়ে সর্বশান্তদের সামর্থ্য অনুযায়ী শুকনো খাবার, জলের বোতল সহ ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে চলেছেন রেড ভলান্টিয়ার্সরা। সর্বতোভাবে মানুষের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন ছাত্রযুব কর্মীরা।
ঝড়ের প্রভাব সবচেয়ে বেশি ছিল জলপাইগুড়ির অন্তর্গত বার্নিশ এলাকায় এবং পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত পাতকাটা কলোনি এলাকায়। সরকারিভাবে এখনও পর্যন্ত  মৃতের সংখ্যা পাঁচ। আহত শতাধিক। বেসরকারি মতে মৃত ও আহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। রবিবারের ঝড়ে সবকিছু নিঃস্ব হয়ে গিয়েছে কয়েকশো পরিবারের। বর্তমানে শুধুমাত্র পলিথিন নিয়ে রাত কাটাতে হচ্ছে ওই পরিবারগুলিকে।


 

বার্নিশ গ্রামের রায় পরিবার, মেয়ের বিয়ের জন্য তৈরি করেছিলেন সোনার গয়না, আলমারিতে ছিল নগদ টাকা পয়সাও। ঝড়ের দাপটে গয়না সমেত আস্ত আলমারিই উড়ে গিয়েছে। এখন বিয়ের পরিকল্পনা বাতিল।  দিশেহারা  গোটা পরিবার। 
কয়েক মিনিটের ঝড় কারোর মাথার ওপর ছাদ নেই, কারও আস্ত বাড়িটাই ভেঙে পড়েছে, স্বজন হারা হয়েছেন কেউ, কারও আবার শেষ সম্বলটুকুও হারিয়ে গিয়েছে। এখন চারিদিকে শুধুই হাহাকারের ছবিই উঠে আসছে। 
যেদিকে তাকানো যায় শুধুই ধ্বংসলীলা। টিনের চাল ঝুলছে গাছের ডালে। ইলেকট্রিক পোল পড়ে দেওয়াল ভেঙ্গে চুরমার। জলপাইগুড়ি পলিটেকনিক কলেজ ক্যাম্পাস বিধ্বংসী ঝড়ে তছনছ। মেশিন ওয়ার্কশপ থেকে শুরু করে হোস্টেল ও কলেজ বাউন্ডারি প্রাচীর সহ বিভিন্ন এলাকায় বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখনো জলপাইগুড়ি ও ময়নাগুড়ির ঝড় কবলিত বহু এলাকায় নেই বিদ্যুৎ। ক্ষতি হয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত স্কুল কর্তৃপক্ষের। 
সোমবার মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপাল এসে ক্ষতিগ্রস্থদের 
পাশে থাকার আশ্বাসবানী দিয়েছেন। আসেন বিজেপি সাংসদ অনন্ত মহারাজ। তিনিও মৌখিক আশ্বাস দিয়ে চলে যান। তাঁকেও বিক্ষোভের মুখেও পড়তে হয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তৃণমূল ও বিজেপি নেতারা এখানে রাজনীতি করতে আসছেন। তাঁরা আশ্বাস দিচ্ছেন কিন্তু কোনরকম সুযোগ-সুবিধা মিলছে না। শুধুমাত্র পলিথিন চাপা দিয়ে চিড়া মুড়ি খেয়ে আর কতদিন থাকবো।

Comments :0

Login to leave a comment