Editorial

অবহেলিত সামাজিক ক্ষেত্র

সম্পাদকীয় বিভাগ

মোদীর ভাষ্যে যখন দেশে উন্নয়ন ও বিকাশের জোয়ার বইছে তখন মানব উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয় মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) নিরিখে গত তিন দশকে পড়ে আছে একই জায়গায়। সামগ্রিকভাবে সামাজিক খাতে জি‍‌ডিপি’র অংশ হিসাবে ব্যয় কিঞ্চিৎ বাড়লেও কমে গেছে শিক্ষা খাতে। ১৯৯০-৯১ সালে সামাজিক খাতে সরকার খরচ করত মোট জিডিপি’র ৫.৮ শতাংশ। এখন ২০১৯-২০ সালে খরচ হচ্ছে ৬.৮ শতাংশ। এই তিন দশকে জিডিপি’র পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে গেলে সামাজিক খাতে সরকারি খরচ বেড়েছে মাত্র এক শতাংশ। সামাজিক খাতে ব্যয় মূলত সাধারণ মানুষের জন্য। শাসকরা ভারতকে জনকল্যাণমুখী দেশ বলে দাবি করলেও জনগণের জন্য ব্যয় কিন্তু বাড়েনি।
২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে উন্নত অর্থনীতির দেশে পরিণত করার স্বপ্ন দেশে বিস্তর প্রচার চলছে। অথচ উন্নত হবার প্রাথমিক শর্ত যে জনকল্যাণ সেটাই সবচেয়ে উপেক্ষিত এবং অবহেলিত। উন্নত ও বিকশিত অর্থনীতির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য জিডিপি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে যেমন সরকারি ব্যয় বরাদ্দ বাড়ে তেমনি সরকারি ব্যয়ে শিক্ষা-স্বাস্থ্য সহ সামাজিক ক্ষেত্রেও বরাদ্দ বাড়ে। যে দেশে শিক্ষা ব্যবস্থা আধুনিক ও সকলের জন্য নয়, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যদি আধুনিক নয় সে দেশ কোনোদিন উন্নত হতে পারে না। একটা দেশ তার বৃহত্তর জনসংখ্যাকে পেছনে ফেলে ক্ষুদ্রতর অংশকে নিয়ে উন্নত হয় না। জিডিপি বেশি হতে পারে, মাথাপিছু জিডিপি-ও বেশি হতে পারে কিন্তু তার সুবিধা যদি আমজনতার কাছে না পৌঁছায় তাহলে তাকে উন্নত বলা যায় না। মোদীরা যে ফাইভ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি, উন্নত অর্থনীতির কথা বলছেন সেটা আসলে অল্প সংখ্যক মানুষের অতি ধনী ও সম্পদশালী হওয়া। এরাই উন্নত ও আধুনিক শিক্ষা-স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সুবিধা ভোগ করবে, উন্নত যোগাযোগের সুযোগ পাবে। আর আমজনতা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই থেকে যাবে।
ভারতের বুকে পুঁজিবাদী বিকাশ যে পথে চলছে তাতে মানবিক উন্নয়নের জায়গা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। মানবোন্নয়নে সরকারের ভূমিকাও ক্ষীণ হচ্ছে। ফলে সরকারের কর্মপরিসর আড়ে বহরে ছোট হয়ে কর্পোরেট আধিপত্য বাড়ছে। সামাজিক খাতে ব্যয় বাড়িয়ে মানবোন্নয়ন জোরদার করতে হলে সরকারের সামগ্রিক ব্যয় অনেক বাড়াতে হবে। তার দরকার রাজস্ব বৃদ্ধি বা সরকারের আয় বৃদ্ধি। তাতে বড়লোকদের উপর করের বোঝা বাড়বে। কিন্তু ভারতে পুঁজিবাদের ধারক বাহকরা সেটা কোনও অবস্থাতেই হতে দিতে রাজি নয়। তাই তিন দশক ধরে সরকারের আয় ও ব্যয় মোট জিডিপি’র সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাড়েনি। তেমনি বাড়েনি সামাজিক খাতে ব্যয়ও।
 

Comments :0

Login to leave a comment