RG KAR

পুলিশি চোখরাঙানি উপেক্ষা করে ‘অভয়া’র নামে স্কলারশিপ’ চালু করতে চলেছেন চিকিৎসকরা

কলকাতা

আর জি করের যে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে, তাঁর ‘নাম’ অক্ষয় করে রাখতে এগিয়ে এসেছেন ন্যায় বিচারের দাবিতে সোচ্চার আন্দোলনকারীরাই। বুধবার কলকাতায় রোটারি সদনে একটি গণকনভেনশন করে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম ‘অভয়া ডব্লিউবিডিএফ স্কলারশিপ’ চালু করেছে। এই বছর থেকেই প্রতি বছর ১০ জন করে গরিব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীকে এই স্কলারশিপ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। 
ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম (ডবলিউবিডিএফ)-এর ডাকে এদিন সন্ধ্যায় কলকাতার রোটারি সদনে কলকাতা পুলিশ আর নবান্নের বাধা উপেক্ষা করে ‘অভয়া’র নাম সংযুক্ত করেই গণকনভেনশন করা হয়েছে। মঞ্চের ওপরেই লেখা ছিল ‘ভয় হতে তব অভয়মাঝে’। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই কনভেনশনের জন্য ১৫ দিন আগে পুলিশকে জানানো হয়েছিল, যাবতীয় অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কনভেনশনের আগের দিন মঙ্গলবার বিকেলে লালবাজার থেকে ফোন করে পুলিশ প্রথমে বলে কনভেনশনে কোনও প্রতিবাদী বক্তব্য রাখা যাবে না, তারপরে বলে মঞ্চে অভয়ার নাম রাখা যাবে না, অভয়ার নামে কোনও স্কলারশিপ দেওয়া যাবে না। স্কলারশিপ দিলে অভয়ার নাম বাদ দিয়ে দিতে হবে। ডাক্তারদের পক্ষ থেকে আমরা জানিয়ে দিই যে স্কলারশিপ দেওয়া হবেই, তখন পুলিশ মৌখিকভাবে শর্ত দেয় কোনও বিক্ষোভ প্রদর্শন চলবে না, কনভেনশনের পুরোটা ভিডিও রেকর্ডিং করা হবে পুলিশের পক্ষ থেকে। ডাক্তাররা জবাবে বলেন, এটা পুলিশ লিখিতভাবে জানাক। ইতিমধ্যে রোটারি সদন থেকে ফোন করে জানানো হয়, নবান্ন থেকে ফোন করে তাদের ওপরে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে, অভয়ার নাম বাদ দেওয়ার জন্য। নইলে রোটারি সদনকে সরকারি অনুদান বন্ধের হুমকি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উদ্যোক্তা চিকিৎসকরা অনড় থাকেন, প্রয়োজনে রাস্তায় কনভেনশন করার কথা জানিয়ে তাঁরা বলে দেন, অভয়া নাম অনুষ্ঠান থেকে বাদ দেওয়া হবে না। এরপরে বুধবার জেদী গণকনভেনশন সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে অনুষ্ঠিত হয়েছে রোটারি সদনে।
গণকনভেনশনে অংশ নিয়ে চিকিৎসক সহ সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, অভয়ার জন্য ন্যায় বিচার ছিনিয়ে আনতে লড়াই জারি রাখতে হবে। অ্যাসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরসের নেতা ডাঃ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, সরকারি চিকিৎসকদের প্রতিবাদী স্বর থামানোর জন্য রাজ্য সরকার আদেশনামা জারি করেছে। আমরা জানি, এই স্বাস্থ্য সচিব আরও কালা আদেশনামা বের করবে। কিন্তু চিকিৎসকরা তাঁদের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন, স্বাস্থ্য সচিব কর্তব্য পালন করেননি, তিনিই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। তাই অবিলম্বে স্বাস্থ্য সচিবের অপসারণের দাবিকে আবার সামনে এনে আন্দোলন জোরদার করতে হবে।
এদিন গণকনভেনশনে আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চ্যাটার্জি, প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গাঙ্গুলি, চলচ্চিত্র পরিচালক কমলেশ্বর মুখার্জি, ডাঃ অর্জুন দাশগুপ্ত, ডাঃ শঙ্কর নাথ, সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী, অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র, ডাঃ ইন্দ্রজিৎ রায়, ডাঃ কৌশিক চাকি, ডাঃ কৌশিক লাহিড়ী সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি অংশ নেন। আর জি কর হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে থ্রেট কালচারে আক্রান্তদের পক্ষ থেকেও বক্তব্য রাখা হয়। 
ডব্লিউবিডিএফ’র পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, অভয়াকে মুছে দিতে দেবো না। তাঁকে অমলিন রাখতে আমরা সীমিত ক্ষমতা নিয়ে অভয়া ডব্লিউবিডিএফ স্কলারশিপ চালু করছি এই বছর থেকে। একমাত্র দারিদ্রের মধ্যে মেধার বিচারে প্রতিবছর আমরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবো। ৫ জন মেডিক্যাল ছাত্র-ছাত্রী এবং ৫ জন মাধ্যমিক পরবর্তী শিক্ষার্থীকে এই স্কলারশিপ দেওয়া হবে, এরজন্য একটা বাছাই কমিটি তৈরি করা হচ্ছে, তাতে চিকিৎসক এবং সমাজের কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিও থাকবেন। স্কলারশিপের সঙ্গে মেন্টরশিপও দেওয়া হবে যাতে তারা সমাজে মাথা উঁচু করে সত্য বলতে পারে, আগামী সমাজের সম্পদ হতে পারে।
কনভেনশনে প্রস্তাব গ্রহণ করে বলা হয়েছে, আর জি কর হাসপাতালে ধর্ষণ করে হত্যার ঘটনা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, থ্রেট কালচারের পরিণতি। এই ঘটনা গোটা রাজ্যের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে। রাজ্যজুড়ে মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণে গণআন্দোলন ঘটেছে এর প্রতিবাদে, সব অংশের মানুষ এই বর্বর ঘটনার বিরুদ্ধে এগিয়ে এসেছে। আন্দোলন শেষ হয়নি, আরও বৃহত্তম আন্দোলনের পথ খুলে দিয়েছে। চিকিৎসক সংগঠন ছাড়াও সব সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করে এই গণআন্দোলন তীব্র করে তুলতে হবে। কনভেনশন থেকে দাবি করা হচ্ছে, সিবিআই ব্যর্থ হয়েছে তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করতে, তারা সাধারণ মানুষের কাছে তদন্তের সব তথ্য প্রকাশ করুক। রাজ্য সরকার সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে তদন্তে নো অবজেকশন অবিলম্বে প্রদান করুক। সব অপরাধীদের তদন্তের আওতায় এনে সত্য প্রকাশ করতে হবে। থ্রেট কালচারের অবসান ঘটাতে নির্বাচিত স্টুডেন্টস ইউনিয়ন করতে হবে সব মেডিক্যাল কলেজে। 
অনুষ্ঠানে দ্রোহকালের সঙ্কলন নামে চিকিৎসকদের লেখা একটি বই বিশিষ্টদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। দ্রোহকাল নিয়ে একটি অডিও ভিস্যুয়াল উপস্থাপনাও করা হয়েছে। নাটিকাও উপস্থাপন করা হয়েছে প্রতিবাদী সমকাল নিয়ে। আইনজ্ঞ বক্তারা বলেছেন, অভয়া এবং জাস্টিস শব্দ উচ্চারণেও আপত্তি কেন শাসকদের? কলকাতা পুলিশের যোগসাজসে প্রমাণ লোপাট করা হয়েছে, ঘটনাস্থলকেও মিথ্যা দেখানো হয়েছে। এমন গণজাগরণ আগে কখনো দেখা যায়নি। শুধু আদালতে আইনি লড়াইতে ন্যায় আসবে না, রাস্তায় নেমে ন্যায় আদায় করতে হবে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আতঙ্ক কায়েম করে রাখা চলবে না, আরোগ্যের পথ সুগম করতে সরব হয়েছেন চিকিৎসকরা।

Comments :0

Login to leave a comment