পাওয়ার অব অ্যাটার্নির নাম করে জমি মাফিয়াদের গ্রাম দখলের প্রচেষ্টা রুখে দিলো মহিলা গ্রামবাসীরা। শিলিগুড়ি মহকুমার পাথরঘাটার এলাকার পাঁচকেলগুড়ি গ্রামের গ্রামবাসীরা নিজেদের বসত জমি জবরদখলের হাত থেকে রক্ষা করতে জমি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুললেন। গ্রামবাসীদের নজিরবিহীন প্রতিরোধে পিছু হটতে বাধ্য হলো দুষ্কৃতিকারীরা। পাঁচকেলগুড়ি গ্রামের মানুষের এই সাহসী আন্দোলনে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে নেতৃবন্দ বলেন, কোনভাবেই বাস্তু জমি দখল করতে দেওয়া হবে না। জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
রক্তি নদীর ধার ঘেঁষে প্রায় ৩০/৪০ বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে পাথরঘাটার পাঁচকেগুড়ি গ্রাম। দীর্ঘ ৫০বছর ধরে এই গ্রামের বাসিন্দারা বাস্তু জমিতে বসবাস করছেন। রাজবংশী, আদিবাসী ও নেপালি সম্প্রদায়ের শতাধিক পরিবারের প্রায় পাঁচ শতাধিক গরীব মানুষের বসবাস এই গ্রামে। ঘন জনবসতিপূর্ন এলাকা। রক্তি নদীর পাথর তুলে জীবন জীবিকা চলে। গ্রামবাসীদের কেউ কেউ আবার জমির পাট্টাও পেয়েছেন। পাঁচকেলগুড়ি গ্রাম জবরদখলের চেষ্টার খবর পাওয়া মাত্রই ওই গ্রামে পৌঁছে যান সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ। গোটা গ্রামবাসীরা একত্রিত হয়ে জবরদখলের জঘন্য চেষ্টা, প্রশাসনের ভূমিকা সমস্ত বিষয় সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দের কাছে তুলে ধরেন। গ্রামবাসীদের উদ্যোগে সেই মুহুর্ত্বেই সভা অনুষ্ঠিত হয়। গরীব মানুষদের টাকার প্রলোভন দিয়ে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা হবে। জাতি ও ধর্মের নামে বিভাজনের বীজ বপনেরও চেষ্টা হবে। কিন্তু ওদের কোন মিথ্যে ফাঁদে কোনভাবেই পা দেবেন না। সভা থেকে আহ্বান জানান নেতৃবৃন্দ।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূলী পঞ্চায়েত সদস্য বিপদের দিনে আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। তৃণমূলী পঞ্চায়েত সদস্যের মদতে গত ২৩নভেম্বর রাতে কতিপয় জমির দালালরা ওই গ্রামে ঢুকে গোটা গ্রাম থেকে গ্রামবাসীদের উচ্ছেদের চেষ্টা চালায়। পাওয়ার অব অ্যাটার্নির নাম করে রাতের অন্ধকারে জমি মাফিয়ারা ওই গ্রাম এলাকায় খুঁটি বসিয়ে এবং সাইনবোর্ড লাগিয়ে গ্রাম থেকে বাসিন্দাদের উঠে যেতে বলে। ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। জমি মাফিয়াদের হাতে থেকে নিজেদের বাস্তু জমি রক্ষা করতে ওই রাতে গ্রামের মহিলারা এককাট্টা হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। নিজেদের বাস্তু জমি রক্ষার জন্য রুখে দাঁড়ান তারা। প্রতিরোধের মুখে জমির দালালরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। গ্রামের বাসিন্দারা আরো অভিযোগ করেন, সিপিআই(এম) পঞ্চায়েত সদস্যের সময়কালে ১০০দিনের কাজে গ্রামের পাশের ফাঁকা মাঠটির উন্নতি সাধন হয়েছিলো। সেই মাঠ সহ পার্শ্ববর্তী মন্দির ও মসজিদও দখলের মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে মাফিয়ারা। পাঁচকেলগুলি গ্রামে ২৩ নভেম্বর রাতের ঘটনার পরেই স্থানীয় তৃণমূলী পঞ্চায়েত সদস্য জমির দালালদের পক্ষ নিয়ে থানায় খবর দিয়েছে যে গ্রামবাসীরা জমির দালালদের মারধোর করেছে। পঞ্চায়েত সদস্যের খবরের ভিত্তিতে পুলিশ প্রশাসন গ্রামবাসীদের থানার ডেকে পাঠিয়েছে।
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে পাঁচকেলগুড়ি গ্রামের ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অশোক ভট্টাচার্য ও জীবেশ সরকার বলেন, এই গ্রামে অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। যারা লুটতে জবরদখল করতে এলো তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য থানায় ঘটনার খবর দিলো যাতে গ্রামবাসীরা দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। তৃণমূলের ওই পঞ্চায়েত সদস্যের কথাতেই আবার প্রশাসনের তরফে গ্রামবাসীদের থানায় ডেকে পাঠানো হলো। বিষয়টি নিয়ে পুলিস কমিশনার ও ডিএম'র সাথে কথা হয়েছে বলে জানান অশোক ভট্টাচার্য। ব্লক এলাকায় বিএলআরও দপ্তরকে আরো শক্তিশালী করার কথা বলেন জীবেশ সরকার। বলেন, ডিএমের হস্তক্ষেপের পরেই বিডিও বা পুলিশের ঘটনাস্থলে যাবার খবর মিলেছে। কিন্তু যাওয়াটাই শেষ নয়। এর বিরুদ্ধে প্রশাসন কি ব্যবস্থা নিলো সেটাই দেখার বিষয়। পাঁচকেলগুড়ি গ্রামের মানুষদের কোনভাবেই যেন উচ্ছেদ হতে না হয় সেই বিষয়টি সুনিশ্চিত করা, গ্রামে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টিকারী দুষ্কৃতীকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, বসবাসের নিশ্চয়তা দেবার ক্ষেত্রে গরীব মানুষদের হাতে অবিলম্বে বাস্তু জমির পাট্টা তুলে দেওয়া, জমি মাফিয়াদের সক্রিয়তা রুখতে ও পাওয়ার অব অ্যাটরনির বেআইনী খেলা বন্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহন, বলপূর্বকভাবে কেড়ে নেওয়া গরীব মানুষদের জমি তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, শিলিগুড়ির শহরাঞ্চল ও মহকুমার গ্রামাঞ্চলে দিন দিন জমি মাফিয়ারাজ উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাল পাওয়ার অব অ্যাটার্নি দেখিয়ে এই সমস্ত বেআইনী কার্যকলাপ চালিয়ে আসছে দিনের পর দিন মাফিয়ারা। শুধু পাঁচকেলগুড়ি গ্রামই নয়, পরিকল্পনামাফিক একের পর এক গ্রাম জবরদখলের চেষ্টা চালাচ্ছে জবরদখলকারীরা। গ্রামবাসীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন রুখে দিন। দল মত নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধ লড়াই গড়ে তুলুন।
Comments :0