গল্প
ভুলো
সৌরীশ মিশ্র
নতুনপাতা
"ভুলোটা কেমন শুয়ে আছে, দ্যাখো মা, কুঁকড়ে-মুকড়ে!" পাড়ার কুকুর ভুলোকে ওদের বাড়ি-লাগোয়া লম্বা রকটায় কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে থাকতে দেখে কথাটা ওর মাকে বলল রাই।
এখন সন্ধ্যেবেলা। রাই আর ওর মা গিয়েছিল মেলায়। প্রতি ডিসেম্বরেই ওদের বাড়ির কাছেই একটা বিশাল মেলা বসে। মেলা ঘুরে, ফিরল বাড়ি এখন ওরা।
"ঠান্ডা লাগছে তো ওর। ওর'ম করে শুয়ে আছে তাই।" বলেন রাই-এর মা।
মা-মেয়ের মধ্যে এই কথাবার্তা যখন চলছে, ভুলো ওর মুখটা একটু তুলে তাকায় রাই-এর দিকে। দু'বার একটুখানি লেজও নাড়ে।
রাই-কে ভালই চেনে ভুলো। দু'বেলা যে রাই ভাত খেতে দেয় ভুলোকে। আর, মাঝেমধ্যে তো বিস্কুট আছেই।
ছোট্ট রাই এগিয়ে যায় পায়ে-পায়ে ভুলোর দিকে। ভুলোর মাথায় হাত বোলায় একটু। তারপর কি ভেবে যেন হাত রাখে কংক্রিটের রকটার উপর। আর সাথে সাথেই বলে ওঠে, " বা-বা, রকটা কি ঠান্ডা, মা!"
"তাতো হবেই। কি ঠান্ডা পড়েছে না!" বলেন রাই-এর মা।
"মা, এই রকটায় যদি একটা কিছু পেতে দিই, তাহলে ভাল হয় না? ভুলোটা ওটার উপরেই শোবে। ওর আর এতো ঠান্ডাও লাগবে না।"
"ভালোই বলেছিস। ঠিক আছে, তুই এখানেই দাঁড়া। আমি বাড়ি থেকে কিছু একটা নিয়ে আসি।" কথাটা বলেই সদর দরজা খুলে দ্রুত পায়ে বাড়ির ভিতরে চলে যান রাই-এর মা।
এরপর মিনিট পাঁচেকও কাটেনি তখনো। রাই-এর মা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলেন। হাতে দুটো পুরোনো চাদর।
"নে, চাদরটা ক'টা ফোল্ড করে পেতে দে রকটায়।" মেয়েকে বলেন রাই-এর মা, একটা চাদর দিয়ে।
মা যা বলল তাই করল রাই। কয়েকটা ভাঁজ করে চাদরটা পুরু করে রকে পেতে দিল সেটাকে ভুলোর পাশটাতেই। তারপর ভুলোর দিকে তাকিয়ে বলল, "অ্যাই ভুলো, এটায় এসে শো। এটা তোর বিছানা।"
রাই-এর মা এদিকে তখন ভাবছেন, কি ভাবে ভুলোকে পাতা চাদরটার উপরে বসানো যায়। তবে ভাবতে হোলো না বেশিক্ষণ ওনাকে। কারণ, এর কয়েকক্ষণের মধ্যেই যা হল তাতে ঐ সমস্যার সমাধানও হয়ে গেল, অথচ তাঁকে বা তাঁর মেয়েকে কিছুই করতে হোলো না।
রাই যখন চাদরটা পাতছিল তখন তো পিট-পিট করে তাকিয়ে-তাকিয়ে দেখছিল সব ভুলো। রাই-এর চাদর পাতা হয়ে যেতে কয়েক সেকেন্ড বসে-বসেই চাদরটা দেখল সে। নাকটা বাড়িয়ে কয়েকবার গন্ধও শুঁকলো চাদরটার। তারপরই উঠে পড়ে গা ঝাড়া দিল সে একটা। আর, তারপর সোজা গিয়ে বসল পাতা চাদরটার উপর ফের কুন্ডলী পাকিয়ে!
"আমার কেমন কথা শোনে দেখেছো মা ভুলো?" মা-কে বলল রাই।
"তাই তো দেখছি রে। নে এবার এই ছোটো চাদরটা। এটা ওর গায়ে চাপা দিয়ে দে। এতে আরো অনেকটাই আরাম পাবে ও।" রাই-এর মা-র হাতে যে আরেকটি চাদর ছিল সেটা মেয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলেন উনি।
মায়ের কাছ থেকে চাদরটা নিয়ে ভুলোর শরীরটা ঢেকে দিল সুন্দর করে রাই। মাথাটাই শুধু এখন বেড়িয়ে রইল ভুলোর।
"হয়ে গেছে। চল্ এবার ঘরে। ওকে ঘুমোতে দে।" মেয়েকে বললেন রাই-এর মা।
রাই আরো একবার ভুলোর মাথায় হাত বোলায়। এতক্ষণ আধবোজা চোখে তাকিয়ে সব দেখছিল ভুলো। এবার সে তার চোখ দুটো পুরো বুজিয়েই ফেলল। বেশ আরাম লাগছে যে এখন তার।
Comments :0