KMC WORKER DEATH

সুরক্ষা বিধি শিকেয়, মাটি চাপা পড়ে মৃত্যু শ্রমিকের

কলকাতা

KMC WORKER DEATH KOLKATA BENGALI NEWS এই গর্তে চাপা পড়েই প্রাণ হারিয়েছেন সলমন

কলকাতা কর্পোরেশনের পাইপ লাইনে ধ্বস। মাটি চাপা পড়ে প্রাণ হারালেন এক শ্রমিক। বুধবার রাতে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে পার্ক সার্কাস মোড় সংলগ্ন ডন বস্কো স্কুলের সামনে। 

পুলিশ সূত্রে খবর, বুধবার রাত ১০টা নাগাদ সুরাবর্দী এভিনিউয়ে ডন বস্কো স্কুলের সামনে কলকাতা কর্পোরেশনের পাইপ লাইনের কাজ চলছিল। সেখানে কাজ করছিলেন সন্দেশখালির বাসিন্দা বছর ২২’র সলমন মল্লিক। হঠাৎ ধ্বস নামে। ১২ ফুট নীচে মাটির তলায় চাপা পড়েন সলমন। অন্যান্য শ্রমিকরা সাহায্যের জন্য ছুটে এলেও তাঁকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ২০ মিনিটের কাছে মাটি চাপা পড়েছিলেন ছলমন। পরবর্তীকালে জেসিবি মেশিন এনে তাঁর নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। 

উদ্ধারের পরে সলমনকে চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। 

সরকারি ড্রেনে কাজ করতে গিয়ে শ্রমিক মৃত্যু কলকাতা শহরে প্রথম নয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কুঁদঘাটের পূর্ব পুঁটিয়ারিতে ড্রেনের পাম্পিং স্টেশন তৈরির মৃত্যু হয় ৪ শ্রমিকের। তাঁরা ৪জনই ছিলেন মালদহের হরিশচন্দ্রপুরের বাসিন্দা। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আরও ৩জনকে। 

সেই সময় অভিযোগ ওঠে, সুরক্ষা বিধি জলাঞ্জলী দিয়ে শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করাচ্ছিলেন ঠিকাদার। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয়, প্রত্যেক শ্রমিকের পরিবারকে ১০ লক্ষ করে টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। 

কিন্তু তারপরেও যে সরকারি প্রকল্পে কর্মরত শ্রমিকদের প্রাণের সুরক্ষা অনিশ্চিত, তা প্রমাণ করল বুধবারের ঘটনা। 

এদিনের ঘটনার পরে উত্তেজিত হয়ে কাজ বন্ধ করে দেন বাকি শ্রমিকরা। তাঁদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ছাড়াই তাঁদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে গিয়েই ছলমনের জীবন চলে গিয়েছে। 

যদিও শ্রমিকদের এই বিক্ষোভকে ‘‘কিছু বাইরের লোকের উষ্কানি’’ বলে দাগিয়ে দিয়েছেন কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র ফিরহাদ হাকিম। যদিও স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে পরিস্থিতি সামলাতে তিনি যোগ করেছেন, ‘‘ দুঃখজনক ঘটনা। আমরা প্রাণ ফেরাতে না পারলেও নিহতের পরিবারের পাশে আছি।’’

কিন্তু কী ভাবে নিহত শ্রমিকের পাশে দাঁড়িয়েছে কলকাতা কর্পোরেশন, তা ২৪ ঘন্টা পেরোনোর পরেও স্পষ্ট নয়। 

কলকাতা কর্পোরেশনের ইঞ্জিনিয়ারদের একটা অংশ জানাচ্ছেন, সুরাবর্দী এভিনিউয়ে রাস্তা কেটে ড্রেনের কাজ চলছে। মাটির ১২ ফুট গভীরে ৭০০ মিলিমিটারের পাইপ বসানো হচ্ছে। কর্পোরেশনের রুলবুক অনুযায়ী, এই জাতীয় কাজ করার সময় গর্তের দুই পাশে কাঠের তক্তার বেড়া দিতে হয়, যাতে এই ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে না পারে। কিন্তু বুধবার রাতের ঘটনা থেকেই স্পষ্ট, রুলবুক অমান্য করেই কাজ করাচ্ছিলেন ঠিকাদার। সুরক্ষা বিধি অমান্য করার ফলেই প্রাণ হারাতে হয়েছে সলমনকে। 

ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, অলিখিত নিয়ম অনিযায়ী মোটা টাকা ঘুষ না দিলে তৃণমূল আমলে কলকাতা কর্পোরেশনে ওয়ার্ক অর্ডার মেলে না। বহু ক্ষেত্রেই ঠিকাদাররা অভিযোগ জানিয়েছেন, একাধিক মেয়র পারিষদ সদস্যের টাকার খিদে না মেটালে কাজ শুরু করা যায় না। সেই সমস্ত খরচ সামলে লাভের হিসেব কষতে গিয়ে শ্রমিক সুরক্ষার সঙ্গে আপোষ করতে হয় ঠিকাদারদের। প্রকল্প শ্রমিকদের অধিকাংশটাই দূরবর্তী জেলার অসংগঠিত শ্রমিক। তাই তাঁদের বঞ্চনা করার সুযোগও বেশি। 

Comments :0

Login to leave a comment