কনীনিকা ঘোষ
নাঃ এবারও ওদের বাড়ি থেকে বর্ষবরণ করা হলো না। রাস্তাতেই কেটে গেল বর্ষশেষের রাত। হ্যাঁ ঠিকই বুঝেছেন রাজ্যের যৌবনের এক অংশ, যারা চুরি ডাকাতি নয় শুধুমাত্র অভিযুক্ত পার্থ, মানিক সহ তৃণমূলী নেতাদের চুরি আর দুর্নীতির জন্য রাস্তায়। ওদের মেধা ছিল, পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল কিন্তু এই দুর্নীতির বেড়াজালে ওরা আজ রাস্তায়। যাদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মেয়ে- মহিলা। শিক্ষকতা এমন এক পেশা যার একটা বড় অংশ অধিকার করে আছে মেয়েরা। তাই ২৫ ডিসেম্বরের রাতে সান্টাক্লজ যখন মাননীয়ার আদরের নাতিনাতনিদের গিফট দিয়ে আসে তখন যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কাজ না পাওয়া যুবতীর সন্তানদের জন্য অপেক্ষা করে থাকেনি কষ কালো রাত। সেখানে সেন্ট পলস গির্জার নির্জন গম্বুজে রক্তাক্ত যিশুর ছায়া অথবা জিঙ্গলবেল বেজে যাওয়া সান্টার শ্লেজ কোনও উত্তর বা উপহার কিছুই আনতে পারে না।
ঠিক যেমন উত্তর আনতে পারেনি দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়েতে নির্মাণের কাজ করা ওই রেশমির কাছে। সবাই বলছে যে পথ নির্মাণ করতে খরচ ছিল প্রতিকিলোমিটার পিছু ১৮.২০কোটি টাকা তা শেষ পর্যন্ত হয়েছে ২৫০.৭৭কোটি টাকা কিন্তু ওদের মজুরিতো সেই একই জায়গায়, তাও আবার ঐ আদমিগুলোকে কন্ট্রাকটর যাও বা মজুরি দেয় ওদের আওরৎদের তো আরও কম, কিন্তু পুছতে গেলেই বলে ‘কাজ করতে হবে না’। কিন্তু রেশমি কি করবে, বালবাচ্চাকে খাওয়ানোর জন্য ওকেও তো কাজ করতেই হবে শুধু মরদের রোজগারেতো চলবে না, তাই মুখ বুজে খাটো। তবু রেশমি অবাক হয়ে ভাবে এরাই আবার আওরৎদের জন্য এত বড় বড় কথা বলে !
আসলে আমাদের সমাজটাই যে এ রকম! সেই কবে থেকে বঞ্চিত নিপীড়িত শোষিত মানুষের মধ্যেও আরও বঞ্চিত, আরও নিপীড়িত, আরও শোষিত, মহিলা। সেই মাতৃজঠরে যখন প্রজাপতি গুটিপোকা হয়ে থাকে তখন থেকেই তো মেয়েদের প্রতি ‘বে- ইনসাফি’ র শুরু। লিঙ্গ নির্ধারণে ভ্রূণের পরিচয় জানতে পেরে কত জনকে প্রাণের স্পন্দন নিয়ে ফোটবারই সুযোগ দেওয়া হয় না তারও আগেই, অনেক আগেই তাকে মাতৃজঠরে হত্যা করা হয়, তাইতো নারী পুরুষের অনুপাত থাকে ১০০০(পুরুষ) : ৯১৪ (নারী) তাই যত বড় বড় কথাই বলুক কেন্দ্র বা রাজ্য আসলে গল্পকথাতে, বা জুমলাতে ওদের জুড়ি মেলা ভার। মেয়েদের সত্যিকারের এগিয়ে দেওয়ার জন্য যে অন্যরকম মন লাগে, নীতি লাগে, আর্থিক স্বনির্ভরতা লাগে কিন্তু তা কোথায় মিলবে এই দুই সরকারের কাছে?
কন্যাশ্রী বলছেন, রূপশ্রী বলছেন, মেয়েদের সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার ছবি দিচ্ছেন কিন্তু স্কুলই যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক, তার কি জবাব দেবে রাজ্য সরকার? শিক্ষায় ঘুরপথে প্রতিদিন খরচ বেড়ে যাওয়ার জন্য যে অসংখ্য গরিব প্রান্তিক পরিবারের সন্তানেরা ড্রপআউট হয়ে যাচ্ছে তার বড় অংশ ছাত্রী, তার জবাব কে দেবে? কে এই জবাব দেবে যে, প্রকল্পের সুযোগ নিতে গেলে তো আগে মেয়েকে বাঁচতে হবে। আজ কামদুনি, কালিয়াগঞ্জ কাল হাঁসখালি, পরশু গলসি বা বলাগড়। আট থেকে আশি কোনও মেয়েই যে আজ রাজ্যে শাসক দলের শাসনের দৌরাত্ম্যে নিরাপদ থাকছে না বা নিহত হয়ে যাচ্ছে, 'রেপুটেড পার্সন' এর তকমার আড়ালে দিদির দামাল ভাইরা যে উন্মত্ত হয়ে উঠছে, যার বলি হচ্ছে তরতাজা প্রাণগুলো, তার জবাব কে দেবে? বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে মেয়েদের মাথা উঁচু করে বাঁচার স্বপ্ন তাকে বাস্তবে প্রতিফলিত করার একের পর এক ছবি ভুলিয়ে দিতে চেষ্টা করেছিলেন আপনারা কিন্তু আপনাদের দুঃশাসনের কারণে, আবার তো সে মনের অতল থেকে উঠে আসছে, সামলাতে পারবেন তো?
দেশের সরকার আবার বড় গলায় বলে ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’, কিন্তু মণিপুরে আদিম বর্বরতার নির্লজ্জ নিদর্শনের পরও প্রধানমন্ত্রী নীরব থাকেন, বেনারস হিন্দু বিশ্ব বিদ্যালয়ের দলবদ্ধ ধর্ষণে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, মাস পেরিয়ে যারা ধরা পড়ে তাদের প্রত্যেকেই তো শাসক দলের আইটি সেলের কর্মী। (আসলে নির্বাচনের প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন তারা, তাই ধরা যায়নি) আমাদের ৫৬ইঞ্চির প্রধানমন্ত্রী সহ অমিত শাহ, জেপি নাড্ডাদের সঙ্গে ঘনিষ্ট ছবিতো ঘুরে বেড়াচ্ছে সোশাল মিডিয়ায়, কি জবাব দেবে বিজেপি আরএসএস ? হাথরসের উচ্চবর্ণের ধর্ষকদের স্বপক্ষে মিছিল করতে নেমে পড়ল শাসক দলেরই স্বঘোষিত গেরুয়া বাহিনী। বিলকিস বানোর ধর্ষকদের ছেড়ে দেওয়া হল, যারা গোধরা কাণ্ডের পর তার তিন বছরের শিশুকন্যাকে পাথরের উপর আছড়ে আছড়ে ফেলে খুন করে, তার পরিবারের ১১জনকে হত্যা করে, তাকে বার বার ধর্ষণ করে ঐ যে নিকৃষ্ট জীবরা, তারপরেও সেই আসামিরা ছাড়া পাবে, আর তার হয়ে মামলা করা তিস্তা শীতলবাদকে দিনের পর দিন হয়রানি করা হবে, অথচ মেয়েদের নিরাপত্তার ভাষণ শুনব মনুবাদী বিজেপির মুখে, এ জুমলার জবাব চাইতে হবে না?
এরাজ্যে বিজ্ঞাপন হবে বাংলার নিজের মেয়ের রাজ্য, আমরা প্রশ্ন করব না, কামদুনির ধর্ষিতা কি বাংলার নিজের মেয়ে নয়? তবে কেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তর মুখ্যমন্ত্রীর হাতে থাকা সত্ত্বেও শুধু পুলিশের অপদার্থতার কারণে উচ্চ আদালত থেকে খুনিরা বেকসুর খালাস হয়ে যাবে, দিনের পর দিন বিচার চাওয়া মহিলাদের প্রতিবাদকে তো পরিবারের কাউকে অস্থায়ী চাকরির বিনিময়ে তো কিনে নেওয়া যাবে না তাই না? কি অপরাধ ছিল পার্ক স্ট্রিটের সুজেটের? তার ধর্ষণের পর তাকে শুনতে হল, এ ঘটনা ছোট্ট ঘটনা, হায়রে! ইজ্জতের দাম নির্ধারণ করেছিলেন মাননীয়া, এ কোন ইনসাফ?
জাঁকজমক এর বিজ্ঞাপনের আড়ালে প্রতিদিন বাড়ছে দীর্ঘশ্বাস, ক্ষোভ, কান্না আর তা জমতে জমতে পরিণত হচ্ছে আগুনে, সেখানে এনসিআরবি’তে তথ্য না পাঠালেও চেপে রাখা যাচ্ছে না, যে এ রাজ্য নারীর বিরুদ্ধে হিংসায় উপরের দিকে। শাসক দলের বিধায়ককেই ওয়েব সিরিজ বানাতে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের নারী পাচার নিয়ে, কারণ নারী পাচার যে বাড়ছে রোজ। 'সেফজোন 'হিসাবে চিহ্নিত হচ্ছে রাজ্য, কিন্তু উন্নয়নের আর চটকদার ভাষণে পেছনে, ফেলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে এই নির্মম সত্যকে, যে এ রাজ্যের মেয়েরা ভালো নেই, ভালো নেই মায়েরা। মা মাটি মানুষ এর কথা তাই আজকাল আর তেমন ওদের মুখে শোনা যাচ্ছে না তাই না? বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে মেয়েদের নিরাপত্তার উদাহরণ বারে বারে স্মৃতি পটে ভেসে উঠছে মানুষের। নাঃ রং দেখা হতো না রাজনীতির, অপরাধীর একমাত্র পরিচয় ছিল সে অপরাধী, প্রশাসন চলত সেভাবে। আজ পাড়ায় পাড়ায় শাসক দলের আশ্রয়ে থাকা উঠতি মস্তানদের অঙ্গুলি হেলনে চলছে পুলিশ, তাই অনেক সময়ই অভিযোগের এফআইআরও দায়ের করতে চাইছে না তারা, এই না-ইনসাফির প্রতিকার চাইতে হবে না, কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে না ওই তৃণমূলী নেতা সহ পুলিশদেরও। তাই ইনসাফ চাই ইনসাফ।
প্রতিদিন দেশে বাড়ছে দ্বেষ-বিদ্বেষ। মানুষে মানুষে সাধারণ সম্পর্ককে বিষাক্ত করে দিচ্ছে ওরা। বিদ্যালয় যেখানে শিশুরা বন্ধুত্ব শেখে, ভালবাসতে শেখে, সম্প্রীতি শেখে, সেখানে উত্তর প্রদেশের বিদ্যালয়ের ঘটনা যা সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, তাতে শিউরে উঠেছি আমরা। এ কোন ভারত, যেখানে মুসলিম সহপাঠীকে অন্য সহপাঠীদের দ্বারা থাপ্পড় মারানো হয়? ছোট শিশুদের এ কোন শিক্ষায় শিক্ষিত করবে বিদ্যালয়, ছোট ছোট কুঁড়িদের ফুটবার পথে না চালিত করে এতো বিকৃত মানসিকতার জন্ম দেওয়াবে, যারা করছে, যারা করাচ্ছে, দায়ী করতে হবে না তাদের? মহম্মদ ঈসার, মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী ছেলেটা, দিল্লির সুন্দরনগরীর কাছে একটি মন্দিরে, শুধুমাত্র প্রসাদ খাওয়ার অপরাধে তাকে থামের সাথে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সেই যুবকের হাহাকার করা মাকি এই ‘বে- ইনসাফি’র ইনসাফ চাইবে না? ৫৫বছর বয়সি জহিরউদ্দিন, প্রতিবন্ধী ট্রাক চালক, তাকে বিহারের সারান জেলায় গোরক্ষকদের জমায়েত পিটিয়ে হত্যা করল। মুসলিম, শুধু এই তার অপরাধ! রবীন্দ্রনাথের ভারতে, নজরুলের ভারতে, রবিশঙ্করের ভারতে, আমজাদ আলির ভারতে চলবে এই শাসন? জবাব চাইব না আমরা? উত্তর প্রদেশের বেরিলির একটি সরকারি বিদ্যালয়ের সকালের প্রার্থনায় শিশুরা ইকবালের একটি বহুল প্রচলিত কবিতা আবৃত্তি করায় ওই স্কুলের অধ্যক্ষ ও অন্য একজন শিক্ষককে সাসপেন্ড করা হয়। এটাই কি আমার ভারত, প্রশ্ন করব না আমরা, যেখানে 'সারে জাঁহাসে আচ্ছা'র স্রষ্টা ইকবালের কবিতা আবৃত্তি করা নিষিদ্ধ হয়ে যাবে? বারে বারে আক্রমণের টার্গেট করা হচ্ছে মুসলিমদের। "সবতীর্থের আঁকা বাঁকা পথ ঘুরে প্রেমের তীর্থ ভারততীর্থে মেশে" এই যেখানে ছিল পথ, সেই ভারতে আজ "One country, One Nation, OneTax,One,One...."সবকিছু এই ছকে ফেলতে চাওয়া হচ্ছে। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য, যে ভারতের মর্মবাণী ছিল আজ তাকে ভেঙে ফেলতে চাইছে বিজেপি। 'শৃন্বন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্র ' যে ভারত বলত আজ সেখানে আলেয়া আর অসীমার মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে। আলেয়ারা কি খাবে, কি পড়বে, কোনদিকে তাকাবে, সবেই তো চলবে নজরদারি, এ কি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, না কি পুলিশি রাষ্ট্র, জানতে চাইতেই হবে আমাদের।
রাজ্যে মুসলিমদের 'মসীহা' সাজছেন মুখ্যমন্ত্রী, কিন্তু তাদেরতো মানুষ না, 'দুধেল গাই 'হিসেবে ভাবেন তিনি। তাই দুর্নীতিতে আটকে থাকে মাদ্রাসারও নিয়োগ সেখানে ধরনায় বসলে হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচড়াতে টেনে ভ্যানে তোলে পুলিশ, ওই চাকরি প্রার্থীদের, তাদের মা, বোন, স্ত্রীদের কথা তখন ভাবেন মাননীয়া, নাকি বিজেপির জুজু দেখিয়ে ওই সম্প্রদায়ের ভোট গ্যারান্টি করেন অন্যদিকে দেশজুড়ে বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য গড়ে ওঠা ইন্ডিয়া ব্লকের সভার দিনেই ভাইপোকে রক্ষার জন্য মোদীজীর সাথে সেটিং করেন, তখন আর কোনও সেলিনা, তহমিনা, রুকসানাদের কথা আপনার মনে পড়ে না তাই না! আপনি বিজেপি’র বিরুদ্ধে ছদ্ম লড়াই করেন, আবার অন্যদিকে আপনার পুলিশই আনিস খানকে বা মইদুল মিদ্যাকে খুন করে এই দ্বৈত চরিত্রে মুখোশের আড়ালে মুখটা যে ধরা পড়ে যাচ্ছে মাননীয়া।
কাজের বাজার শুনশান। বছরে ২কোটি বেকারের চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া মোদীর আমলে স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বেকার। মহিলারা এই প্রশ্নে সব সময়ই থাকে পেছনে। তাই পুরুষের মধ্যে বেকারির হার যখন ৪.৩% সেখানে মহিলাদের মধ্যে এই হার ৮.৭%। নানান পরিসংখ্যানগত কারচুপিতে কমিয়ে বলা হলেও বেকারের সংখ্যা আজ কম করে ৭কোটি হবে, অর্থাৎ প্রতি ১৮জনে একজন বেকার। আর কে না জানে শিল্প হোক বা পরিষেবা, স্থিতিশীল কাজের সংখ্যা রোজই কমছে। দিন, কাল, ঋতু, মাস সব কিছুর উপর নির্ভরশীল এদের কাজ, তারপর নেই কোনও সামাজিক সুরক্ষা, অস্থিতিশীলতা তো মেয়েদের কাজে আরো বেশি, তার ওপর আছে গৃহস্থালির কাজের বোঝা, যার তো মজুরি নেই, ফলে নেই কোন মাপও। আর কাজে যোগ দিয়ে তারপর কাজ চলে যাচ্ছে এক্ষেত্রে মেয়েদের অবস্থা খুবই (vulnerable) ভঙ্গুর। যেখানে 'আকবর বাদশার সাথে হরিপদ কেরানীর' মতো কোনো ভেদ নেই আইটি সেক্টরের ‘রুমঝুমি’ অথবা নির্মাণ শিল্পের ‘মালতী’র মধ্যে। সবচেয়ে আগে কাজে কোপ পড়ে মহিলাদের ওপর। এই প্রতারণা, ‘না-ইনসাফি’র বিরুদ্ধে হবে না মহিলারা সংগঠিত, চাইবে না ইনসাফ?
রাজ্যেও চলছে একই নীতির ব্লুপ্রিন্ট, তাই স্থায়ী চাকরি নেই, মেধাকে পায়ে দলে শুধু প্রশ্নাতীত আনুগত্যের উপর নির্ভর করে, চুক্তি ভিত্তিক কিছু কাজ, যেখানে হককে পিছনে ফেলে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে এযেন দয়ার দান। সামনে দিয়ে নাম মাত্র কিছু ভাতায় নিয়োগ করা হচ্ছে কর্মীদের পেছন দিয়ে চুরি কাটমানিতে অভ্যস্ত করে তোলা হচ্ছে তাদের।
“রাজস্থানের একজন সবল মানুষ তার প্রিয় উটটিকে ফাঁকি দিয়ে রাতের খাওয়া সেরে নিচ্ছে / এই মুহূর্তে সে ভুলে যাচ্ছে তার রমনীর মুখ তার ছেলের মুখ”৷ ..... কবি কবিতা লিখেছিলেন। কৃষিক্ষেত্রে এটাই বাস্তব চিত্র গ্রাম ভারতের। ফসলের দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা, পাচ্ছেন না সহায়ক মূল্য। কর্পোরেটের পায়ের তলায় গোটা কৃষিক্ষেত্রকে বেচে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি সরকার, আর রাজ্যে চলছে লুট। কৃষক পাচ্ছে না ফসলের দাম ধানের দাম অথচ ফড়েদের আঙুল ফুলে কলাগাছ। প্রতিক্ষেত্রেই আছে রাজ্যের শাসক দলের দাদাগিরি। কেমন করে কাজ পাবে রিনা কিস্কু আর সুমিতা রায়রা। এর ইনসাফ চাইতে হবে না আমাদের?
এরকম এক পরিবেশেই বিজেপি সরকার বিক্রি করে দিতে চাইছে, যা কিছু মানুষের, যা কিছু জনগণের তেমন সবকিছু। রেল, ব্যাঙ্ক বিমা, টেলিফোন, জল,জঙ্গল সব। একই ভাবে রাজ্যে কারখানার জমি, ট্রামের জমি, বিদ্যুৎ বেচে দেওয়া হচ্ছে, আর তখনই মানুষের যন্ত্রণাকে, না পাওয়াকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে কেন্দ্রে রাজ্যে শুরু হয়েছে নকল ঝগড়া। কে কটা ধর্মস্থান বাড়াবে, কত বড় রামমন্দির না জগন্নাথ মন্দির হবে তার টক্কর হচ্ছে। "We,the people of India " লেখা প্রস্তাবনা, দেশের সংবিধান তো ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেছিল, রাষ্ট্রকে সরকারকে কোনো ধর্মকে তোল্লাই দেওয়ার কথাতো বলেনি, তাহলে সরকার কেন নিপা, রেবেকা হাসিনাদের ড্রপআউট হওয়া থেকে আটকানোর কথা চিন্তা করবে না? হিজাব পরাকে আটকাতে উন্মত্ত গেরুয়া বাহিনীর ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে কেন সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেচে দেওয়াকে আটকাবে না? রামনবমীতে অস্ত্রের মিছিলের প্রতিযোগিতার আগে কেন রাজ্যে তুহিনা খাতুন ( বর্ধমানের তৃণমূলী পরিবারের মেয়ে, যে তৃণমূলীদের জন্য আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছিল) বা হাঁসখালির তরুণী , তাদের মৃত্যুকে আটকাতে কেন পদক্ষেপ নেওয়া হবে না? এসব কিছুর ইনসাফ চাওয়ার দিন আজ।
যৌবনের জলতরঙ্গ যখন পাহাড় থেকে পথ কেটে কেটে সাগরের দিকে এগিয়েছে, তখন এ রকম প্রতিটি অংশের 'না-ইনসাফির' বিরুদ্ধে ইনসাফের দাবিগুলি ঐ পথের প্রান্তে জনতার মুখরিত সখ্যে মিলে গেছে। আর সেই মুহূর্তে কারা যেন ভাষা সন্ত্রাসের ফরমান জারি করে জানতে চেয়েছিল, কেন ইনসাফ? লক্ষ কণ্ঠে উত্তর এসেছে আমরা চাই ইনসাফ। one country, one leader, one language নয়, ভিন্নতার মধ্যে, বহুরূপতার মধ্যে একতাকে নিয়েই আমরা পথ চলি। আমার দেশ আমার রাজ্য আমাদের এই রকমই শিখিয়েছে। হকের দাবি আমরা ধক নিয়েই করি। তাই ভাষা সন্ত্রাসেরও মোকাবিলা করব আমরা। বিচারও আমরাই চাই, স্বাধীনতার গানও আমরাই গাই, আবার ভুখমারিসে, বেকারিসে, আজাদি চাইতে লড়াই করি আমরা। জানি লড়াইয়ের ভাষার কোনও প্রাচীর থাকে না। তাই যৌবনের ইনসাফ যাত্রায় সমস্ত জায়গায় শামিল হয়েছেন মহিলারা, মালা পরিয়েছেন, স্লোগান দিয়েছেন, সংবর্ধনা দিয়েছেন। পথ হেঁটেছেন, জল দিয়েছেন, পাশে থেকেছেন, সাথে থেকেছেন। বাঁধ ভেঙে ঢল নামিয়ে পঞ্চায়েতের প্রতিবাদী, প্রতিরোধী মহিলারা শামিল হয়েছেন। শামিল হয়েছেন রেগার কাজের মজুরি না পাওয়া বঞ্চিত মহিলা, থেকেছেন অসংগঠিত ক্ষেত্রের মহিলারা, থেকেছেন কৃষক রমনী, থেকেছেন খেত মজুর মহিলা, থেকেছেন গৃহস্থালির কাজের বোঝা মাথায় নেওয়া, কিন্তু কাজের স্বীকৃতি না পাওয়া মহিলা। যৌবনের স্লোগানে গলা মিলিয়ে, মিশিয়ে দিয়েছেন নিজেদের দাবি। পথের ধারে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেছেন, ওর আসার জন্য, ওদের আসার জন্য। ‘প্রাণের সবুজে অনাগত কুঁড়ি’কে অভ্যর্থনায় পেতে দিয়েছেন নিজেদের হৃদয়। তাই হৃদয়ের দুকূল ছাপানো আবেগকে লড়াই এর বাস্তবতায় রাঙিয়ে নিতে সেদিন, মানে ৭ জানুয়ারি আমরা, মহিলারা থাকবো উদ্বেলিত যৌবনের সাথে লড়াইয়ের কল কল্লোলে ব্রিগেড প্যারেড ময়দানে। জানি আপনার সাথে ওখানেই দেখা হবে, হবেই।
Comments :0