Arati Horeroy

প্রয়াত আরতি হোড়রায়

জেলা

Arati Horeroy


অবিভক্ত দার্জিলিঙ জেলায় কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রবীণ নেত্রী কমরেড আরতি হোড়রায় প্রয়াত হয়েছেন। বয়স হয়েছিল ৯২বছর। বার্ধক্যজনিত কারণে রবিবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ শিলিগুড়ি হাকিমপাড়াস্থিত নিজস্ব বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পঞ্চাশের দশকে দার্জিলিঙ জেলার মহিলা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কমরেড আরতি হোড়রায় কমিউনিস্ট সংস্পর্শে আসেন। দেশভাগের যন্ত্রণা, দেশভাগের পর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, উদ্বাস্তু সমস্যা সহ কঠিন সময়ে মহিলা আত্মরক্ষা সমিতির সাথে যুক্ত হয়ে তাঁর রাজনীতিতে প্রবেশ ঘটেছিল। সেই সময়েই অবিভক্ত কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্যপদ অর্জন করেন। আমৃত্যু সিপিআই(এম)’র সদস্যা ছিলেন। 


কমরেড আরতি হোড়রায় সকলের কাছে ‘আরতীদি’ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন জেলায় কমিউনিষ্ট পার্টির বৃহত্তর পরিবারের একজন অভিভাবিকা। শিলিগুড়িতে পার্টি গড়ে তোলা ও পার্টির কাজকর্ম প্রসারিত করা, বিশেষ করে মহিলা আন্দোলনের ক্ষেত্রে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। সিপিআই(এম) দার্জিলিঙ জেলার বিগত সম্মেলনের রক্তপতাকা উত্তোলিত হয়েছিল তাঁর হাতেই। তাঁর মৃত্যুতে সিপিআই(এম) দার্জিলিঙ জেলা কমিটির পক্ষ থেকে শোকজ্ঞাপন করা হয়েছে। প্রবীণ নেত্রীর প্রয়াণে ফোনে গভীর শোক জানিয়েছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, মৃদুল দে। সোমবার সকালে শিলিগুড়ি পার্টির জেলা দপ্তর অনিল বিশ্বাস ভবনের সামনে প্রয়াত প্রবীণ নেত্রীর মরদেহ নিয়ে আসা হলে সেখানে রক্তপতাকা ও ফুলের মালা দিয়ে অন্তিম শ্রদ্ধা জানানো হয়। শ্রদ্ধা জানান অশোক ভট্টাচার্য, জীবেশ সরকার, পরিমল ভৌমিক, জয় চক্রবর্তী, সৌরভ সরকার, মহিলা নেত্রী তানিয়া দে, গণশক্তি পত্রিকার শিলিগুড়ি সংস্করণের পক্ষে দেবব্রত রায়, শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান হরিসাধন ঘোষ, এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলার নান্টু পাল সহ অন্যান্যরা।  


পারিবারিকভাবে তাঁর পৈত্রিক বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি, বামপন্থী ঘরানা এবং কমিউনিষ্ট পার্টি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই দুই পরিবারের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। প্রয়াত কমরেডের মা দক্ষবালা রাহা ছিলেন স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়ের মহিলা আত্মরক্ষা সমিতির শিলিগুড়ির অন্যতম একজন নেত্রী। পরবর্তী সময়ে এই পরিবারের ঐতিহ্য অনুসারে দক্ষবালা রাহার ছেলেমেয়েরাও সকলেই কমিউনিষ্ট আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। আরতি হোড়রায় এবং তাঁর ভাইবোনেদের প্রেরণাতেই পরবর্তী প্রজন্মের প্রায় সবাই কমিউনিষ্ট পার্টি এবং বামপন্থী আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়েন। তৎকালীন সময়ে কমরেড আরতি হোড়রায়ের বাড়ি ছিল অবারিত দ্বার। দীনেশ মজুমদার, বিমান বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সুভাষ চক্রবর্তী, শ্যামল চক্রবর্তীসহ ছাত্রযুব আন্দোলন ও পার্টির রাজ্য নেতাদের অবাধ যাতায়াত ছিল সেই বাড়িতে। নিজেই রান্না করে সবাইকে খাওয়াতেন। পরিবারের সকলেই পার্টি অন্তপ্রাণ। সেই সময়ে ওই বাড়িতেই পার্টির অজস্র সভা, মিটিং অনুষ্ঠিত হতো। তাঁর জীবনের শেষদিকে ব্যক্তিগত দুঃখজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। দুর্ঘটনায় এক ছেলের মৃত্যু হয়। সেই শোক কাটিয়ে ওঠার বেশ কিছুদিন পরেই অসুস্থতার কারণে কন্যাসম পূত্রবধূ কমরেড রূপা হোড়রায়ের জীবনাবসান ঘটে। পরবর্তীতে তাঁর অপর সন্তান গণশক্তি পত্রিকার সাংবাদিক কমরেড দীপক হোড়রায় প্রয়াত হন। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার পাশাপাশি এই সমস্ত শোকের কারণে তিনি আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন। 
 

Comments :0

Login to leave a comment