BOOK REVIEW | SUBINOY MISHRA | BANGLA SHISHUSAHITYA | NATUNPATA | 2025 APRIL 9

বইকথা | সুবিনয় মিশ্র | শিশু-কিশোর সাহিত্য চর্চার অসামান্য দলিল | নতুনপাতা | ২০২৫ এপ্রিল ৯

ছোটদের বিভাগ

BOOK REVIEW  SUBINOY MISHRA  BANGLA SHISHUSAHITYA  NATUNPATA  2025 APRIL 9

বইকথা | নতুনপাতা

শিশু-কিশোর সাহিত্য চর্চার  অসামান্য দলিল
সুবিনয় মিশ্র

মাঝে মাঝে এমন কিছু বই প্রকাশিত হয় যা দেখলে  অন্তত একবার হাতে নিয়ে নেড়চেড়ে দেখতে ইচ্ছে করে—সম্প্রতি প্রকাশিত  বাংলা শিশুসাহিত্য গ্রন্থপঞ্জি তেমন একটি বই।   শিশুকিশোর সাহিত্যের এক বিশাল  জগতকে  যেন নিখুঁত ভাবে বেঁধে রাখা হয়েছে অপরূপ বিন্যাসে। এ বই শৈশবকে হারিয়ে না যেতে দেওয়ার বই অথবা হারিয়ে যেতে বসা শৈশবকে খুঁজে দেওয়ারও বই। @একথা কজনারই বা জানা আছে, বিগত কয়েক বছরে  নেই নেই করেও   শিশুসাহিত্য প্রকাশিত হয়েছে কয়েক হাজার।   জ্ঞান-বিজ্ঞানের  কোনও শাখাতেই এখন বাংলাভাষায়  শিশু কিশোরের  উপযোগী গ্রন্থ  আর একেবারে  দুর্লভ নয়। তবে পুরাকাল থেকে ভাষা নিয়ে  কাজ বেশি এগোয়নি। যা হয়েছে বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে¬ —সম্প্রতি প্রকাশিত  ‘বাংলা শিশুসাহিত্য গ্রন্থপঞ্জি’ থেকেই পাওয়া যাচ্ছে এমন অবাক করা সব খবর!@                 শৈশব কৈশোরের শিক্ষা  যে  সুযোগ পেলেই কোন এক শিশুকিশোরকে কল্পনা আর রোমাঞ্চের জগতে পৌঁছে দেয় একথা মিথ্যে নয়। কিন্তু কেবল শিশুকিশোরকেই শুধু পৌঁছে দেয় না, প্রাপ্তমনষ্ক মানুষকেও পৌঁছে দেয়। ভবিষ্যৎ সমাজের ভিতও তৈরি হয় সেই ছেলেবেলার শিক্ষা থেকে,শিশুসাহিত্যই  যার অন্যতম ভিত্তি। যে কোনও দেশে যেকোনও  সমাজে ছোটদের জীবন গড়ে তোলার কারিগর হিসেবে শিশু-কিশোর সাহিত্যিকদের অবদান তাই অনেকখানি। তাঁরাই শিশুদের মনের দুয়ার খুলে দেন এক নিমেষে। বাংলা শিশুসাহিত্য গ্রন্থপঞ্জিটি একটু নাড়া চাড়া করলেই একথা অনুভূত হবে যে কোন আগ্রহী পাঠকের। এই গ্রন্থের সংকলকদ্বয়েরও মনে হয়েছে  ‘যদি কোন পড়ুয়া শিক্ষকের হাতে এ বই পড়ে, পাতা উল্টাতে উল্টাতে তিনি খুঁজে পেতে পারেন তাঁর শৈশব বা কৈশোরের কোনও এক বই পড়ার অবিস্মরণীয় স্মৃতিকে।’ সেই রোমাঞ্চে রোমাঞ্চিত করে দিতে পারেন আজকের নতুন প্রজন্মকে,      সেদিনের সেই গল্পটিকে নতুন করে শুনিয়ে।     @কিন্তু কারা লিখলেন এত সব সাহিত্য? কারাই বা এসব গ্রন্থের প্রকাশক?  এখন আর একথার জবাব পেতে খুব বেশি ছোটাছুটি করার দরকার নেই, হাতের কাছে রাখা  বাংলা  শিশুসাহিত্য   গ্রন্থপঞ্জিটি একবার খুলে দেখে নিলেই হলো। @এ এক বিশিষ্ট আকরগ্রন্থ। বাংলা শিশু-কিশোর সাহিত্যের এক অপূর্ব গ্রন্থপঞ্জি।  বিগত প্রায় দুশো  বছরে শিশুসাহিত্যের ইতিহাসে বাঙালির যে অর্জন গৌরবে ও বিস্তারে সামান্য নয়। এমনিতে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে অনেকের, কিন্তু বইটি হাতে তুলে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখলেই যে কেউ বুঝে নিতে পারবেন যে কি অমানুষিক পরিশ্রম আর সংকল্পে নির্মিত হয়েছে এই গ্রন্থপঞ্জি। অর্চনা শ্রীমানি আর কল্যাণী প্রামানিক এই বইয়ের সংকলক। দুজনেই গ্রন্থাগার জগতের মানুষ। বিভিন্ন গ্রন্থাগার ঘুরে ঘুরে প্রতিটি বই হাতে নিয়ে দেখে ৭ হাজারেরও বেশি বই তালিকাবদ্ধ করেছেন চৌদ্দ বছরের প্রয়াসে। তবে এই ধরণের কাজ তাঁরাই প্রথম করে দেখালেন তা নয়, তারও আগে ১৮১৮— ১৯৬২ সালের মধ্যে প্রকাশিত দেড়শ বছরেরর বাংলা শিশু-কিশোর সাহিতের এক রূপরেখা তুলে ধরে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছিলেন বাণী বসু। পরে বংলাদেশের সামসুল হক এবং  আরো পরে পশ্চিমবঙ্গ গ্রন্থাগার দপ্তরও এই ধরণের পঞ্জি সংকলনের আয়োজন করে। @  প্রকৃতপক্ষে শিশুসাহিত্যের পথ চলা শুরু হয়েছিল যোগীন্দ্রনাথ সরকারের ‘হাসিখুশি’র হাত ধরে, রবীন্দ্রোত্তর যুগে যা মহীরুহের আকার ধারণ করে। ‘‘সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা সহ, সাধারণ জ্ঞান ধর্ম, সমাজবিজ্ঞান, প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনী, খেলাধূলা, অনুবাদ সাহিত্য, বিজ্ঞান, কল্পবিজ্ঞান, ইতিহাসনির্ভর কাহিনী, জীবনী, শিকার অভিযান, রহস্য ও রোমাঞ্চকর গোয়েন্দা কাহিনী প্রভৃতি বিষয়ের উপস্থাপনার এক নতুনত্বের আস্বাদ পাওয়া যায়।’’     @এখন যদি কেউ প্রশ্ন তোলেন শিশুদের জন্য সবচেয়ে বেশি লেখা প্রকাশিত হয়েছে কোন বিষয়ে, অথবা  স্বপন বুড়ো কার ছদ্ম নাম  কিংবা   হঠাৎ যদি কোন শিশুকিশোরের আসরে বা স্কুলের কোন এক বিশেষ পিরিয়ডে  এই প্রশ্ন উঠে আসে বড়দের উদ্দেশে, ‘শিশু ভোলানাথ’ কার লেখা— তখন সকলের কাছে না হলেও কারও কারও কাছে  ওই প্রশ্নই তৈরি করে দিতে পারে নানা অপ্রস্তুত মুহূর্ত। তখন  কে বলে দেবে তার উত্তর? সেই প্রশ্নেরই নির্ভরযোগ্য জবাব রয়েছে সম্প্রতি তিল তিল করে  গড়ে তোলা    বাংলা শিশুসাহিত্যের এই  তালিকায়।  @কিন্তু আজকের সমাজ আবার  শিশুকিশোরকেও পণ্য হিসাবে দেখতে চায়। পড়তে হবে, গাইতে হবে, আঁকতে হবে, নাচতে হবে —এত কিছুর পর কল্পনা আর রোমাঞ্চের জগতে পৌঁছে যাওয়ার আনন্দ পাখির মতো, ডানা মেলে সুদূরে উড়ে যাওয়ার আনন্দ বলে কিছু   তখন এদের থাকে না আর। পরে  শেষ চাপটা ঘাড়ে এসে পড়ে বাবা-মায়ের দিক থেকেও।@রূপকথার কল্পজগত আর ছেলেভুলানো ছড়ার অপার আনন্দ হারিয়ে যায় তাদের মন থেকে। ফলে রূপকথার বই ছেড়ে  কার্টুন বা স্মার্ট গেমগুলিই  হয়ে উঠে তাদের বিনোদনের উপকরণ।  ছোটদের হাতে বই তুলে দেবার কথা কতজন বাবা মা আর ভাবছে আজ। এই রকম একটা পরিবেশে  ছোটবেলা থেকে বই পড়াকে উৎসাহ দিয়ে  গ্রন্থাগারমুখি করে তোলার উদ্যোগকে নতুন করে জাগিয়ে তোলারও যেন আহ্বান জানাচ্ছে এই পঞ্জি। এই আহ্বান প্রধানত গ্রন্থাগারিকের কাছে, অভিভাবকের কাছে।@ছোটদের   জীবনপথে চলার রসদ হিসেবে  প্রতিটি গ্রন্থাগারে থাকুক এই বই। যে সব ছোটরা ভূতের বই পড়ে তারা কল্পবিজ্ঞানের গল্প পড়তেও ভালোবাসে। ভালোবাসে জঙ্গলের কাহিনী। জানতে চায় বিখ্যাত মানুষের জীবনী। গ্রন্থাগারে সেই সব বই নির্বাচনের জন্যেও এই গ্রন্থপঞ্জির গুরুত্ব কম নয়। তাছাড়া  গ্রন্থাগারিকরা   ছোটদের উপর ভরসা রেখে   যদি  একবার দেখিয়ে দেন  কীভাবে   ব্যবহার করা যেতে পারে  এই বই,  তাহলে নবীন কচি মনও একদিন  ‘এলেম নতুন দেশে’ বলে আত্মহারা হয়ে উঠতে পারে   নিজের খেয়ালে।@এমন একটি আকরগ্রন্থ তৈরি করে দিয়ে গেলেন যে দুজন বিশিষ্ট গ্রন্থাগারিক, বাংলাভাষী বিপুল সংখ্যক পাঠক তাঁদের কথা মনে রাখবেন বহুদিন। সৌরভ বেরার প্রচ্ছদটিও বেশ মনোগ্রাহী।  

 @বাংলা শিশুসাহিত্য গ্রন্থপঞ্জি (১৯৯১—২০০২)@অর্চনা শ্রীমাণী ও কল্যাণী প্রামানিক। বিদ্যানগর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা : জেলা গ্রন্থাগার, ২০১৭। ৯৫০ টাকা

{ad}

Comments :0

Login to leave a comment