Democracy in India

গণতন্ত্র কি চিরনিদ্রার পথে, উঠলো প্রশ্ন

জাতীয়

সংসদের বাদল অধিবেশন চলেছে কোনোদিন ৩ মিনিট, কোনোদিন ১১ মিনিট, কোনোদিন ২১ মিনিট। শাসক দল দাবি করেছে, লন্ডনে রাহুল গান্ধী যা বলেছেন তার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। সংসদ চলবে কিনা, তার পূর্বশর্ত হলো এই। রাহুল নিজে বলতে চেয়েছেন, বলতে দেওয়া হয়নি। সরকারপক্ষই ভন্ডুল করে দিয়েছে সংসদ। 
দেশের বাজেট পাশ হয়ে গেছে কোনও আলোচনা ছাড়াই। মাত্র ১২ মিনিটে পাশ হয়েছে ৪৫ লক্ষ কোটি টাকার বাজেট। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কোনও কাটাছেঁড়া ছাড়াই। সব দপ্তরের বাজেট গিলোটিনে, শুধু সংসদীয় পরিভাষায় না, আক্ষরিক অর্থেই। অর্থ বিল পাশ হয়েছে, কেউ বিতর্কের সুযোগ পায়নি। 
সাংসদরা রাষ্ট্রপতির কাছে যেতে চেয়েছেন, পুলিশ আটকে দিয়েছে। 
রাজধানীতে মোদীর বিরুদ্ধে পোস্টার পড়েছে, শুরু হয়ে গেছে ধরপাকড়, শতাধিক এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সরকারি সম্পত্তি নোংরা করার বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ হয়েছে। বেঙ্গালুরুতে অভিনেতা চেতন কুমার টুইটে লিখেছিলেন, ‘হিন্দুত্ব মিথ্যার ওপরে প্রতিষ্ঠিত’। বজরঙ দল অভিযোগ দায়ের করার সঙ্গে সঙ্গেই চেতন কুমার গ্রেপ্তার, ১৪ দিনের জেল। পুলিশের দাবি, এই শব্দগুচ্ছে ‘আইন’ ভঙ্গ হয়েছে। লোকগায়িকা নেহা সিং রাঠোর গান গেয়েছিলেন কানপুরে বস্তি উচ্ছেদের সময়ে মা-মেয়ের মৃত্যুর উল্লেখ করে। বাড়িতে পুলিশ গেছে। হয়ত তিনিও গ্রেপ্তার হবেন। 
রাহুল গান্ধী ২০১৯সালে কর্ণাটকে জনসভায় নীরব মোদী, ললিত মোদীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর পদবির তুলনা করেছিলেন। মামলা হলো গুজরাটে, করলেন এক বিজেপি বিধায়ক। যাঁর সম্পর্কে রাহুল কোনও কথাই বলেননি, অথচ মানহানি হয়েছে নাকি তাঁরই। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাঁর মানহানি হয়েছে মামলা করতে হবে তাঁকেই। মানহানি আইনের ধারাই তা। কিন্তু সুরাটের নিম্ন আদালত রায় দিল, রাহুলের ভাষণে বিরাট অংশের মানুষের মানহানি হয়েছে। মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট ওই রায় দিলেন না তাঁকে দিতে হলো, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ২৪ ঘণ্টা কাটলো না, জামিনে থাকা দেশের অন্যতম প্রধান বিরোধী নেতার সাংসদ পদ কেড়ে নেওয়া হলো। ‘আইনে’ আছে। সেখানেও প্রশ্ন উঠেছে সংবাদমাধ্যমে পড়ে অধ্যক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিলেন নাকি রাষ্ট্রপতি? আদালতের রায়ের সার্টিফায়েড কপি পাবার আগেই বিদ্যুৎ গতিতে সাংসদ পদ খারিজ করা হলো। 
‘আইন’ নিজেই আক্রান্ত। আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু হুমকি দিচ্ছেন, ‘অনেক অবসরপ্রাপ্ত বিচারক সমাজকর্মীর মতো কাজ করেন। দেশবিরোধী কাজ করেন। কেউ ছাড় পাবেন না।’ লক্ষ্য আসলে কর্মরত বিচারপতিরা। তাঁদের ভয় দেখানো। কোনও কাজ ‘দেশবিরোধী’ তা তো স্থির হয়েই আছে। যে কাজকে বিজেপি মনে করবে দেশবিরোধী। আদানিদের সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা যে দেশবিরোধী তা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, শাসক দলের নেতারা সারিবদ্ধভাবে বলেছেন। 
এইসব গত কয়েকদিনের ঘটনা মাত্র। সংসদের মধ্যে, সংসদের বাইরে, আইনের মধ্যে, আইনের বাইরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে গুরুতর প্রশ্ন উঠে গেছে। রাহুল গান্ধীর সাংসদপদ খারিজের ঘটনার পরে শুক্রবার এক পর্যবেক্ষক মন্তব্য করেছেন, ‘বিশ্বগুরুর নতুন গণতন্ত্র’। কোনও প্রশ্ন তোলা যেখানে নিষিদ্ধ। কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ এদিন টুইটে বলেছে, ‘ভারতীয় গণতন্ত্র, ওম শান্তি’। সিপিআই(এম) সাংসদ জন ব্রিট্টাস এদিন বলেছেন, ‘ভারতের গণতন্ত্রের চিরশান্তির সময় কি এগিয়ে এল?’ প্রধানমন্ত্রী ইদানীং দাবি করছেন, ভারত হলো ‘গণতন্ত্রের মা’। অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর এদিন টুইটে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, ‘বিশ্ব দেখ, গণতন্ত্রের মা নিজের সন্তানকে হত্যা করছে’। 
১৯২৫-এও ইতালির সংসদে ‘বিতর্ক’ করতেন বেনিতো মুসোলিনি। এমনকি কমিউনিস্ট নেতা আন্তোনিও গ্রামসির সঙ্গে সংসদের মধ্যেই তাঁর সরাসরি বিতর্ক হয়েছিল। তারপর আর বিতর্ক হয়নি, ১৯২৫-২৭’র মধ্যে একের পর এক ডিক্রি জারি করে সংসদকে অথর্ব, বিরোধীদের খতম করে সরাসরি ফ্যাসিস্ত রাজ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। 
১৯৩২-এ জার্মানির রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন অ্যাডলফ হিটলার। জেতেননি, কিন্তু অনেক ভোট পেয়েছিলেন ‘জার্মানির ঊর্ধ্বে হিটলার’ স্লোগান দিয়ে। ১৯৩২-এই রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন তিনি। ১৯৩৩-র ভোটে জেতেন। জুলাই মাসে নাৎসিরা দেশের একমাত্র আইনি দল হিসাবে ঘোষিত হয়।

 

 

Comments :0

Login to leave a comment