Santosh Trophy

সন্তোষ জয়ী বাংলা দলের সদস্য সুপ্রিয়র সাফল্যে গর্বিত বাবা-মা

খেলা

বাবা মায়ের সাথে সন্তোষ ট্রফি জয়ী বাংলা দলের সদস্য সুপ্রিয় পন্ডিত।

অভীক ঘোষ 
বাবা ছিলেন একজন ভাগ চাষী। ছেলেকে বুট কিনে দিতে পারেননি। অন্যের জমিতে চাষ করে যা উপার্জন হতো তা দিয়েই চলত তাঁদের সংসার। ছেলে ফুটবল খেলে বড় নাম করবে, সেটা ছিল তাঁদের কাছে স্বপ্নের অতীত। সন্তোষ ট্রফি জয়ী দলের সদস্য সুপ্রিয় পন্ডিতের সাফল্যে চোখে জল পরিবারের। সেই দল বাংলার মাটিতে পা রাখতেই বিভিন্ন মহল থেকে সম্বর্ধনায় দেওয়া হয়েছে খেলোয়াড়দের। বাংলা দলকে যারা জিতিয়েছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলো হুগলির নালিকুলের বন্দিপুর গ্রামের বছর ২৮ এর যুবক সুপ্রিয় পন্ডিত। গ্রামের সবাই তাঁকে বাবাই নামেই চেনে। এখন হুগলির গৌরব বাংলার এই তরুণ ফুটবলার। তবে সুপ্রিয়'র এই চলার পথ মোটেই মসৃণ ছিল না। বরং উঁচু-নিচু "বন্ধুর" পথ পেরিয়ে লক্ষ্যে অবিচল থেকেছে সে। রেনবো, ভবানীপুর, পিয়ারলেস দলে তিন বছর ধরে খেলেছে। বর্তমানে ডায়মন্ড হারবার ফুটবল দলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সুপ্রিয়।
ছোটবেলায় ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান দলের খেলা দেখতে ভালোবাসতো। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় তাঁর ফুটবলের প্রতি "ভালোবাসা" জন্মায়।  সময় পেলেই মাঠে গিয়ে ফুটবল নিয়ে প্র্যাকটিস করত এই তরুণ ফুটবলার। তবে তাঁর এই খেলা প্রতি ঝোঁক মোটেও ভালোভাবে নিতো না তাঁর পরিবার। দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে ইতি টানতে হয়েছিল তাঁকে। তাঁর বাবা কাশীনাথ ও মা কৃষ্ণা পণ্ডিত ছেলেকে ফুটবল খেলতে দেখলেই বকাবকি করতো। অর্থের অভাবে ছেলের জন্য সামান্য বুট কিনে দিতে পারেনি তাঁর বাবা। যদিও ছোট থেকে সুপ্রিয় ছিল জেদি। বাবা মায়ের বকাবকি সত্ত্বেও চালিয়ে গিয়েছে খেলা। বিভিন্ন জায়গায় খেলে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে একাধিক পুরস্কার। প্রথম প্রথম তাঁর মা ছেলের খেলাধুলা মেনে নিতে না পারলেও পরবর্তীতে ছেলেকে উৎসাহ দিত। ছেলে খেলতে গিয়ে কোথাও চোট আঘাত লাগতো তাঁর মনে। আর তা দেখেই মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠতো ছেলের। এখন ছেলের খেলা দেখতে মিস করেন না বাবা মা। ছেলের খেলা আছে জানলেই কাজকর্ম সেরে বসে পরে টিভির সামনে। আজ তাঁদের সেই ছেলে লক্ষ্যে অবিচল থেকে এগিয়ে গিয়েছে একের পর এক সুনামের শিখরে। কোচ সুবিমল সিনহার হাত ধরে প্রথমে মানকুন্ডু ও বর্তমানে বৈদ্যবাটি কৃষ্টিচক্রের মাঠে প্র্যাকটিস করে বাবাই।

সুপ্রিয় জানায়, "ছোট থেকেই কষ্ট করে বাবা আমাকে মানুষ করেছে। যখন যা চেয়েছি তাই পেয়েছি। এবারে সন্তোষ ট্রফি খুব কঠিন টিম ছিল আমাদের গ্রুপে। সেখানে কাশ্মীর, রাজস্থান, তেলেঙ্গানার মত কঠিন দল অংশগ্রহণ করেছিল খেলায়। সেমিফাইনালেও লড়াই ছিল কঠিন। প্রতিপক্ষ যতই শক্ত হোক না কেন আমরাও ছাড়ার পাত্র ছিলাম না। ১০০ শতাংশ দিয়ে লড়াই চালিয়ে গেছি। কিন্তু গোল করতে পারিনি এটা আমার কাছে একটা আক্ষেপ।"
ছেলের সাফল্যে চোখে জল মায়ের। কৃষ্ণা পণ্ডিত জানায়, "অনেক কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করেছি। মেরেছি, বকেছি তবু খেলা ছাড়েনি। বাবার ইচ্ছা ছিল না, খেলাধুলা করে কিছু হবে না। এখন ছেলে অনেক ভালো জায়গায় গেছে আর সেটা দেখেই আমার খুব আনন্দ হচ্ছে। এখন চাই ছেলে অনেক বড় হোক।"
সুপ্রিয় বাবা কাশীনাথ পন্ডিত ছেলের সাফল্যে তিনিও চোখে জল ধরে রাখতে পারলেন না। তিনি বলেন, "আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল, সংসার চালাতে পারতাম না। ছেলের জন্য একটা বুট কেনার পয়সা ছিল না। বই কেনার পয়সা ও ছিল না। অন্যের জমি চাষ করতাম। অনেক বকাবকি ও করেছি। আজ ছেলের অনেক বড় হয়েছে, এখন বুঝতে পারছি তখন কেন বকতাম।"


 

Comments :0

Login to leave a comment