সবার বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে জানিয়ে আদালত জানিয়েছে, পার্থ-মানেক-কালীঘাটের কাকু-সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
অবশেষে নিয়োগ দুর্নীতিতে ইডি’র মামলায় চার্জ গঠন প্রক্রিয়া শুরু হলো। দফায় দফায় আটকে যাওয়ার পরে সোমবার শেষমেশ পার্থ চ্যাটার্জি, কালীঘাটের কাকু, তৃণমূলী বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় চার্জ গঠন সম্পন্ন হলো।
যদিও নিয়োগ দুর্নীতিতে ইডি’র চার্জশিটে পার্থ চ্যাটার্জি, কালীঘাটের কাকু, অভিষেক ব্যানার্জির সংস্থা লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সহ পার্থ-কালীঘাটের কাকুর একাধিক সংস্থা, রিয়েল এস্টেট সংস্থা মিলিয়ে মোট ৫৪ জন অভিযুক্ত রয়েছে। ২২টি সংস্থা সহ ৫৪ জনের বিরুদ্ধে পাঁচ দফায় চার্জশিট দিয়েছিল ইডি। বাকী অভিযুক্ত সংস্থার প্রতিনিধি ও ব্যক্তিদের আগামীকালই আদালতে সশরীরে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। মনে করা হচ্ছে চলতি সপ্তাহের মধ্যে চার্জ গঠন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে, তারপরেই শুরু হবে নিয়োগ দুর্নীতির মামলার বিচারপর্ব। যদিও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল গত ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে চার্জ গঠন করার। কিন্তু অভিষেক ব্যানার্জির সংস্থার একদা ডিরেক্টর কালীঘাটে কাকুর একের পর এক নাটকীয় ঘটনার জেরে তা দফায় দফায় পিছিয়ে যায়।
সোমবার বিচারভবনে সেই সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকু দিয়েই শুর হয় চার্জ গঠন। বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়োগকাণ্ডে ইডি-র পরে ফের সিবিআই-র হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেল হেপাজতে থাকা কালীঘাটের কাকু ভার্চুয়ালি শুনানিতে হাজিরা দেন এদিন।
বিচার ভবনের বিচারক জানান, যা তথ্য রয়েছে, তাতে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে চার্জগঠন সম্ভব। রাজ্যের বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য, প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় যেমন প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত, তেমন আপনিও। বেআইনি ভাবে চাকরি পাইয়ে দেওয়ায় আপনি কুন্তলদের সঙ্গেই অভিযুক্ত। আপনি লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার কর্মকর্তা ছিলেন। মানি লন্ডারিংয়ের ধারাতেও চার্জ গঠন হচ্ছে। কুন্তল ঘোষের সঙ্গেই টাকার বিনিয়ে অযোগ্যদের চাকরি পাইয়ে দেওয়া, তালিকায় নাম দেওয়ার ঘটনায় আপনি যুক্ত। যথেষ্ঠ তথ্য প্রমাণ আছে। দুর্নীতির টাকায় কালীঘাটের কাকুর সম্পত্তির হিসাবও দেয় ইডি। বিচারক প্রথা মেনেই জিজ্ঞাসা করেন আপনি নিজেকে দোষী মনে করেন না নির্দোষ? কালীঘাটের কাকু জানান তিনি নির্দোষ! বিচারক জানান আপনার বিরুদ্ধে প্রতিটি অভিযোগের যথেষ্ঠ তথ্য প্রমাণ রয়েছে। উল্লেখ্য, সুজয় ভদ্র ‘সেই সময় অভিষেক ব্যানার্জির আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি দেখভাল করতেন। সেই সময় অভিষেক ব্যানার্জি যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। সুজয় ভদ্র তৎকালীন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের অফিসেও নিয়মতি যাতায়াত করতেন। মূলত অভিষেক ব্যানার্জির হয়ে বার্তা মানিক ভট্টাচার্যের কাছে পৌঁছ দিতেই তিনি যেতেন ’।
এরপরে একই ভাবে পার্থ চ্যাটার্জির বিরুদ্ধে মন্ত্রী হিসাবে প্রভাব খাটিয়ে টাকা তোলা, অযোগ্যদের চাকরি দেওয়ার সুপারিশ করা, বিপুল পরিমাণ টাকা নয়ছয় করা, একাধিক ভুয়ো কোম্পানি তৈরি করে টাকা পাচার, অর্পিতা মুখার্জির বাড়িতে তাঁরই ৪৯ কোটি ৮০ লক্ষ নগদ টাকা গচ্ছিত রাখা সহ একের পর এক অভিযোগ জানানো হয়। বিচারক একইভাবে তাঁকেও জিজ্ঞাসা করেন যে আপনি নিজেকে কী দোষী মনে করেন? পার্থ চ্যাটার্জি জানান তিনি নির্দোষ,সব ষড়যন্ত্র, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। যদিও বিচারক বলেন তদন্তে আপনার বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগের বিপুল নথি, তথ্য প্রমাণ রয়েছে। আপনার বিরুদ্ধেও চার্জ গঠন হচ্ছে।
এরপরেই একইভাবে চার্জ গঠন করার সময় বিচারকের সঙ্গে বচসা বাধে মানিক ভট্টাচার্যের। মানিক ভট্টাচার্য গোটা দুর্নীতির অন্যতম মাথা, ইডি’র চার্জশিটেও এই তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে পাশ করিয়ে দেওয়া, ওএমআর শিট কারচুপি, একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, বিদেশে টাকা পাচার, স্ত্রী ও পুত্রের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা পাচার, পুত্রের নাম ভুয়ো সংস্থায় টাকা পাচার সহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ। বিচারক তা জানানোর সময়তেই পালটা সব অস্বীকার করে মানিক ভট্টাচার্য বলতে মামলা থেকে অব্যহতির যে আবেদন করা হয়েছিল, তার অর্ডার এখনও মেলে। তা না হলে চার্জগঠন কী করে হবে।এরপরে বিচারক ছয়বার একই প্রশ্ন করেন যে আপনি নির্দোষ কী মনে করেন নিজেকে? তখন চিৎকার করে মানিক ভট্টাচার্য বলেন- আদলত তথ্য প্রমাণ ছাড়া কী করে চার্জ ফ্রেম করতে পারেন। এরপরেই ক্ষুব্ধ বিচারক ধমক দেন এই তৃণমূলী বিধায়ককে। এসব কথার অর্থ আদালত অবমাননা করা। আপনি যা প্রশ্ন করছি তার উত্তর দিন। তারপরেও মানিক ভট্টাচার্য কথা বলতে বিচার বলেন- আপনি যা করছেন তাতে আমাকে ক্ষমতা প্রয়োগ করেই এজলাস থেকে বের করে দিতে হবে। তখন থেমে যায় এই তৃণমূলী বিধায়ক।
একই ভাবে এরপর নিয়োগকাণ্ডে ধৃত তৃণমূলের জেলা পরিষদের তৎকালীন কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু ব্যানার্জি, বেহালার তৃণমূল ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ি সন্তু গঙ্গোপাধ্যায়, তৃণমূল ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার অয়ন শীলের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের তালিকা পাঠানো, বিপুল পরিমাণ টাকার লেনদেন, ওএমআর শিট জালিয়ারি, নিয়োগের একাধিক দুর্নীতির একের পর এক অভিযোগ আনা হয়। বিচারক স্পষ্ট জানান, প্রতিটি অভিযোগের যা তথ্য প্রমাণ আছে তাতে সকলের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় চার্জগঠন সম্ভব। মোট ছয় জনের বিরুদ্ধে অবশেষে এদিন চার্জ গঠন হয়
Comments :0