Nandigram Rape

নন্দীগ্রামে ধর্ষণ, ১০হাজার টাকা দিয়ে মুখবন্ধের চেষ্টা তৃণমূলের

রাজ্য

 বিরোধী দলনেতার বিধানসভা কেন্দ্র। আবার গত বিধানসভা ভোটের সময়তেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন— এটা তাঁর দ্বিতীয় বাড়ি!

সেই নন্দীগ্রামেই এক নাবালিকাকে ধর্ষণের ঘটনা শাসক তৃণমূল ও পুলিশের যৌথ উদ্যোগে প্রায় ১৫দিন ধরে ধামাচাপ দেওয়া হয়েছিল। 

শুধু তাই নয় তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য নির্যাতিতা নাবালিকাকে নিদান দিয়েছিল— ‘একটি দুঃস্বপ্ন মনে করে ধর্ষণের ঘটনাটা ভুলে যাও। চাইলে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। কাউকে বলা যাবে না!’

ভয়াবহতার এখানেই শেষ নয়। তৃণমূলের পাশাপাশি পনের বছরের নির্যাতিতাকে নন্দীগ্রাম থানার পুলিশের পরামর্শ— এসব অভিযোগ নেওয়া যাবে না। যেখান থেকে এসেছো (দিল্লি) সেখানে চলে যাও, কেউ জানতে পারবে না। না হলে বিয়ে করে নাও’।

গত মে মাসে রাজ্যে ষষ্ঠ দফার ভোটের দিন, অর্থাৎ যেদিন তমলুক কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়, সেদিনই নন্দীগ্রামের বয়াল গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি গ্রামে এক নাবালিকাকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। মূল অভিযুক্ত এলাকার সক্রিয় তৃণমূল কর্মী মুরতাজা। সে বিবাহিত। তাকে আড়ালেই মমতা ব্যানার্জির দ্বিতীয় ‘ঠিকানায়’ নেমে পড়েছে তৃণমূলী বাহিনী।

নির্যাতিতা ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে ওই নাবালিকা তাঁর পরিবারের সঙ্গে দিল্লিতেই থাকে। নন্দীগ্রামে মামা বাড়িতে আসে কয়েকদিনের ছুটিতে। তার মামার বাড়ির পাশেই তৃণমূল কর্মী মুরতাজার বাড়ি। ২৫ মে মামার বাড়ির সদস্যরা বাড়ির বাইরে গিয়েছিলেন কিছু সময়ের জন্য।  নাবালিকা একা ছিল বাড়ির মধ্যে। তখন রাত প্রায় ৯টা। সেই সুযোগে মুরতাজা বাড়িতে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে। ওই নাবালিকা কান্নাকাটি করলে তাঁকে হুমকি দেয় এই ঘটনা জানাজানি হলে তাঁকে ও তার মামাকে প্রাণে মেরে দেওয়া হবে। তাঁর মামার দোকান ভেঙে দেওয়া হবে। ফলে মুখ বুজে সব সহ্য করে নেয় ওই নাবালিকা। ঠিক দু’দিন পর আবারও বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগ নিয়ে অভিযুক্ত ওই তৃণমূল কর্মী নাবালিকাকে হাত ধরে টানাটানি করে বাড়ির মধ্যে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সেই সময় নির্যাতিতার মামিমা সব ঘটনা দেখে ফেলে। তখনই অভিযুক্ত ব্যক্তি পালিয়ে যায়। 

নির্যাতিতার কথায়— ‘এমন ঘটনা হওয়ার পর যখন সবকিছু জানাজানি হয় তখন মামা আর আমি এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যের কাছে গেলে ওই সদস্য বলে একটা দুঃস্বপ্ন মনে করে সবকিছু যেন ভুলে যাই। যদি আমরা চাই তাহলে ১০ হাজার টাকা দেবে। তা নিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখতে হবে। পঞ্চায়েত সদস্যের কাছে এমন শোনার পর নন্দীগ্রাম থানায় গেলে সেখানকার ডিউটি অফিসার জানায় এখন আইসি ছুটিতে আছে এখন এসব অভিযোগ নেওয়া যাবে না। পুলিশের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়ে যেখান থেকে এসেছো অর্থাৎ দিল্লিতেই ফেরত চলে যাও। এই ঘটনা কেউ জানতে পারবে না নতুবা বিয়ে করে নাও।’ 

নির্যাতিতা আরও বলে পুলিশের এমন আচরণে রীতিমতো হতবাক হয়ে পড়ি। মামা-মামি এখানকার সিপিএমের লোকেদের জানায়। তারা বলে এটা অপরাধ। ন্যা য় বিচার পাবে। এরপর তারাই পুলিশকে বলে অভিযোগ নিতে হবে। যে এমন কাজ করেছে তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে। আমাদের নিয়ে থানায় যায়। তবুও পুলিশ ঘুরিয়ে দেয়। বারে বারে চাপ দিতে ১০ জুন অভিযোগ নিয়েছে। কিন্তু এখনও গ্রেপ্তার হয়নি।’

নির্যাতিতা বলে "পুলিশ যখন চেকআপ করাতে নিয়ে যায় তার আগে আমাকে বলে অভিযোগ তুলে নে, নাহলে অনেক কষ্ট হবে কিন্তু। কেস হলে তখন সমস্যায় পড়বি। তার থেকে দিল্লি চলে যা সেখানে গিয়ে বিয়ে করে নে। কিন্তু আমি আমার অভিযোগ থেকে সরিনি।’ 

নির্যাতিতার অভিযোগে পকসো আইনে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। তবে ঘটনার এতদিন হয়ে গেলেও অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। অভিযুক্তকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার এবং যথোপযুক্ত শাস্তির দাবিতে ডিওয়াইএফআই’র উদ্যোগে থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়।  তার আগে নন্দীগ্রাম বাজারে বিক্ষোভ মিছিল হয়। নেতৃত্ব দেন ডিওয়াইএফআই নেতা ইব্রাহিম আলী, মণিরুল ইসলাম, সাবির আলি শা, ইব্দুল হোসেন সহ অন্যান্যরা। উপস্থিত ছিলেন নির্যাতিতা ও তার পরিবারের লোকেরাও।  ইব্রাহিম আলী বলেন তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকেই যেভাবে ধর্ষকদের আড়াল করার চেষ্টা করেছে তার নবতম সংযোজন এই নন্দীগ্রাম। এতদিন এই ঘটনা হয়ে যাওয়ার পরেও অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হয়নি। বরং পুলিশ প্রশাসন, তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য সবাই অভিযুক্তকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। দুদিন সময় পুলিশকে দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে যদি অভিযুক্ত গ্রেপ্তার না হয় তাহলে নন্দীগ্রাম জুড়ে বৃহত্তর আন্দোলন হবে।’

এঘটনায় পুলিশ কিছুই বলতে চায়নি। ফোন করা হলে জানায় তদন্ত চলছে।

Comments :0

Login to leave a comment