প্রবন্ধ
সুন্দরলাল বহুগুণা
অর্ঘদেব গায়েন
মুক্তধারা
গাছই জীবন, আর সুন্দরলাল বহুগুণা ছিলেন এমনি একজন ভারতীয় পরিবেশকর্মী এবং গান্ধীবাদী শান্তি কর্মী যিনি পরিবেশের সেবায় উৎসর্গ করেছেন নিজের জীবন । সুন্দরলাল বহুগুণা ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে গঢ়য়ালের মারোরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এই গ্রামের পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে নদী, তাই শৈশব থেকেই গঙ্গার প্রতি গভীর প্রেম জন্মায়। সুন্দরলাল বহুগুনার আসল পদবী বন্দোপাধ্যায়। গ্রামের স্কুল এই পড়াশোনা। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে লাহোরের সনাতন ধর্ম কলেজ থেকে বি এ ডিগ্রী লাভ করেন।
খুব তরুণ বয়সেই এই মানুষটি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। নানা সময় যোগ দিয়েছিলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের আন্দোলনে। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই যোগ দিয়েছিলেন গান্ধীজীর পরিচালিত সত্যাগ্রহ আন্দোলনে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় গঢ়বাল অঞ্চলে জাত পাত বিভেদের বেড়াজাল মুছে ফেলতে শুরু করেছিলেন অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে লড়াই। কর্মসূত্রে সাক্ষাৎ হয় গান্ধীজীর শিষ্যা মীরা বেন এর সাথে। মীরারসঙ্গিনী বিমলা কে ভালো লেগে যায় সুন্দরলাল বহুগুণার। পরবর্তীকালে বিবাহের মাধ্যমে তাকে বরণ করে নেন জীবনসঙ্গিনী রূপে তথা আন্দোলন সঙ্গিনী রূপে। তিনি মনে করতেন একমাত্র গ্রামের উন্নতি সাধনের মাধ্যমে সমগ্র দেশের উন্নতির সম্ভব। তিনি গ্রামের মেয়েদের নিয়ে শুরু করেছিলেন নেশা বিরোধী আন্দোলন। নেশার পিছনে ব্যয়রত পুরুষদের সংসারে অভাব অনটন ও অশান্তির সমাপ্তি ঘটানো এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল। ৫ জেলায় সমস্ত মদের দোকান বন্ধের মাধ্যমে এই আন্দোলন সাফল্য লাভ করে।
সুন্দরলাল বহুগুণা আর জীবনে শ্রেষ্ঠতম কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয় চিপকো আন্দোলন। তিনি চিপকো আন্দোলনের অন্যতম একজন নেতা হিসাবে সমগ্র ভারত বিখ্যাত। এর সূচনা হয় স্বাধীনতার পর পর ইংরেজ দিগের হিমালয় অঞ্চলের বৃক্ষ ধ্বংস দ্বারা। স্বাধীনতার পরেও ইংরেজরা জোর করে হিমালয় অঞ্চলের জঙ্গল ধ্বংস করে নির্মাণ করতে থাকে বাড়িঘর। তখন ১৯৭৪ সালের প্রায় শেষ কোম্পানির লোকেরা গাছ কাটতে এলে গ্রামের মেয়েরা তাদের বাধা দিতে উদ্যত হয়। প্রতিবাদে কোম্পানির লোকেরা কুড়ুল নিয়ে এগিয়ে এলে তারা গাছগুলিকে জড়িয়ে ধরে , প্রাণ দিয়ে গাছ বাঁচাতে ও তারা রাজি। এরপর এই আন্দোলনে আবির্ভাব ঘটে পরিবেশ বন্ধু সুন্দরলাল বহুগুণার। তিনি চিপকো আন্দোলনের কথা সমগ্র হিমালয়ের মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়িয়েছেন গ্রামে গ্রামে। তার এই প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক স্তরে মর্যাদা পায়। প্রকৃতপক্ষে তারই চেষ্টায় বহু জায়গায় শুরু হয়েছিল বনসৃজন। তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এর সাথে দেখা করেছিলেন ও বৈঠকের মাধ্যমে হিমালয় অঞ্চলে ১৫ বছরের জন্য সবুজ গাছ কাটা নিষিদ্ধ করার পথ প্রশস্ত করেছিলেন বলে জানা যায়।
বহুগুনা যে অন্য বড় প্রচারণার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তা ছিল ভাগীরথী নদীর তীরে তেহরি বাঁধ এবং এর ফলে যে প্রতিকূল পরিবেশগত প্রভাব পড়বে তার বিরুদ্ধে। বহুগুনা যখন ঘুরে বেড়াচ্ছেন দেশের প্রান্তে প্রান্তে সেই সময় সরকারের তরফে শুরু হয় তেহরি বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প। এই বাঁধ নির্মাণ হলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে গোটা গঢ়বাল অঞ্চলের জনপদ। বহুগুণা এই বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে বহু অনশন করেন কিন্তু শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সত্ত্বেও ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় বাঁধ নির্মাণ শুরু হলে তিনি নদীর কাছে ছোট্ট টিলা কোটিতে চলে যেতে বাধ্য হন।
বিপত্তি সত্ত্বেও বহুগুণার প্রচার অভিযান অব্যাহত ছিল । তার কর্মকাণ্ড অনেক তরুণ সবুজ নিচে ক্রুসেড়ারদের অনুপ্রাণিত করেছিল। এমন মানুষদের নিয়ে ক্ষমতা কখনোই স্বস্তিতে থাকে না। এই মানুষটি প্রকৃতি ও মানুষের মিলিত জীবনের সুস্থতার চেয়ে কোন কিছুকে বড় বলে মনে করেন নি। ২০২১ খ্রিস্টাব্দে ৯৪ বছর বয়সে সুন্দরলাল বহুগুণা পরলোক গমন করেন। কিছু মানুষ যখন যান সেই জায়গাটা শূন্য হয়ে যায় আর প্রয়োজনের সময় তা বুকে বেঁধে। আর বর্তমানে তার মত মানুষের প্রয়োজন আমরা সকলেই অনুভব করছি। মিনা বিচারে বৃক্ষ ছেদনের ফলে তাপমাত্রা আকাশ ছুঁয়েছে। এ যেন তার বক্তব্য “শুধু অপেক্ষা আগামী দিনের। একদিন মানুষ নিশ্চয়ই বুঝবে.... ততদিনে হয়তো দেরি হয়ে যাবে " এর বাস্তবায়ন।
নবম শ্রেণী
কল্যাণ নগর বিদ্যাপীঠ খড়দহ,উত্তর ২৪ পরগনা, ডাঙ্গাদিঘিলা, পাতুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত উত্তর ২৪ পরগনা
৯৩৩০২২২৮৩৪
অঙ্কন
সমীরণ সেন
নবম শ্রেণী, কল্যাণ নগর বিদ্যাপীঠ খড়দহ,উত্তর ২৪ পরগনা, বিবেকানন্দ পল্লী, বন্দিপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
৮৪৫০৮৪৯৩৮৩
Comments :0