শারদীয়া ১৪৩১
গল্প
নতুনপাতা
বিজয়া
সৌরীশ মিশ্র
বিজয়া দশমীর পরের দিনের সন্ধ্যে।
নিজের ঘরে তাঁর ইজিচেয়ারে শরীর এলিয়ে এ'বছরের 'গণশক্তি'-র শারদ সংখ্যাটা পড়ছিলেন সত্যেনবাবু একমনে।
হঠাৎ তাঁর দুই পায়ে নরম হাতের স্পর্শ পেতেই তাই একপ্রকার চমকেই উঠলেন এবং সোজা হয়ে বসলেন চেয়ারে।
আর, বসতেই দেখলেন, তাঁর দশ বছরের নাতনি তিন্নি প্রণাম করছে তাঁকে।
"দিদিভাই, প্রণাম করছো কেন?"
প্রণাম করে ততক্ষণে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে তিন্নি তার ঠাকুরদার সামনে।
"দাদু, এইমাত্র ফোন করেছিল বাবা। আমাদের পাড়ার ঠাকুরের বিসর্জন নাকি হয়ে গেছে। আর, ঠাকুর বিসর্জন হয়ে গেলেই বড়দের সবাইকে বিজয়ার প্রণাম করতে হয় না!"
সত্যেনবাবু আগেই বুঝতে পেরেছিলেন কেন প্রণাম করছে তাঁকে তাঁর নাতনি। তবু জিজ্ঞাসা করেছিলেন নাতনিকে, নাতনি কি বলে তা দেখার জন্য। আর, উত্তরে নাতনি যা বলল, তা শুনে মনটা যেন ভরে গেল তাঁর।
নাতনিকে নিজের কাছে টেনে নেন সত্যেনবাবু। মাথায় হাত রেখে নাতনিকে আশীর্বাদ করেন প্রাণ ভরে। তারপর বলেন, "দিদিভাই, মা-কে প্রণাম করেছো? ঠাম্মিকে?"
"মা তো বাথরুমে। বেরোক। তারপর করবো। ঠাম্মিকে করেছি। রান্নাঘরে ছিল। ওখানেই করলাম।"
"বাঃ। ভেরি গুড গার্ল। তা, তোমাকে ঠাম্মি বিজয়ার মিষ্টি খাইয়েছে তো?"
"না। এখনও খাওয়াইনি। তবে বলল, তোমার ঘরে থাকতে। মনে হচ্ছে, এখানেই এনে দেবে।"
আরো কি সব বলতে চাইছিল তিন্নি, কিন্তু পারলোনা। কারণ, তখুনি ঐ ঘরে ঢুকলেন তিন্নির ঠাকুমা শান্তিদেবী। তাঁর এক হাতে একটি কাঁচের ডিশে মিষ্টি আর অন্য হাতে একটি কাঁচের গ্লাসে জল।
"দেখেছো, আমাদের নাতনি কেমন ইন্টেলিজেন্ট হয়েছে। আমি কিন্তু শুধুই একটা হিন্ট দিয়েছিলাম। ও কিন্তু ধরেছে ঠিক।" স্বামীকে বললেন শান্তিদেবী। তারপর নাতনির দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, "যাও তো দিদিভাই, চট্ করে হাতটা ধুয়ে আসো। তারপর এগুলো খাও।"
হাতে ধরা ডিশটা আর গ্লাসটা টেবিলে রাখেন শান্তিদেবী।
"নারকেল নাড়ু! আবার, আমার ফেভারিট মিষ্টি দরবেশ, শোনপাপড়ি, চমচম-ও!" মুখটা সাথে সাথেই উজ্জ্বল হয়ে ওঠে ছোট্ট তিন্নির।
আর, নাতনিকে এতো খুশি দেখে সত্যেনবাবু ও শান্তিদেবী-ও খুশি কম হন না।
Comments :0