পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে ফের বাঙালি পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মৃত পর্যটকের নাম রাজনারায়ন দে (৫৫)। পূর্ব বর্ধমানের বাসিন্দা। মঙ্গলবার বর্ধমান থেকে মৃত পর্যটক রাজনারায়ন দে সহ আটজনের একটি পর্যটকদের দল কালিম্পঙে বেড়াতে আসেন। কালিম্পঙ থেকে পর্যটকদের দলটি সোজা পৌঁছে যান সিটঙ’এ। সিটঙের একটি হোম স্টে তে রাতযাপনের জন্য তাঁরা ওঠেন। রাতের বেলায় হঠাৎই বাঙালি ওই পর্যটক শারিরীকভাবে অসুস্থতা বোধ করেন। শারিরীক পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। বেশ কিছু সময় পর একটু সুস্থতা বোধ করলে রাতে সকলেই একসাথে খাওয়াদাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়েন। বুধবার সকালে পর্যটকদের দলটির কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে যাবার কথা ছিল। কিন্তু সকালে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে যাবার আগে আচমকাই ওই পর্যটক হোম স্টে—র ঘরেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। দ্রুত তাঁকে স্থানীয় রম্ভি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক পর্যটককে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য পর্যটকের মৃতদেহ কালিম্পঙ জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ময়নাতদন্তের পরেই মৃতদেহটি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
এই পর্যটক দলে থাকা অপর একজন পর্যটক মনোজ মাঝি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। সকালে অনেক ডাকাডাকি ও চেষ্টার পরেও জ্ঞান না ফেরায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত বলে জানান।
পাহাড়ে বেড়াতে এসে সম্প্রতি সময়ে পর পর পর্যটকদের মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে। প্রশ্নের মুখে পড়েছে কালিম্পঙ জেলা প্রশাসন। একের পর এক পর্যটকের মৃত্যুতে জিটিএ’র তরফে পাহাড়ে বেড়াতে আসা পর্যটকদের জন্য লাগু করা স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। স্বাভাবিকভাবেই জিটিএ’র ভূমিকা নিয়েও শোরগোল পড়েছে। পাশাপাশি উদ্বেগ বাড়ছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের মধ্যেও।
প্রসঙ্গত এই বাঙালি পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে গত তিন মাসের পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে মোট ছয় জন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ছয় পর্যটকের মধ্যে চারজন দার্জিলিঙ বেড়াতে গিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। বাকি একজন পর্যটক মারা যান মালবাজারে বেড়াতে গিয়ে।
সিটঙের যে হোম স্টে—তে রাত যাপনের জন্য পর্যটকদের দলটি উঠেছিল সেই হোম স্টে’র কর্ণধার অঞ্জু রাই বলেন, ‘‘ আটজনের পর্যটক দলে থাকা মৃত পর্যটক রাতে অসুস্থতা বোধ করেন। এরপর নেবুলাইজার পাম্প নেবার পরে সুস্থতা বোধ করেন। এদিন সকালে জ্ঞান না ফেরায় দ্রুত হাসপাতালে নেবার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। বাঙালি পর্যটকের মৃত্যু প্রসঙ্গে কালিম্পঙের জেলা শাসক বালাসুব্রক্ষ্মণ্যম টি জানান, আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন মৃত পর্যটক। শারিরীক অসুস্থতার কারণে পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। পর্যটকের দেহ ফেরৎ পাঠাতে জেলা প্রশাসনের তরফে সমস্ত ধরনের ব্যবস্থা করা হবে।
উল্লেখ্য নতুন বছরে গত ৬ জানুয়ারি দার্জিলিঙ বেড়াতে গিয়ে পর্যটক দীপাঞ্জন সাহা (৫৮) নামে হুগলির ভদ্রেশ্বরের বাসিন্দার মৃত্যু হয়। ওই একই দিনে মালবাজারের ওয়াসাবাড়িতে বেড়া গিয়ে আলাহিন শেখ নামে মুর্শিদাবাদের হরিহর থানার রমনামাঝপাড়ার বাসিন্দার মৃত্যু হয়। গত বছর ৪ ডিসেম্বর সান্দাকফু বেড়াতে গিয়ে উত্তর চব্বিশ পরগনার দমদমের অশোকনগরের মুকুন্দ দাস রোডের বাসিন্দা অঙ্কিতা ঘোষ (২৮) নামে এক পর্যটকের মৃত্যু হয়। ২০২৪’র ২১ নভেম্বর সান্দাকফুতে ঘুরতে গিয়ে মৃত্যু হয় কলকাতার ভবানীপুরের বাসিন্দা আশিস ভট্টাচার্যের (৫৮)র। এছাড়াও গত বছরের ২৬ মে দার্জিলিঙ বেড়াতে এসে উত্তর দিনাজপুরের এক পর্যটকেরও একইভাবে মৃত্যু হয়েছিল। তার আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে মানেভঞ্জন থেকে সান্দাকফু ট্রেকিং করতে গিয়ে ইজরায়েলের এক পর্যটক রাতে টেন্টে ঘুমন্ত অবস্থাতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে পর পর পর্যটকদের মৃত্যুর ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পাহাড় জুড়ে।
Tourist Dies
পাহাড়ে ফের বাঙালি পর্যটকের মৃত্যু
×
Comments :0