IndiGo Crisis

ইন্ডিগো সংকট, নজির স্থাপনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে, মন্ত্রী রাম মোহন নাইডু

জাতীয়

চূড়ান্ত বিপর্যয় অব্যাহত ইন্ডিগো বিমান বিভ্রাট। একের পর এক বিমান বাতিল। টানা সপ্তম দিনে পৌঁছেছে। সোমবার দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে ইন্ডিগোর প্রায় ৪৫০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। যাত্রীদের প্রবল অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়। সোমবার দিল্লি এবং বেঙ্গালুরু বিমানবন্দর থেকে ২৫০ টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। চেন্নাইয়ে ৭১টি, হায়দ্রাবাদে ৭৭টি এবং জম্মুতে ২০টি ফ্লাইট। দিল্লি বিমানবন্দর থেকে যে ১৩৪টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে, তার মধ্যে ৭৫টি ছিল যাওয়ার এবং ৫৯টি আসার। এদিকে, বেঙ্গালুরু বিমানবন্দর থেকে ১১৭টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে, যার মধ্যে ৬২টি যাওয়া এবং ৫৫টি আসার। ইতিমধ্যেই বিমান বিভ্রাটের কারণে টিকিট বাবদ ক্ষতিগ্রস্থ যাত্রীদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে ইন্ডিগোর তরফে জানানো হয়েছে। বেসরকারি ওই বিমান সংস্থার তরফে দাবি করা হয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও তিন-চারদিন সময় লাগবে। 
গোটা পরিস্থিতির জন্য ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারও দায় এড়াতে পারে না বলে অভিযোগ উঠেছে নানা মহল থেকে। এমনকি সঙ্কট নিরসনে কেন্দ্রের বিলম্বিত উদ্যোগ এবং নম্র প্রতিক্রিয়া নিয়েও তীব্র সমালোচনা হয়েছে। শুধু তাই নয়, মোটা অঙ্কের নির্বাচনী চাঁদা পেয়েই ইন্ডিগো নিয়ে নীরব ছিল কেন্দ্র। শুধু চাঁদার জন্য যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে আপস করতেও পিছপা হয়নি নরেন্দ্র মোদী সরকার বলেও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। রবিবার সিপিআই(এম)-র সাধারণ সম্পাদক এম এ বেবি ইন্ডিগোর বিমান পরিষেবার নজিরবিহীন সঙ্কটের তদন্তের দাবির পাশাপাশি সংশোধিত সুরক্ষা নিয়ম বাস্তবায়নে বাধা দেওয়ার জন্য বিমান সংস্থাগুলির সঙ্গে ডিজিসিএ’র ‘সম্ভাব্য যোগসাজশ’ এবং ‘পরিকল্পিত বিশৃঙ্খলা থেকে লাভবান’ হওয়ার অভিযোগ করেছেন। শনিবারই কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ করা হয়, ‘পছন্দের পুঁজিপতিদের ক্রমাগত সুবিধা দিয়ে প্রতিযোগিতার বাজার বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। যার ফলে সব ক্ষেত্রেই এই ধরনের অচলাবস্থা দেখা দিচ্ছে। আর বিমান সংক্রান্ত সুরক্ষা নিয়ে বরাবরই উদাসীন বিজেপি সরকার। ইন্ডিগো’র সঙ্কটের কারণে ভারতীয় বেসামরিক বিমান চলাচল নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।
সমালোচনার মুখে পড়ে সোমবার ইন্ডিগো’র বিমান বিভ্রাটে কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রামমোহন নাইডু বিমান সংস্থার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, "আমরা এই পরিস্থিতিকে মোটেও হালকাভাবে নিচ্ছি না। বিষয়টি তদন্তাধীন এবং কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  এদিন রাজ্যসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, নতুন যাত্রী সুরক্ষা নিয়ম বাস্তবায়নের পর ইন্ডিগোর "অভ্যন্তরীণ সংকট"র ফলে শত শত ফ্লাইট বাতিল হয়েছে হাজার হাজার মানুষ বিপাকে পড়েছেন। তিনি বলেন, বেসামরিক বিমান পরিষেবা মেনে চলার ক্ষেত্রে যে কোনও ত্রুটির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে। তিনি বলেন সেই পদক্ষেপ কেবল ইন্ডিগোর ক্ষেত্রেই নয়, সমগ্র বিমান সংস্থার জন্য একটি উদাহরণ স্থাপন করবে। মন্ত্রী বলেন যে মন্ত্রক পরিস্থিতির উপর নজর রাখছিল হঠাৎ করেই সমস্যাটি দেখা দেয়। তিনি বলেন, ১ ডিসেম্বর, আমরা ইন্ডিগোর সাথে একটি বৈঠক করেছি। সেই সময়ে, কোনও সমস্যা দেখা দেয়নি। সব স্বাভাবিকভাবে চলছিল। তবে, ৩ ডিসেম্বর, পরিস্থিতি হঠাৎ করে খারাপ হয়ে যায়, যার ফলে মন্ত্রক তাৎক্ষণিকভাবে হস্তক্ষেপ করে। আমরা বিষয়টি হালকাভাবে নিচ্ছি না। আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব। আমরা প্রতিটি বিমান সংস্থার জন্য একটি উদাহরণ স্থাপন করব। যদি কোনও অবহেলা পাওয়া যায়, আমরা ব্যবস্থা নেব। রাম মোহন নাইডু সংসদে বলেন, সরকার বিষয়টির খুটিনাটি তদন্ত শুরু করেছে।

ইন্ডিগোর সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো দাবি করেছে, এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী সমস্ত পক্ষের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে অবিলম্বে যথাযথ প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে। তা সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে বা যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) গঠন করে দ্রুত শুরু করা দরকার। একইসঙ্গে সরকারকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, বিমানের টিকিটের দাম এখন যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, তা যেন সব সময় কঠোরভাবে মেনে চলা হয়।
সোমবার  এক বিবৃতিতে পলিট ব্যুরো বলেছে, দেশের বিমান পরিবহন খাতে কার্যত একচেটিয়া (মনোপলি) বা দ্বৈত কর্তৃত্বশীল (ডুয়োপলি) পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জেরেই বর্তমান সংকট দেখা দিয়েছে। বিচারবিভাগীয় নির্দেশের পর ‘ডিরেক্টর জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন’ (ডিজিসিএ) যে নতুন নিয়মগুলি জারি করেছিল, তা কার্যকর করা হয়। এই নিয়মবিধির উদ্দেশ্য ছিল বিমান কর্মী— বিশেষ করে পাইলটদের ক্লান্তি থেকে মুক্তি দেওয়া এবং সার্বিকভাবে যাত্রীদের নিরাপত্তা–সংক্রান্ত উদ্বেগ দূর করা। কিন্তু একদিকে পর্যাপ্ত সময় থাকা সত্ত্বেও ইন্ডিগো যথাযথ প্রস্তুতি নেয়নি। ফলস্বরূপ সংস্থার পরিষেবা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এই নজিরবিহীন পরিস্থিতিতে ডিজিসিএ–কে নিয়ম কার্যকর করার সময়সীমা পিছিয়ে দিতে বাধ্য করেছে ওই সংস্থা।

Comments :0

Login to leave a comment